সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ভোলার ৩৫০ জন স্বাস্থ্য সহকারী

0
622

আদিল হোসেন তপু ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে সেবা দিচ্ছেন ভোলার ৩৫০ জন স্বাস্থ্য সহকারীরা। টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)সহ সংক্রমন রেগের ১০ টি প্রতিশেধক নিমূর্ল রোধে সরাসরি কাজ করে এই স্বাস্থ্য সহকারীরা। কিন্তুু তাদের নেই পর্যাপ্ত কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা। গ্রাম এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক ও টিকা কেন্দ্রে প্রতিদিনই শিশু থেকে মহিলা সব শ্রেনীর মানুষের সংস্পর্শে যাওয়ার ফলে করোনা ঝুঁকির মাত্রা আরো বেশি বেড়ে যায় তাদের।

করোনা সুরক্ষায় সরকারিভাবে এখনো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ না করায় গ্রামীণ জনপদের স্বাস্থ্য সহকারীদের আতংকের মধ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই স্বাস্থ্য সহকারীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাময়িক ইপিআই কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য দাবী জানায়।তা নাহলে ঝুঁকির মধ্যে পরবে গ্রামীন স্বাস্থ্য সেবা। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ের চিকিৎসায় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য সহকারীদের। তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এর মধ্যে সামনে থেকে যারা লড়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য সহকারীরা। তৃর্নমূল মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হলেও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) চালু রাখা হয়েছে। ফলে কর্মসূচিতে নিয়োজিত জেলার ৩৫০ জন স্বাস্থ্য সহকারীর করোনার মধ্যেও তাদের সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইপিআইয়ের কর্মসূচীর মাধ্যমে মা ও শিশুকে ১০টি সংক্রামক রোগের নিয়মিত টিকা দেওয়া সপ্তাহে ৬ দিন (সরকারী ছুটি ব্যতিত) বিভিন্ন বাড়ী বাড়ী ঘুরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ,ঝুঁকিপূর্ণ রোগী সনাক্তকরণ, গর্ভবর্তী, গর্ভপূর্ব এবং গর্ভোত্তর সেবা, নবজাতকের সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকার নির্ধারিত দিনে দায়িত্ব পালন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা দেয়া, পোলিও নির্মূল, স্যানিটেশনসহ ১৫-৪৯ বছর বয়সের সকল নারীর পাঁচ ডোজ টিটি টিকা দেয়া এবং শিশুদের ১৮ মাসের মধ্যে প্রতিষেধক টিকা দেয়ার কাজ সফল ভাবে করে আসছে স্বাস্থ্য সহকারীরা। তবে করোনার এই বিশেষ পরিস্থিতিতে এ কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করা হবে, সে সম্পর্কে সরকারিভাবে এখনো কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মধ্যে দিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য সহকারীরা। তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম। ভরসা কেবলই মাস্ক। চরম ঝুঁকির মধ্যে মাঠ পর্যায়ে সেবা প্রদান তারপরেও যেন থেমে নেই। আতংক যেনেও নিষ্ঠার সাথেই কাজ করছে এই স্বাস্থ্য সহকারীরা। স্বাস্থ্য সহকারী আরাফাতুর রহমান রাহাত,আবু বকর সিদ্দিক,মো: ইউসুফ,কামাল উদ্দিন সহ আরো অনেকেই জানান, ইপিআই কেন্দ্রে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন। নিরাপদ দূরত্ব তিন ফুট বজায় রেখে ইপিআই কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়।

প্রতিটি শিশুকে ধরে টিকা দিতে হচ্ছে। এমনকি শিশুর পরিবারে অন্যান্য সদস্যরাও তখন কাছে চলে আসে। এ ছাড়া এ কাজে নিয়োজিতদের কোনো ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়নি। এতে স্বাস্থ্যকর্মী এবং তাঁদের মাধ্যমে গর্ভবতী নারীরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। যেখানে একটি মাস্ক ছাড়া কিছুই নেই, সেখানে তাঁরা নিজেরা কিভাবে সুরক্ষিত থাকবেন বা তাঁদের কাছে আসা মা ও শিশুরা সুরক্ষিত থাকবেন। তাই ইপিআই সচল রাখতে গিয়ে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হলে আপাতত টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত রাখাই ভালো বলে তারা মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য বশীর উদ্দিন ও ভোলা জেলার সাধারন সম্পাদক মো: হোসেন জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকার নির্ধারিত দিনে দায়িত্ব পালন করতে হয় আমাদের। সেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সেবা নিতে এসেছেন। দৈনিক গড়ে অর্থ শতাধিক রোগি আসছে। আগের তুলনায় রোগী বাড়ছে। করোনা মোকাবেলায় বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ ছাড়া আমাদের সুরক্ষায় গ্লাভস, পিপিই, মাস্ক এবং অন্য কোন সাপোর্ট নেই। গ্রামের মধ্যে সর্দি-কাশি-জ¦রঠান্ডা জনিত রোগীই বেশি আসে।এগুলো করোনা রোগের লক্ষণ মনে করে চিকিৎসা দিতেও সাহস পাচ্ছি না আমরা।এমনকি সেবা দিতে গিয়ে আমাদের অনেক স্বাস্থ্য সহকারীরা জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তুু সরকারে কোন প্রনদনার মধ্যেও আমরা নেই। তাহলে কিভাবে আমরা সেবা দিবো। তাই সরকারে যেন স্বাস্থ্য সহকারীদের প্রনদনার মধ্যে অন্তুভুক্ত করা ও অসুস্থ হলে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবী জানায়। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ভোলা জেলার সভাপতি শাহানাজ বেগম জানায়, আমরা ভোলা জেলার ৩৫০ জন স্বাস্থ্য সহকারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলার ১৬৬৪ অস্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রে ও ২১৫ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকার নির্ধারিত দিনে দায়িত্ব পালন করে আসছি।

এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা চরম ঝুঁকির মধ্যে পরতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা ইপিআই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ মানবিক সেবা দিতে প্রস্তুত। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা জরুরি। এজন্য সরকার দ্রুত সুরক্ষা সরঞ্জাম বরাদ্দ দেবেন বলে আমরা আশাবাদী। ভোলা সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, স্বাস্থ্য সহকারীরা ডাক্তার ও নার্সদের মতো তৃর্নমূল পর্যায়ে তারা ইপিআই কার্যক্রম ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকার নির্ধারিত দিনে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এতে করে তারা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারীদের সুরক্ষার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে চাহিদা দিয়েছি। সিদান্ত হলে অবশ্যই আমরা সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করতে পারবো। তবে কেউ যদি বেশি ঝুঁকি মনে করে তাহলে আমরা স্থানীয় ভাবে তাদের সুরক্ষার জন্য যাযা প্রয়োজন তা প্রদান করবো। পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হলে ইপিআই কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি ভাবা হবে বলে জানান। ইপিআই কার্যক্রম বন্ধ করলে শিশুদের সুরক্ষা ও লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে জানান।

LEAVE A REPLY