আদিল হোসেন তপু, ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, উনসত্তরের গণআন্দোলনের মহানায়ক খ্যাত সংগ্রামী জননেতা বর্তমান সরকারের সফল বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ৭৫-তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে।
রবিবার (২২ অক্টোবর) বাদ আসর ভোলা জেলা আওয়ামীলীগ এর আয়োজনে শহরের গাজীপুর রোডস্থ মন্ত্রীর নিজ বাসভবনে আলোচনা সভা ও দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু এর সভাপত্বিতে আওযয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন এর নেতৃবিন্দর উপস্থিত ছিলেন ।
এসময় বানিজ্যমন্ত্রী টেলি কনফান্সের মাধ্যমে বলেন, আমি সাধারনত জন্মদিন পালন করিনা। কারন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মদিন পালন করতেননা। তিনি শিশুদের নিয়ে সময় কাটাতেন। তাই তার জন্মদিনকে আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে পালন করি। এসময় মন্ত্রী তার জীবনের বাকি দিনগুলো ভোলার মানুষের আশা-আখাঙ্কা পুরনে কাজ করার জন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করেন।
সভায় বক্তব্য দেন, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, পৌর মেয়র মো: মনিরুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মোশারেফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: ইউনুছ, ভোলা সদর উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ এর ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গোলদার, জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নকিব, এনামুল হক আরজু, প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডর শফিকুল ইসলাম,জেলা আওযামলিীগের ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক মো: শফিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা আওযামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভোলা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারী মো: আজিজুল ইসলাম, জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা, পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি নাজিবুল্লাহ নাজু, সম্পাদক আলী নেওয়াজ পলাশ, যুবলীগ সম্পাদক আতিকুর রহমান ও সেচ্ছাছাসেবকলীগ আহবায়ক আবু ছায়েম।
পরে তোফায়েল আহমেদ’র সু-স্বাস্থ্য কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন গাজীপুর রোড মসজিদের ঈমাম মাওলানা মাহফুজুর রহমান।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী জননেতা তোফায়েল আহমেদ ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলার সদর উপজেলার কোড়ালিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মৌলভী আজহার আলী ও মাতা ফাতেমা বেগম ছিলেন এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি। ১৯৬৪ সালে ধনিয়ার আলহাজ মফিজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে তিনি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।
জননেতা তোফায়েল আহমেদ ভোলা সরকারি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বরিশাল বজ্রমোহন কলেজ থেকে আইএসসি এবং বিএসসি পাহ করেন যথাক্রমে ১৯৬২ এবং ১৯৬৪ সালে।
পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদে এবং কলেজের হোস্টেল অশ্বিনী কুমার হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৬২ সনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ১৯৬৪ সালে ইকবাল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুররুল হক হল) হল ছাত্র-সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৫ সালে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহ-সভাপতি এবং ১৯৬৬-৬৭ সালে ইকবাল হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ডাকসু’র ভিপির দায়িত্ব পালনকালে চারটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে বঙ্গবন্ধু মুজিব প্রদত্ত ৬ দফাকে হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ব ছাত্র ও গণআন্দোলনে সফল নেতৃত্ব প্রদান করায় তোফায়েল আহমেদ দেশবাসীর অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করেন। আবাসিক হল ও ডাকসুর ভিপি থাকাকালেই তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সাহচর্যে আসেন।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোলার দৌলত খাঁ-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ‘মুজিব বাহিনী’র অ ল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার অধিনায়কের অন্যতম। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও পাবনা সমন্বয়ে গঠিত মুজিব বাহিনীর পশ্চিমা লের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার সংগ্রামে তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা অতুলনীয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের নির্মম হত্যাকান্ডের পর একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তোফায়েল আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ ৩৩ মাস তিনি কারাগাড়ে ছিলেন। ১৯৭৮-এ কুষ্টিয়া কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি সাফল্যের সঙ্গে এই পদ অলঙ্কৃত করে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮৬, ’৯১ এবং ’৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। ’৯১ এবং ’৯৬-এর নির্বাচনে ভোলা-১ ও ভোলা-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-এ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের গণরায়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর মহান জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় ঐকমত্যের সরকারে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। মন্ত্রী হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্মেলনে যোগদান করে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্য উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের অঙ্গীকার আদায়ে সফল নেতৃত্ব প্রদান করেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের আন্দোলনে তোফায়েল আহমেদের অবদান উল্লেখ করার মতো। যে কারণে তিনি এরশাদ আমলে চারবার এবং ১৯৯৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যে আন্দোলন সংগঠিত হয় তাতে খালেদা জিয়ার আমলেও দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। এছাড়াও ২০০২-এ খালেদা-নিজামী জোট সরকারের শাসনামলেও তিনি কারাবন্দি হন এবং তাকে তার রাজনৈতিক জীবনে সর্বমোট সাতবার কারাগারে অন্তরীণ হতে হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সাবেক সদস্য এবং সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক সংগ্রাম ও বিস্তার বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। আজও তিনি তার অব্যাহত সংগ্রামী জীবনে সততা, মেধা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও বাগ্মিতা দিয়ে সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে জনকলাণমূলক রাজনীতির অভিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। ১৯৭৫ উত্তরকালে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে দল ও মতাদর্শ পরিবর্তনের চরিত্র অনেকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও তোফায়েল আহমেদ কখনোই প্রলোভন ও হুমকির সামনে কোনদিন মাথা নত করেননি। এমনকি ১/১১-এর পরে েেসনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও স্ত্রী-কন্যাসহ মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রকার প্রলভন বা হুমকির কাছে নতি স্বীকার করেননি। জেল-জুলুম-হুলিয়া তার রাজনৈতিক জীবনের প্রধান অলঙ্কার। ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোলা-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনীতি ছাড়াও ব্যক্তিগত চরিত্র ও আচরণে অমায়িক এই সংগ্রামী রাজনীতিকের পরোপকার, বদান্যতা, সাহিত্য-সঙ্গীত ও সুকুমার শিল্পের প্রতি বিশেষ আগ্রহ তার মনন ও চেতনাকে মহিমান্বিত করেছে।