বিশেষ প্রতিনিধি,ভোলা নিউজ২৪ডটকম॥ভোলার রাজাপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞার রায় অমান্য করে ঘর নির্মান, গাছ, মাছ লুট করে নিয়ে গেছে হাসান, হারুন মুন্সী বাহিনী।
গত ৩/৪দিন ধরে দক্ষিণ রাজাপুর ইউনিয়নে অন্যের জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে হাসান বাহিনী গংরা। ঘর নির্মান ও লুটপাট করে জমির মালিক রাকিব উদ্দিন অমি গংদেরকে হাসান বাহিনী হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় জমি মালিকরা আতঙ্কে রয়েছে।
জমির মালিক ভুক্তভোগী রাকিব উদ্দিন অমি জানান, তার বাবা মৃত মহিউদ্দিন আহমেদের নামে দঃ রাজাপুর ৭০৪৯/১৬ দাগে ৩৫০ খতিয়ানে ৩ একর জমি ৬৭/৬৮ সালে সরকারি বন্দোবস্ত দেয়। মহিউদ্দিন আহমেদ জীবিত থাকা অবস্থায় ওই জমিতে চাষাবাদ ও গাছগাছরা রোপন ও পুকুর খনন করে ভোগ দখল করেছেন। তার বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশসূত্রে অমি গংরা ওই জমি ভোগ করে আসছে। গত কয়েক মাস ধরে ভূমিদস্যু হাসান পাটোওয়ারী একটি বাহিনী নিয়ে বারবার ওই জমি দখলের চেষ্টা করে। কয়েকবার পুকুরের মাছ, গাছ ও বাড়িতে থাকা গরু নিয়ে যায় হাসান পাটোওয়ারী, তাজল ও হারুন মুন্সী বাহিনী।
এসময় বাধা দিলে চাষাসহ কয়েকজনের উপর হামলা করে তারা। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ বিষয়ে ভোলা সদর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় জামিন নিয়ে হাসান পাটোওয়ারী গংরা আবারও ওই জমিতে লুটপাট, জোরপূর্বক দখলের পায়তারা করে আসছে। এতে তাদেরকে একাধিকবার বাঁধা দেয় জমির মালিক অমি গংরা।
এক পর্যায়ে এই জমি দাবি করে হাসান পাটোওয়ারী গংরা ভোলা ডিসি অফিসে জমির মালিক মহিউদ্দিনের বন্দোবস্ত বাতিল চেয়ে আবেদক করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নোটিশ দিয়ে তৎকালীন এ্যাসিল্যান্ড অফিসে কাগজ পর্যালোচনা করে হাসান পাটোওয়ারীর কাগজপত্র জালিয়াতি ও ৭০৪৯/১৬ দাগের ৬১৬ ভোঃ খতিয়ানের দঃ রাজাপুরে জমি নেই প্রমান হয়। তার দেখানো কাগজে নং-৬১৬ ভোঃ ৬৬/৬৭নং বন্দোবস্ত ৭০৪৯ দাগটি চর কালুপুর মৌজায় প্রমানিত হয়। যা ভূমি অফিসের ১২ বালাম বইতে উল্লেখ আছে। হাসান পাটোওয়ারীর অভিযোগটি খারিজ করে এ্যাসিল্যান্ড অফিসের রিপোর্টে রাকিব উদ্দিন অমি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সঠিক বিবেচিত হওয়ায় তৎকালীন এসিল্যান্ড আবু আবদুল্লাহ খান সরেজমিনে পিলার পুতে জমি বুঝিয়ে দেন। কিছুদিন পর আবারও হাসান পাটোওয়ারী ও তাদের গ্রুপ মিলে ওই জমিতে থাকা সাইনবোর্ড ও পিলার উপড়ে ফেলে জমি দখলের চেষ্টা করে। রাকিব উদ্দিন অমি জমি দখলের চেষ্টার বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়।
এরপর রাকিব উদ্দিন অমি ডিসি অফিসে অভিযোগ করলে দুই পক্ষকে নোটিশ দিয়ে কাগজ দলিলপত্র নিয়ে আসার আদেশ দেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর। কিন্তু হাসান পাটোওয়ারী ও তার গ্রুপ কাগজ জালিয়াতি প্রমান হওয়ায় হাজির হয়নি। হাসান পাটোওয়ারী হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, ভোলা। আইন ফাঁকি দেওয়ার জন্য হাসান পাটোওয়ারী ভোলা সহকারী জজ আদালতে ১৮-৫-২১ইং তারিখে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে। হাসান পাটোওয়ারী ওই জমিতে অমি গংরা যাতে প্রবেশ না করে, আকার আকৃতি পরবর্তী না করে, গাছপালা কর্তন না করে, মাটি কেটে ভিটি প্রস্তুত না করে, জাল টানিয়া বাদীর পুকুরের মাছ না ধরে, সৃজিত ফসলাদি কর্তন না করে মর্মে আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য অর্ডার ৩৯ রুল ১,২ বিধি মতে ইনজেকশন জারি করেন। কিন্তু হাসান পাটোওয়ারী নিজেই ইনজেকশন নিয়ে দখল না থেকেও আদালতের রায়কে অমান্য করে গত ৩/৪দিন ধরে রাতের আধারে ওই জমিতে টিনের বসত ঘর নির্মান করে, গাছ কর্তন করে, পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে যায়। যা সম্পূর্ণ আইন বর্হিভূত। এই লুটপাটে হাসান পাটোওয়ারী সাথে ছিলো হারুন মুন্সি, পিতা সিদ্দিক মুন্সি, তার ভাই লালু মুন্সি, ধলু মুন্সি, আজাদ মুন্সিও কালু মুন্সি গংরা। তাদের এসব কাজে বাঁধা দিলে তাজুল ইসলাম ছেলে লোকমান, আবদুল হাই, নুরে আলম, নুরুদ্দিন, হারুন, মান্নানসহ ৩০/৩৫জনের একটি লাঠিয়াল বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে জমি মালিক রাকিব উদ্দিন অমি গংদের উপর হামলা করে। বিবাদী আত্মরক্ষার জন্য পাশের বাড়িতে অবস্থান নেয়।
স্থানীয়রা জানায়, হাসান পাটওয়ারি, তাজল ও হারুন মুন্সি, লালু, কালু, ধলু মুন্সী, আজাদ গংদের একটি সক্রিয় ডাকাত বাহিনী রয়েছে। রাতের আধারে ওই এলাকায় নদীতে ডাকাতি করে থাকেন। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মানুষের ঘরবাড়ি দখল করে এই চক্রটি।
এবিষয়ে জমির রাকিব উদ্দিন অমি বলেন, আমার বাবার জমি আমি পুর্বপুরুষেরা চাষ করে আসছি। হঠাৎ করে এই চক্রটি আমার প্রাণনাশের জন্য উঠে পরে লেগেছে। তারা ভুয়া কাগজ বানিয়ে ইনজেকশন নিয়েছে, আবার তারাই আদালতের আদেশ অমান্য করে সেখানে গাছ কর্তন করে ঘর নির্মান করেছে, মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। আমি আদালতের আদেশ মেনে আমার জমির একটি ফল ও মাছ ধরিনি। কিন্তু এই ডাকাত চক্রটি আমাকে বিভিন্ন সময় প্রাননাশের হুমকি দিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমি ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে এ লুটপাট ও ঘর নির্মানের বিষয়টি জানিয়েছি। আমি জমি দখল মুক্ত করে সেখানে আমাকে শান্তিপূর্ণভাবে জমি দেখাশুনা ও ভোগ করার পরিবেশ তৈরি জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হাসান পাটোওয়ারীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান এবং হারুন মুন্সী, তাজল ইসলাম গংদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ ফরিদ বলেন, ওই জমির বিষয়ে একটি মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি আমরা নলেজে রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাসান পাটোওয়ারী গংরা ঘর নির্মান, গাছ কর্তন ও মাছ লুটপাট করার বিষয়টি আমাকে ফোন করে রাকিব উদ্দিন অমি জানিয়েছে। আমি তাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।