ভোলায় প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ নানা সমস্যায় জর্জরিত ॥ ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

0
1065

আদিল হোসেন তপু ॥
ভোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বর্তমানে কলেজটিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণী কক্ষ সংকট, একাডেমিক ভবনসহ নানা সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। মেয়েদের কমনরুম ও মিলনায়তনের অভাব শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এর পাশাপাশি পাঠ্যক্রমের পরিবেশ  বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়ারও রয়েছে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা। জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এদিকে একই অবস্থা ভোলার অন্য ৩টি সরকারি কলেজেরও।
স্বাধীনতার পর দ্বীপজেলা ভোলায় নারীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৭২ সালে তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বর্তমান সরকারের সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় মেয়েদের একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ। ১৯৮৪ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু থাকা এ সরকারি কলেজটি। শিক্ষার্থী আছে  প্রায় ৩ হাজার। ৫৬ জন শিক্ষকের বিপরীতে অছে মাত্র ২৭ জন। এত কম সংখ্যাক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আবার যে শিক্ষক আছেন তাদের মধ্যে অনেক পদ খালি। দিন দিন শিক্ষার্থী বাড়লেও সে তুলনায় শ্রেণী কক্ষ নেই। ২টি ভবনে চলে কলেজের কার্যক্রম। তাও আবার ঝূঁকিপূর্ন ভবন। অনার্স বা মাষ্টার্স এর পরীক্ষা থাকলে অনেক সময় ক্লাশ ছুটি দিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজে পর্যাপ্ত কম্পিউটার না থাকায় ক্লাশ করা যাচ্ছেনা। আইসিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক সংকটের কারনে কলেজে ক্লাশ না হওয়াতে বাইরে এর জন্য পড়তে হচ্ছে প্রাইভেট। যা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কষ্ট কর হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা হোস্টেলে ধারন ক্ষমতা কম থাকায় ঝূঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে ভাড়া বাসায়। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য নেই কোনো আবাসিক ভবন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর সহর্ধমীর্নির নামে প্রতিষ্ঠিত সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজটি।
কলেজের শিক্ষার্থী সারা, ইমু, সীমা, শান্তা, এ্যানী সহ আরো অনেক শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের কলেজে শ্রেনী কক্ষের সমস্যা রয়েছে। যার ফলে পাবলিক পরীক্ষার সময়ে আমাদের দ্রুত কলেজ ছুটি হয়ে যায়। পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষক সংকট তাই এক বিভাগের শিক্ষক অন্য বিভাগের ক্লাশ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়ারও গণিত, প্রানী বিদ্যা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান শিক্ষক নেই। এর ফলে বাইরে প্রাইভেট পরতে হচ্ছে। রয়েছে কম্পিউটার স্বল্পতা। তাই পর্যাপ্ত কম্পিউটার ক্লাশ করতে পারছিনা। ফলে আইসিটি বিষয়ে ভালো রেজল্টা করতে পারছিনা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য নেই কোন মিলনায়তন। এছাড়ার বিজ্ঞান বিভাগের জন্য নেই তেমন মান সম্মত কোন ল্যাব। ফলে প্যাকটিকেল ক্লাশ করতে পারছিনা। আমাদের মেধার বিকাশ ঠিক মতো হচ্ছেনা। এছাড়ারও কলেজে ক্যান্টিন সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে হোস্টেল সিট সমস্যা। তাই প্রধানমন্ত্রী মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের এসব সমস্যার সমাধান চায় কলেজের শিক্ষার্থীরা।
উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরিদুজ্জামান ও ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশে বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মহিলা কলেজ দ্বীপ সরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ। দ্বীপ জেলা ভোলায় নারীদের  উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে নানা সমস্যা লেগেই রয়েছে। একাডেমী ভবন সংকট রয়েছে, পরীক্ষা হলের সমস্যা রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষা হলে দ্রুত অন্য ক্লাশগুলো ছুটি দিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে যে ২টি ভবন রয়েছে তাও রয়েছে  জড়াজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পরেছে। কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। তাই দ্রুত কলেজের আরো দুটি  নতুন ভবন দরকার। নতুন ভবন করা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এছাড়াও যে পরিমান শিক্ষার্থী রয়েছে সেই পরিমান শিক্ষক নেই। তাই দ্রুত সরকার যেন এই কলেজে আরো শিক্ষক পদায়ন করেন। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্য নেই কোন ডরমেরিটোর নেই। শিক্ষকদের থাকার জন্য একটি ডরমেরিটোর দরকার বলে জানান। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় স্কুলের মতো করে উচ্চ মাধ্যমিক এর ক্লাশ নেয়ার পাশাপাশি অনার্স ও মাস্টার্স এর ক্লাশ নিতে হচ্ছে। শিক্ষক ও শ্রেণীকক্ষ স্বল্পতার কারণে ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কলেজ শিক্ষকদের। অনেক সময় অতিথি শিক্ষক  দিয়ে ক্লাশ করাতে হচ্ছে। ফলে পাঠদান এর মান ঠিক ধাকছেনা। তাই সরকারের কাছে দ্রুত শিক্ষক সংকট, আরো অবকাঠামো নিমার্ন দাবী জানায় শিক্ষকরা।
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রুহুল আমিন জাহাঙ্গির বলেন, বর্তমানে  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট থাকার কারনে শিক্ষার্থীরা কোচিং নির্ভর হয়ে পরছে। তাই সরকারের উচিত কোচিং বানিজ্য বন্ধ করতে হলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। এর পাশপাশি শিক্ষকদের আরো সুযোগ সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে একজন শিক্ষক স্বাছন্দে পাঠদান করতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীরা আরা কোচিং নির্ভরশীল হবেনা বলে জানান।
সরকরি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: ইসরাফীল জানান, ১৯৭২ সালে ভোলার কৃতি সন্তান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৮৪ সালে জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে ৭টি বিষয়য়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালিন যে শিক্ষক পদ দিয়ে শুরু হয় তাই দিয়ে অনার্স ও মাষ্টার্স কোর্স চলছে। বর্তমানে আমাদের একটি একাডেমী ভবন, পরীক্ষা ভবন, শিক্ষকদের জন্য ডরমেরিটোর ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরো একটি হোস্টেল হলে প্রতিষ্ঠানটি ভালো চলবে বলে জানান। আমরা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন বাস্তবায়নরে অপেক্ষায় দিন গুনছি।
এদিকে একই অবস্থা ভোলা সরকারি কলেজ, লালমোহন শাহাবাজপুর কলেজ ও চরফ্যাশন সরকারি কলেজেরও। এখানে সর্বমোট ১৬৭ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৮৫ জন।
ভোলা সরকারি কলেজে ৯১ বিপরিতে ৪৫ জন, লালমোহন শাহবাজপুর কলেজে ৩১টি পদের মধ্যে আছে ১৫ জন। চরফ্যাশন সরকারি কলেজে ৪৫ পদের মধ্যে আছে ২৫ জন  শিক্ষক রয়েছে।

LEAVE A REPLY