মো: আফজাল হোসেন :; ভোলার ইটভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাট পোড়ানোর যেন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। এসব ইট ভাটায় সরকারী সংরক্ষিত বনের গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এজন্য ইটভাটায় স্বমিল বসিয়ে গাছ কাটার ব্যবস্থা করেছে। আর সবই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। শুধু তাই নয় অশংখ ইটভাটার নেই কোন বৈধতা।
ভোলা সদর থেকে প্রায় ৭০কিলোমিটার দুরে চরফ্যাশন উপজেলা। যেখানে গড়ে উঠেছে সবচেয়ে বেশি বৈধ আর অবৈধ ইটভাটা। এসব ভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাট পোড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সবকিছুই যেন ম্যানেজ করেই হচ্ছে। ফ্রি স্টাইলে চলা প্রতিযোগীতাকে এরিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। অথচ এসব বনের গাছ ঝড় আর জলোচ্ছাস এর সময় ঢাল হিসেবে ভোলাবাসীর পাশের দাড়ায়। প্রাকৃতিক সুন্দরর্যর ণিলাভূমি ভোলা। জেলাটিতে পরিবেশন দুষনের কল কারখানা খুব একটা না থাকলেও বিষফোরার মত হয়েছে কাট জ্বালানো এসব ইটভাটা গুলো।
এসব ইটভাটার আশপাশে বসবাস করা অসহায় সাধারন মানুষ গুলো অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। অত্যাচার জুলুম সহ্য করা ছাড়ানো নিশ্বাসের সাথে বিষ গ্রহন করছে এসব মানুষেরা। শুধু তাই নয়,অভিযোগ রয়েছে ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ঘর-বাড়ি আর মিথ্যা মামলা দিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে ইটভাটার আশপাশের পরিবার গুলোকে। এখনো কেউ কেউ বাপদাদার ভিটা বাড়ি রক্ষায় প্রানপন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ ইটভাটা রয়েছে যারা চিমনি ব্যবহার করে বিরদর্পে প্রশাসনের নাকের ডগায় সবাইকে ম্যানেজ করেই কাট জ্বালিয়ে ইট পুরছে।
চরফ্যাশনের চর মায়ার শানিমা-২ নামক ইটভাটার আশপাশের পরিবার গুলো রয়েছে বেশি অত্যাচারে। তাদের একাধিক ঘর-বাড়ি দখলে নিয়ে ভেকু দিয়ে ভেঙ্গে দেযার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়,বর্তমানে যারা রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানী করার অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার গুলো। এছাড়াও তুলে ধরেন নানান ধরনের অত্যাচারের কথা।
এবিষয় জানার জন্য,শানিমার মালিকদের একজন মো: শাহীন মহাজন মুঠোফোনে বলেন,আসলে বাংলা আর ছোট চিমনি থাকায় লাইসেন্স পাচ্ছি না। আরেকটার কাগজ আছে তা দিয়ে এটা চালাচ্ছি।আমরা প্রশাসন, পরিবেশ, সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছি।এজন্য অপর মালিক মামুনই সব করছে। গত বছর আমাদের চিমনি ফেলে দিয়েছে প্রশাসন এসে। জমির প্রশংঙ্গে ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন,স্থানীয় চেয়ারম্যাসহ গন্যমান্য ব্যক্তিরাই সমাধান করে দিয়েছে। কাট জ্বালাচ্ছি সবই ম্যানেজ করেই।
এদিকে অবৈধ ভাবে পরিচারিত আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ফকিরহাট অবস্থিত মাইসা ইটভাটা।ঐ ভাটায় ভিডিও এবং সংবাদ সংগ্রহে গেলেই ঘিরে ফেলে ইটভাটার লোকজন। ইট ভাটার ভিডিও করতে দেখেই অফিস থেকে ছুটে আসেন ইটভাটার ম্যানেজার মো: ইউসুফ। ভিডিও না করা এবং ছবি না করার জন্য ক্যামেরা ধরে টানাটানি করে। এক পর্যায় ইটভাটার মালিককে ফোন দেয় এবং ভিডিও করা এবং ইটভাটা ঢোকার জন্য হুমকি প্রদান করে। শুধু সেটাই নয় এমন বহু ইটভাটা রয়েছে যে গুলোতে চিমনির ব্যবহার,জ্বালানী হিসেব কাট পোড়ানোর যেন প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। কার চেয়ে কতবেশি কাট সংগ্রহ করতে পারে তারই প্রতিযোগীতা চলছে। মাইসার নামে আরো একটি ইটভাটা রয়েছে। একই নামে দুটি চলছে। তবে মাইসার ম্যানেজার মো: ইউসুফ মালিককে ফোনে কথা শেষ করেই বলেন,প্রশাসন সব ম্যানেজ করা,কেউ আসার সাহস করে না,তুই আসলি কেন।
এবিষয় সাইসার মালিক মো:সায়েম মুঠো ফোনে কেন ইটভাটায় গেলাম জানতে চান এবং চরফ্যাশন বাজারে এসে তার সাথে দেখা করার জন্য বলেন। এছাড়াও একজন ইউপি চেয়ারম্যান দিয়ে ফোন করান যাতে কোন সংবাদ প্রকাশিত না হয়।
এদিকে বিভিন্ন সরকারী বন থেকে গাছ কেটে ইটভাটায় পাঠানোর কথা স্বিকার করেন,(নিরাপত্তার জন্য নাম দেয়া হলো না) চরফ্যাশনের ঢালচর বনে মজুরী হিসেবে গাছ কাটা দুই শ্রমিক। তারা বলেন,প্রতিদিন বন কর্মকর্তাদের সাথে মিলেমিশে এসব বনের গাছ কেটে একাধিক ট্রলারে বোজাই করে ইট ভাটায় পাটানো হচ্ছে। প্রশাসনের কেউ আসে না,জানতে চাইলে বলেন,আসে আবার দেখে চলে যায়।
অপরদিকে এটা শুধু এগুলো নয় জেলার প্রায় ইটভাটা গুলো জ্বলানি হিসেবে কাট ব্যবহার করছে। তবে চরফ্যাশন, লালমোহন,মনপুরা,তজুমদ্দিনে এর সংখ্যা বেশি। এছাড়া বেশকিছু ইটভাটার মালিকরা গাছ কাটার জন্য ইটভাটা গুলোতে কাট ফাড়ার জন্য স্ব মিল বসিয়ে নিয়েছে।এর ফলে আশপাশের বসবাসকারীদের স্বাসকস্ট আর গাছ পালায় ফল ফলাদী না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ছোট এসব চিমনি দিয়ে বের হওয়ার দুষিত ধোয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়।
ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে কাট ব্যবহার করার কথা স্বিকার করে নিয়েছেন আব্দুল্লাহপুর ফকিরহাট এলাকার অপর ইটভাটা ফাহিম ব্রিকস এর ম্যানেজার মো: জাহাঙ্গীর আলম। ঐ ভাটায় গিয়ে দেখা যায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা থেকে কাট নামাচ্ছে। পাশেই স্ব মিল। তার মতে বেশির ভাগ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসেবে কাট ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে খরচ অর্ধেকে চেয়েও কম। একলাখ ইট পুরতে কয়লায় খরচ হবে ৪লাখ ৪২হাজার টাকা আর কাট দিয়ে পুরতে দরকার ২লাখ ৩২হাজার টাকা। ১৭টণ কয়লার বিপরীতে কাট দরকার ১৫শ মণ। একটি ইটভাটায় ৭০লাখ ইট পুরতে ১লাখ ৫হাজার মণ কাট পুরতে হচ্ছে একটি ইট ভাটায়। পুরো জেলার ইটভাটার হিসেবে ভয়ংকর অবস্থা। এসব কাট সংরহ করতে সরকারী ভাবে করা সংরক্ষিত বনায়নকেই নিরাপদ জ্বালানী হিসেবে বেছে নিচ্ছে প্রায় ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সরকারী হিসাবে জেলায় ১১২টি ইটভাটার তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টি বৈধ আর ৩৪টি অবৈধর তালিকায় রয়েছে। এর বাহিরেও আরো একাধিক ইটভাটা রয়েছে যা সরকারী তালিকায় নাম নেই। এছাড়া একটির কাগজপত্র দেখিয়ে একাধিক ইটভাটা রয়েছে। বৈধতার মধ্যে আবার বহ ইটভাটা রয়েছে যাদের ২০১৫ ও ১৬ সালের নবায়ন হলেও এর পরে আর নবায়ন করা হয়নি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর এর তালিকায় রয়েছে ৯৮টি। তবে বৈধ আর আবৈধ যাই আছে প্রায় সব গুলোতেই জ্বালিনি হিসেবে কাট ব্যবহার করছে।
মো: তোতা মিয়া,সহকারী পরিচালক,পরিবেশ অধিদপ্ত,ভোলা বলেন,৯৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি অবৈধ এবং এরা চিমনি ব্যবহার করছে বলে স্বিকার করে নিলেন। অবৈধ ইটভাটা এবং কাট ব্যবহার করা ইটভাটা গুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে উল্লেখ করে বলেন,এধারা অব্যাহত থাকবে। তবে নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে বলেও স্বিকার করেন।
ছবির ক্যাপসন: ভোলার চরফ্যাশনের ইট ভাটা গুলোর বিভিন্নধরনের ছবি এবং ঢালচর বনে গাছ কেটে ফেলে রাখার ছবি।