ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্র পর্যবেক্ষণকারীরা কোনো মন্তব্য বা পরামর্শ দিতে পারবে না, তারা কেবল মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। নিবন্ধন যাতে বাতিল না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন ইসি সচিব।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইতোমধ্যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। প্রথমে আপনারা এনজিও ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত হন। তারপর আমরা আহ্বান করলে আপনারা আবেদনপত্র দেন। তারপর আমরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না। যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে আমরা শুনানি গ্রহণ করে সেগুলো নিষ্পত্তি করি। তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি দিয়ে থাকি।
ইসি সচিব বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের ১১৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থা ছিল। তার মধ্যে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এনজিও ব্যুরো থেকে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে অভিযোগ আসায় নির্বাচন পর্যাবেক্ষক নীতিমালা অনুসরণ করে সেটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
সচিব বলেন, একটি ভোট কেন্দ্রে অনেকগুলো সংস্থার লোক থাকবে। পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম থাকবে। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনাদের জন্য যে নীতিমালা সেটি অনুসরণ করে দায়িত্বপালন করবেন। একজন পর্যবেক্ষকের কারণে কিন্তু আপনি নিজেও বিপদে পড়ে যাবেন। আমাদের নীতিমালায় বলা আছে যে, আপনি যদি কোনো শর্ত ভঙ্গ করেন তাহলে কিন্তু আপনাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেতে পারে। এজন্য খুব সতর্কভাবে এ পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ফলো করে দায়িত্বপালন করবেন।
পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, যখন আপনারা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবেন তখন কয়েকটি সাবধান বাণী উচ্চারণ করবেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যাতে যে কেউ বুঝতে পারেন যে, আপনি একজন পর্যবেক্ষক। প্রথমে কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে তাঁর পরিচয় দিতে হবে। কেন্দ্রে কোনো মোবাইল ফোন নেওয়া যাবে না, কোনো ছবি তুলতে পারবে না, কোনো কমেন্টস করতে পারবে না, শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। সেই কেন্দ্রে যত প্রবলেমই হোক সে পর্যবেক্ষণ করে আপনার কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। তারপর আপনি সবার কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে কম্পাইল করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন দিবেন। পর্যবেক্ষণের সময় গোপন কক্ষে যাওয়া যাবে না, কাউকে নির্দেশনা দিতে পারবে না। প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবে না। এগুলো ক্লিয়ার করে বলে দেবেন। যদি কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হয়, এটা তারা কমিশনকে অবহিত করতে পারেন বা আপনাকে লিখিতভাবে অবহিত করতে পারেন।
ইসি সচিব বলেন, অনেক সাংবাদিক তাদের সামনে ক্যামেরা ধরবেন। উনি কিন্তু কথা বলতে পারবেন না। কোনো সংবাদ লাইভে কথা বলতে পারবেন না, কমেন্টস করতে পারবেন না। ব্রিটেনের পুলিশের মতো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু পর্যবেক্ষণ করবে। আপনাদের কাছে লিখিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করবে না। আপনারাও যখন কম্পাইল করে জমা দেবেন, তার আগে আপনারাও কোনো কমেন্টস করবেন না। রিপোর্ট কম্পাইল হলে প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। এবং আমাদের কাছে জমা দিতে পারেন। আপনাদের আচরণ হবে নিউট্রাল। এমন কোনো ব্যক্তিকে আপনারা নিয়োগ করবে না যে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য। এগুলো আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে হেলালুদ্দীন আহমদ সচিব বলেন, একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন নিবন্ধন যাতে বাতিল না হয়। সে দিকে আপনারা খুব বেশি খেয়াল রাখবেন। আপনারা অনেকে কিন্তু এনজিও হিসেবে কাজ করেন। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আপনারা নির্বাচনেও কাজ করেন। কিন্তু এখান থেকে যদি আমরা রিপোর্ট দেই যে, আপনি এই ধরনের একটি আচরণ করেছেন। যেটার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। তাহলে কিন্তু আপনার নিবন্ধনটা বাতিল করার জন্য যারা নিবন্ধন দেয় তাদেরকেও আমরা চিঠি দিয়ে দেব। সুতরাং বি কেয়ারফুল। আপনারা এমন কোনো আচরণ করবেন না, এমন কোনো কাজ করবেন না যেটার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ভণ্ডুল হতে পারে বা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
ইসি সচিব বলেন, নির্বাচন আর পেছানো হবে না। আপনারা জানেন এবারের নির্বাচন একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। এবারের নির্বাচনে সংসদ বহাল থাকবে। সরকার থাকছে এবং সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যার ফলে এবারের নির্বাচন হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আমি আশা করবো এবারের নির্বাচনটা সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
হেলালুদ্দীন বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ডের সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। এবার প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।