ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। ‘ল্যাট্টিন, খাওয়া, চলাফেরা সবদিকেই আমগোর অসুবিদা। আমরা কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যানের সাহায্য পাইতেছি না। আমরা হুনি মাল আসচে। কিন্তু আমরা তো পাইনি।’
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় খোকসাবাড়ির এক নারী এভাবেই নিজের আর নিজের পরিবারের অবস্থা জানান। ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তায় কাটছে তাঁদের জীবন।
একই ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সাহিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার যা দিচ্ছে তাতে আমার হচ্ছে না। যা দেয় তাতে আমার হয় না, আমি দিবারও পারছি না। পর্যাপ্ত বরাদ্দ কোনদিক দিয়ে দিচ্ছে? আমার খোকসাবাড়ী ইউনিয়নে কতটুকু বরাদ্দ এসেছে? বেশি বরাদ্দ আসে নাই।’
জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা বলেন, ‘দূর হওয়ার কারণে, দেরি হয়েছে কিন্তু ত্রাণ পেয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য টিন ও টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’
সিরাজগঞ্জে কমছে না বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। আজ শুক্রবার সাপের কামড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত তিনদিনে বন্যার পানিতে ডুবে এবং সাপের কামড়ে জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার তিন লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করেছে।
যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার কমে এখনো বিপৎসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ ফুলজোর ও ইছামতি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নতুন করে রায়গঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানিতে টিউবঅয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষ সার্বক্ষণিক পানিতে চলাফেরা করায় হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের রান্না করার উপকরণ না থাকায় অনেকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন যাপন করছে।
জেলার ২৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ।
সাতদিনের ব্যবধানে জেলার সদর, কাজীপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলাগুলোর দুর্গম চরাঞ্চলের অবস্থা আরো নাজুক। গবাদি পশু, শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও প্রসূতি মায়েদের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে জেলার বন্যাদুর্গতরা। জ্বালানি, ওষুধ, ত্রাণ, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে জেলার পানিবন্দি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চরাঞ্চলে রাতে ডাকাতের উৎপাত, দিনের বেলায় ঘরের মাচায় সাপসহ পোকামাকড়ের ভয় এ অঞ্চলের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, ১৯৮৮ সালে জেলায় বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। এবার সেই সীমার চেয়েও ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধরক্ষায় সার্বক্ষণিক একজন কর্মকর্তা নিয়োগসহ গ্রাম পুলিশ নিয়োগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি উপজেলায় ৪০০ টন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আজ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জায়গায় যেন সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ হয়, এ জন্য জেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। অত্যন্ত ভেতরের এ এলাকায় আমি দেখতে এসেছি ত্রাণ বিতরণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না।’