ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া এই মন্ত্রণালয়ে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তাদের দায়িত্ব। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ আজ রবিবার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার যোগাযোগ করার জন্য গাড়ি বা নৌযানের খুব সমস্যা থাকে। আমরা প্রতিনিয়ত গাড়ি কিনে দিচ্ছি। গাড়ি এতো বেশি ব্যবহার হয় যে এগুলো বেশিদিন টিকবে এমন নয়। একবার গাড়ি কিনে দিলে আজীবন চলবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। অন্যের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে নেওয়া এটাও আমরা চাই না।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এবার প্রচুর গাড়ি দিয়ে দিয়েছি, সেগুলো আপনারা নিতে পারেননি। এটা যেহেতু একটা চলমান প্রক্রিয়া তাই হিসাব রেখে রেখে অনবরত আপনাদের ডিমান্ডটা দিতে থাকেন। কারণ না চাইলে কেউ দেয় না, আমি তো সেধে সেধে বলি। সবাই তো বলবে না, এটা হলো বাস্তবতা।’
তিনি আরো বলেন, ‘লোকজন অনুযায়ী কী সংখ্যক গাড়ি বছরে লাগতে পারে চার্ট করে রাখেন। লোকালি যেখানে গাড়ি অ্যাসেম্বল হয় সেখানে অর্ডার প্লেস করে রাখেন, যত গাড়ি হয় তারা সাপ্লাই দেবে। সেভাবে একটা ব্যবস্থা আপনাদের নেওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলযান কোথায় কী পরিমাণ লাগবে সেটার যদি হিসাব থাকে, হিসাব মতো যদি শুরু থেকে ব্যবস্থা করা যায়, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও বেশি নিরাপত্তা দিতে পারবে।’
যে কাজগুলো অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে সেগুলো করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো প্রয়োজন সেগুলোর ক্ষেত্রে দেখেছি যে অবহেলার শিকার আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপারে আমি বলতে পারি। পুলিশ বাহিনী কাজ করত, না ছিল তাদের লোকবল, না ছিল তাদের কোনো অবকাঠামো সুবিধা, ট্রেনিংয়ের সুবিধা। সব দিক থেকে অবহেলার শিকার ছিল। আমরা প্রথম বাজেটেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দ্বিগুণ করে দিয়েছিলাম। ট্রেনিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি, অবকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা তখন আমরা করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা ছিল যারা জনগণের নিরাপত্তা দেবে তাদের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। যখন তারা সঠিক সেবা দেবে তখনই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে। এই মন্ত্রণালয়টা একটা বিশাল মন্ত্রণালয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতি কালো ব্যাধির মতো সমাজে ছেয়ে আছে। সামরিক সরকারগুলোর কারণে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘পাশাপাশি মাদক ও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হবে। দেশে যখন জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটল, বাংলা ভাই সৃষ্টি হলো তখন তৎকালীন সরকারের কেন জানি একটা প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা ছিল। কেন আমি জানি না কিন্তু এটা সবার কাছেই ধরা পড়েছে। ট্রাকে তারা মিছিল করে, আর পুলিশ তাদের পাহারা দেয়, এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি বাংলাদেশে দেখেছি। সেই সঙ্গে মাদক ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব কালো ব্যাধি থেকে দেশকে মুক্ত করতে যা যা করণীয় সেটা আমাদের করতে হবে। একটা দেশকে উন্নত করতে হলে, মাদক সন্ত্রাস, দুর্নীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই মন্ত্রণালয়ে যারা কাজ করছেন তারা দৃষ্টি দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানটা অব্যাহত থাকতে হবে। অভিযান অব্যাহত থাকার সঙ্গে সঙ্গে মাদকমুক্ত করতে হবে। এছাড়া মাদক কারা আনে, কারা পাচারকারী, কারা তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু মাদক যে সেবন করে তাকেই নয়, যারা সুস্থ হয়ে সমাজে ফিরে আসতে চায় তাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারে কায়েদিদের ট্রেনিং দিয়ে তাদের মাধ্যমে কিছু উৎপাদন করা। সেটা বিক্রি করে লভ্যাংশটা, যারা কাজ করবে তাদের জন্য রেখে দিলাম। হয় এটা তার পরিবার নিয়ে যাবে বা টাকাটা থাকবে সে যখন মুক্তি পাবে তখন ওই টাকা দিয়ে সে যেন একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করতে চাই, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘এনটিএমসিটা (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) নতুনভাবে তৈরি করে দিয়েছি, নতুন নতুন যা যা প্রয়োজন কিনে দিচ্ছি। নজরদারিটা যাতে আরও বাড়ানো যায় সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি। সেটা আমরা করব।’
এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা প্রজেক্টগুলো যখন তৈরি করেন তখনই জনবল কত প্রয়োজন সেটাও সঙ্গে সঙ্গে উল্লেখ করবেন। যাতে প্রজেক্ট পাস করার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা লোকবল দিতে পারি। কারণ এই লোকবলকে আগেভাগেই নিয়োগ দিয়ে ট্রেনিং দিতে হবে। বিষয়টিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এবং অধীন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।