এম শাহরিয়ার জিলন : দুপুর গড়িয়ে বিকেল। এমন সময় শান্ত ছিলো মেঘনা। চারদিকে উৎসুক জনতার ভীড়। এর মাঝে ঢেউয়ের তালে তালে ছুটছে নৌকা। বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে এগিয়ে চলছে নৌকা বাইচ। অবশেষে গন্তব্যে এসেই হাঁসি মুখে ফিরলো বিজয়ী দল। এ চিত্রই দেখা গেলো মেঘনার তীর ঘেষা জনপদ ভোলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ফেরিঘাট এলাকায়।
জেলে উৎসবকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা যেন উৎসবের জনপদে পরিনত হয়েছে। জীবন-জীবিকার টানে ছুটে চলা জেলেদের মুখে হাসি ফুটানোর লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছিলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচের। সেই প্রতিযোগিতায় পরিণত জনসমুদ্রে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে “পূর্ব ইলিশা যুব ফাউন্ডেশন” মাস ব্যাপী জেলে উৎসবের আয়োজন করে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারী) ছিলো জেলে উৎসবের সমাপনী দিন। শেষ দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ছিলো নানা ধরনের আয়োজন। এর মধ্যে জেলেদের মধ্যে নৌকা বাইচ, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলা, কলাগাছে উঠা ও দঁড়িটানাসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতা। এছাড়াও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরন হয়। প্রদর্শন করা হয় জাদু প্রদর্শনী। সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ‘জেল উৎসবের সমাপনি’ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একটি বর্ণাঢ্য র্যালি ভোলা-লক্ষীপুর সড়কের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিন করে অনুষ্ঠানস্থলে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, পূর্ব ইলিশা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন। বক্তব্য শেষে জেলেদের নিয়ে ‘জেলেদের জীবনচিত্র’ নাটক পরিবেশিত হয়। এরপর কবিতা জীবন পুরান আবৃত্তি সংসদের পরিচালক মশিউর রহমান পিংকু কবিতা আবৃত্তি করেন। দিনের শুরু থেকেই খেলার ফাঁকে ফাঁকে শিল্পী জসিম রানা গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন। অনুষ্ঠানে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন, দর্শকদের মধ্যে থেকে মোঃ এরশাদ ও মোঃ রাকিব। জেলে উৎসবের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র মেঘনার জেলেরা অংশগ্রহণ করে। বিকালে দঁড়ি টানা ও হা-ডু-ডু খেলা শেষে বরিশাল ও ভোলার শিল্পীরা গান গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন রাত ১০টা পর্যন্ত। ভোলার জনপ্রিয় শিল্পী তালহা তালুকদার বাঁধন, মোঃ আনোয়ার হোসেন শিল্পী সুমধুর কন্ঠস্বরে গান গেয়ে দর্শকদেরকে মাতিয়ে রাখেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন, আবৃত্তি শিল্পী আকতার হোসেন বিপ্লব, পূর্ব ইলিশা যুব ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এম শাহরিয়ার জিলন, মোঃ সুমন সর্দার। সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন, মোঃ পিন্টু, নুরুদ্দিন সোহাগ, মোঃ কামাল হোসেন, মোঃ মনির হোসেন, রিয়াজ সর্দার, মোঃ আবদুল জলিল, রুবেল হোসেন সহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা। পূর্ব ইলিশা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, জীবন-জীবিকার টানে মেঘনায় প্রতিনিয়ত মাছ শিকার করেন জেলেরা। কিন্তু তারা আনন্দ-উৎসবের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ওই সব জেলের মুখে হাসি ফুটানো ও সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে জেলেদের নিয়ে ‘জেলে উৎসবের’ আয়োজন করা হয়। নৌকা বাইস প্রতিযোগিতায় চডার মাথা, বিশ্ব রোড জয়লাভ করে। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হা-ডু-ডু খেলায় ভাংতির খাল ও তেমাথা দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ান ঘোষণা করা হয়। রাতে পুরস্কার বিতরন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। পূর্ব ইলিশা ফাউন্ডেশনের একঝাককর্মী নিরলসভাবে পুরো অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছেন।