ভোলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম: এশিয়া কাপে আজ আফগানিস্তানকে ৩ রানে নাটকীয়ভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হেরে গেলে এশিয়া কাপ থেকে এক রকম ছিটকে যেতে হতো। এমন ম্যাচে শেষ ওভারে মাত্র ৮ রান লাগল আফগানদের। মোস্তাফিজের করা সেই ওভারে আফগানিস্তান নিতে পেরেছে মাত্র ৪ রান। এই জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার আশা এখন দেখতেই পারে বাংলাদেশ। ২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা হয়ে উঠল অলিখিত সেমিফাইনাল। বাংলাদেশের এই জয়ে ভারতেরও ফাইনাল খেলা নিশ্চিত হয়েছে।
আবুধাবিতে উত্থান-পতনের নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচের শেষটা হলো একেবারেই স্বার্থক। ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ যে শেষ পর্যন্ত ২৫০ রানের লক্ষ্য দিতে পারবে, কেইবা ভেবেছিল? আর জবাব দিতে নেমে শুরু থেকে মেপে মেপে পথচলা আফগানরা শেষে এসে হিসাব গরমিল করে ফেলবে, সেটা ভাবাও ছিল কঠিন। বাংলাদেশের ৭ উইকেটে তোলা ২৪৯ রানের জবাবে আফগানদের থামতে হলো ৭ উইকেটে ২৪৬ রানে। টানা দুই ম্যাচে শেষ ওভারে হেরে আফগানদের এশিয়া কাপ থেকে কান্নাভেজা বিদায় নিতে হলো। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতলেও আর লাভ হবে না। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের জয়ী দল যাবে ফাইনালে।
৬ বলে ৮, ২ বলে ৫, ১ বলে ৪—স্নায়ুর চরম পরীক্ষা। এমন স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে কতবার পা হড়কেছে বাংলাদেশ। আজ আর পথ হারায়নি, চাপকে জয় করে আবুধাবিতে বাংলাদেশ পেয়েছে দুর্দান্ত এক জয়। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে আফগানিস্তানকে ৩ রানে হারিয়ে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন মাশরাফিরা।
৬ বলে ৮, টি–টোয়েন্টির এই যুগে কঠিন কিছু নয়। কিন্তু আফগানিস্তানের কাছে কাজটা কঠিন করে তুললেন মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশকে এনে দিল অসাধারণ এক জয়। আফগানদের দরকার ছিল ৮ রান, মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র ৪ রান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাশরাফি বিন মুর্তজা তাই বললেন,‘জাদুকরি বোলিং করেছে মোস্তাফিজ!’
অথচ ১৮ ওভার শেষেই আফগানিস্তানের আস্কিং রানরেট হয়ে যায় ৬। একটা সময়ে সেটি ১০ ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং দলই সাধারণত চাপে থাকে। আফগানরাও ছিল। প্রয়োজনীয় রান তুলতে গিয়ে প্রতিপক্ষ উইকেট হারাবে, একটা সময়ে খেই হারিয়ে হার মেনে নেবে—এই সূত্র ধরে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতেছে বাংলাদেশ। গত দুই বছরে একটি ওয়ানডেতেও ২৫০ কিংবা এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতেনি আফগানিস্তান। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানরা জোর চেষ্টা করেছে এই অচলায়তন ভাঙতে। বাংলাদেশের সামনে জয়টা প্রায় মরিচিকা হতে বসেছিল চতুর্থ ওভারে, মোহাম্মদ শেহজাদের ক্যাচটা যখন মিড অনে মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়লেন।
ক্যাচ ধরতে পারলে আফগান ওপেনারের আর ৫৩ রান করা হয় না। থেমে যান ৯ রানেই। ক্যাচ ধরতে না পারাটা নিজেদের দোষ। বাংলাদেশের পাশে মনে হচ্ছিল নিয়তিও নেই। ৪৪.৩ ওভারে সামিউল্লাহ শেনওয়ারির বিপক্ষে করা এলবিডব্লুর জোরাল আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার মরিস এরাসমাস। সাদাচোখে মনে হবে সাকিবের বলটা নিশ্চিত লাগবে অফ স্টাম্পে । অথচ বল ট্র্যাক বলছে স্টাম্প মিসিং! প্রযুক্তি কখনো কখনো আশির্বাদ না হয়ে অভিশাপও হয়, বাংলাদেশ আজ সেটি বুঝল। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া শেনওয়ারি অপরাজিত থাকলেন ২৩ রানে।
এই যে ক্যাচ ধরতে না পারা, রিভিউ নিয়ে আফগানদের বেঁচে যাওয়া সবই ম্যাচের একেকটা রং। এই রং ম্যাচটা করে তুলেছে ভীষণ রোমাঞ্চকর। আফগানদের জন্য কাজটা শুরু থেকেই কঠিন করে তুলেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। দলের ২০ রানে ফিরে গেছেন ওপেনার ইহসানউল্লাহ। ৬ রানের মধ্যে সাকিবের দুর্দান্ত থ্রোয়ে রানআউট রহমত শাহ (১)। কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শেহজাদ ফিফটি করলেন, তৃতীয় উইকেটে হাসমতউল্লাহকে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়লেন। ব্যাটিংয়ে ভালো করা মাহমুদউল্লাহ অবশেষে শেহজাদকে বোল্ড করে ব্রেক থ্রুটা এনে দিয়েছেন।
খণ্ডকালীন বোলার মাহমুদউল্লাহ সাফল্য পেলেও বিশেষজ্ঞ বোলাররা উইকেট বের করতে অনেক সময় নিয়ে ফেললেন। ততক্ষণে আসগর আফগান ও হাসমতউল্লাহ চতুর্থ উইকেটে ৭৮ রান যোগ করে ফেলেছে। ব্যাটিং–বোলিং অসাধারণ হয়েছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে আসগরের (৩৯) দেখার মতো এক ক্যাচে নিয়ে আবারও ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার কাজটা করেছেন মাহমুদউল্লাহ।
৪৪তম ওভারে বাংলাদেশের সামনে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ানো হাসমতউল্লাহকে (৭১) মাশরাফি যখন বোল্ড করে দিলেন, আশার প্রদীপটা ভালোভাবে জ্বলে উঠল। সাকিবের করা পরের ওভারে রিভিউ নিয়ে শেনওয়ারির বেঁচে যাওয়া। বাংলাদেশের হুমকি হয়ে শেনওয়ারি টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। কিন্তু শেষ ওভারে তাঁকে আরেকটি আফগান রূপকথা লিখতে দেননি মোস্তাফিজ, লিখতে দেয়নি বাংলাদেশ। এই জয়ে টলে যাওয়া আত্মবিশ্বাসটা আবারও ফিরে পেল বাংলাদেশ । ফাইনাল নিশ্চিত করতে হলে বুধবার পাকিস্তানের বিপক্ষে এই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগাতে হবে মাশরাফিদের।