ভোলায় জেলেদের বরাদ্ধর ভিজিএফ চাল বিতরনে অনিয়ম, জেলেরা ৮০কেজির স্থলে ৩৫কেজি

0
38

মো: আফজাল হোসেন ॥ ভোলায় জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল কম দেয়া এবং আৎসাতসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৮০কেজির স্থলে ৩৫কিংবা ৩৮কেজি দেয়া হচ্ছে এসব জেলেদের। অতিরিক্ত চাল বিতরন না করেই রেখে দেয়া হচ্ছে সরকারী গুদামে। জেলে কার্ড নয় নিজস্ব কার্ড ছাপিয়ে বিতরন করতে দেখা গেছে চাল। অনিয়মের তদন্ত করে দেখার কথা জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

বছরের মার্চ এপ্রিল দুইমাস মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয় মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। যে কারনে এসব কর্মহীন অসচ্ছল জেলেদের জন্য সরকার ৪মাস প্রত্যেক জেলে পরিবারকে প্রতিমাসে ৪০কেজি করে ৪মাসে ১৬০কেজি ভিজিএফ চাল দিচ্ছে। স্থানীয় ভাবে প্রথ্যেক মাসে বিতরন করা হচ্ছে না। ২মাস পর পর ৮০কেজি করে চাল বিতরন করার কথা থাকলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজ করেই ৮০কেজির স্থলে ৩৩ কিংবা ৩৫ কেজি করে চাল দিচ্ছে।

সরেজমিন ভোলার দৌলতখানের চরপাতা ইউনিয়ন চাল বিতরনের খবর পেয়ে গেলে নজরে আসে ৮০কেজির স্থলে ৩৩কিংবা ৩৫কেজি করে দিচ্ছে দুই মাসের চাল। আবার এর চেয়েও কম চাল দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। একমাসে ১শত সাড়ে ১২টন চাল বিতরন করার কথা থাকলেও ৯৫টন চাল উত্তোলন করে বিতরন করে। শুধু তাই নয়,সাদা বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছে মেম্বারসহ তাদের লোকজন। চাল কম দেয়া ও কম উত্তোলন করার কথা স্বিকার করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: হেলাল উদ্দিন বলেন,একটি ডিউয়ের (একমাস) চাল উত্তোলন করেছি।দুইমাসের দেয়া হয়নি বলে জানান। একই সুরে কথা বলেন,পরিচষদের উদ্দ্যেগতা হিসেবে পরিচিত যিনি নিজেই চাল বিতরন করছিলেন, অরুন চদ্র হাওলাদার। মাস্টাররোল দেখতে চাইলে দ্রুত সেটি না দেখিয়ে সরিয়ে ফেলেন। এসময় দেখা যায় অটোরিক্সায় করে সাদা বস্তায় ভড়ে ১০/১২বস্তা চাল সরিয়ে নিচ্ছে। যার একটি রিক্সাকে থামালে গ্রাম পুলিশ সরে যায়,আর রিক্সা চালক বলেন,আমার কি দোষ আমি বাড়িতে দিয়ে আসলে আমাকে মেম্বাররা টাকা দিবে।

অপরদিকে তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচড়া ইউনিয়নে লাইন দিয়ে চাল নিচ্ছে জেলেরা। সরকারী ভাবে দেয়া জেলে কার্ড না দেখে স্থানীয় ভাবে ছাপিয়ে তার মাধ্যমে চাল বিতরন করছে মেম্বারসহ উপজেলা নির্বাহী প্রতিনিধি (ট্যাগ অফিসার)সহ সকলেই। সেখানে একজনের হাতে ২/৩টি করে ছিলিপ দেখা গিয়েছে। এছাড়া এসব টোকেন বা ছিলিপে নাম না লিখে শুধু নাম্বার লিখে দিচ্ছে যাতে একই জনের ২/৩টি বুঝা যাতে না যায়। ক্যামেরা দেখেই সেখানে দুইমাসের চাল হিসেবে বিতরন করা হচ্ছে ৩৮কেজি করে। তবে জেলেরা বলছে ৩৩থেকে ৩৫কেজি করে চাল দিচ্ছে তাদের। এসব চাল বিতরন না করে পরবর্তীতে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ দীর্য দিনের।

এসব বিষয় তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার বশির উল্লাহ বলেন,তারা যেসব জেলেদের নামে চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং যাদের নামে বরাদ্ধ হয়নি তাদেরকেও চাল দিচ্ছে। একই সাথে বিশেষ টোকেন সম্পর্কে বলেন,তাদের সুবিধার জন্য তারা এটা করেছে। এভাবেই তারা চাল দিয়ে থাকে। কম কেন দিচ্ছে জানতে চাইলে বলেন,কম দিচ্ছি এজন্য যে আমাদের খরচ আছে। কথা বলার এক পর্যায়ে তাদেরই মাস্তান টাইপের কিছু লোক এসে প্রতিবন্দকতা সৃস্টি করে। তারা কাজে বাঁধা দেয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসার তজুমদ্দিন উপজেলায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিন বলেন,৩৮কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। দুই মাসেরটা একসাথে দেয়া হচ্ছে। আর দেয়া হবে না। এটাই শেষ দেয়া। ৮০কেজির স্থলে কেন ৩৮কেজি দেয়া হচ্ছে। তখন ই তিনি বলেন,চেয়ারম্যান মেম্বাররা যে ভাবে বলেছে সেই ভাবে দিচ্ছি। অনিয়ম না নিয়ম জানতেই তিনি বলেন,আমি নতুন। এটা আমি গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করবো। এসময় ৮ নং ও ৯নং ওয়ার্ড এর চাল নিতে আসা জেলেরা মিথ্যা বলার প্রতিবাদ করে বলেন,আমরা ৩৮কেজি পাইনা। আপনাদের দেখে ৩৮কেজি দিচ্ছে। আমাদেরকে ৩৩ ও ৩৫কেজি করে দিচ্ছে। এসব জেলেদের কথার সত্যতা পাওয়া গেছে,মলংচরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী সিকদার এর সাথে কথা বলে। মুঠোফোনে বলেন,আমি যা করছি আইনের মধ্যে থেকেই করছি। ৩০কেজি আর ৩৩কেজি দিচ্ছেন কেন বল্লেই তিনি বলেন,আমি ৩৩কেজি না আমিতো ৩৫কেজি করে দিয়েছি আইনের মধ্যে থেকেই। দুই মাসে প্রত্যেক জেলে পরিবার ৮০কেজি চাল পাবে,তা হলে কেন ৩৫কেজি দিচ্ছেন, বলার সাথে সাথেই বলেন,আইনের মধ্যে থেকেই করছি। এখন আমি ঢাকা যাচ্ছি,ভোলার পথে। পরে কথা বলবো।

সুশাসনের জন্য নাগরিক ভোলা জেলার সভাপতি মোবাশ্বীর উল্লাহ চৌধুরী এসব অনিয়মকে সুষ্ঠ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন। তিনি বলেন,সরকার অসহায় হতদরিদ্র জেলেদের জন্য ভিজিএফ দিচ্ছে,তখন অসাধু চেযারম্যান,মেম্বার ও সরকারী কর্মকর্তারা তা লুটে খাচ্ছে যা খুবই দুংখজনক। এসব বিষয় এর আগে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বরখাস্ত হয়েছে,তার পরেও হচ্ছে না। দায়ীদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি আশা করেন।

এসব বিষয় জানার জন্য দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে গেলে সেখানে তার সামনে দৌলতখান মৎস্য কর্মকর্তা,উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর সামনে দৌলতখান খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শান্তি রঞ্জন দাস সকলেরই সামনে স্বিকার করেন,যে চরপাতা ইউনিয়নে ৯৫টন চাল নিয়েছে। বাকী ১৩০টন চাল গুদামে রয়েছে। পরবর্তীতে তাকে গুদামে গিয়ে পাওয়া যায়নি,তিনি দ্রুত সেখান থেকে সটকেপড়েন।

দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার বলেন,আমি একসাথে একই তারিখে একই সময় দুই মাসের ডিউওতে স্বাস্খর করেছি। একমাসের চাল নেয়ার কথা নয়। কাগজ এর বাহিরে কথা বলার সুযোগ নেই। প্রত্যেক জেলে পরিবার ৮০কেজি করে পাবে। তাদেরকে কম দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন,পরে যে মাস্টার রোল থাকবে সেটা আমাদের কাছে সাবমিট করবে। যে বিষয়টি অভিযোগ এসেছে সেটি তদন্ত করে দেখবো।

জেলা সৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম,বল্লেন,এর আগেও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এসব অভিযোগে সাসপেন্ড হয়েছে। অভিযোগ পেয়েছি,আমরা এসব বিষয় খোজ নিচ্ছি। তবে কম দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। এক পর্যায়ে তিনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের ফোর করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তদারকি বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে যারা অনিয়ম করে কম দিচ্ছে,তাদের বিষয় তদন্ত করার কথা জানালেন। আরো জানালেন,চরপাতায় যে কম দিয়েছে সেখানে এখন ৮ কেজি করে দিবে আর বাকীদেরকেও দেয়া হবে। এছাড়া তজুমদ্দিনের মলংচরার বিষয় খোজ নিয়ে জানানোর নির্দেশ প্রদান করেন।

অপরদিকে ভোলার জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন,আপনি আমাকে বলার সাথে সাথেই ইউএনওকে বলেছি প্রশাসনিক ব্যবস্খা নেয়ার জন্য। কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। জেলেদের চাল কম দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এমন অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।

LEAVE A REPLY