বিএনপির প্রার্থীদের দাবি শীঘ্রই আন্দোলন

0
286

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ, কিন্তু সেই নির্বাচনে সরকারি কৌশলের কাছে পরাজিত হতে হলো। নেত্রীকে মুক্ত করতে পারা গেল না। আমরা আন্দোলন চাই। খালেদার মুক্তির দাবিতে এখনই আন্দোলনের ঘোষণা দিতে হবে। ক্ষমতাসীনদের সময় দেওয়া যাবে না। দিলেই তারা পেয়ে বসবে।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের নিয়ে এক ‘জরুরি’ বৈঠকে এসব বক্তব্য ও দাবি ওঠে। বৈঠকটি ছিল বিএনপি জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের সব প্রার্থীকে নিয়ে। তবে বৈঠকে জামায়াতের ২২ প্রার্থীর কাউকে দেখা যায়নি। উপস্থিত ছিলেন না গণফোরামের দুই নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান।

এঁদের মধ্যে সুলতান মনসুর দেশে থাকলেও কিছুটা অসুস্থ হওয়ায় বৈঠকে যেতে পারেননি। অন্যদিকে অনেকবার চেষ্টা করেও মোকাব্বির খানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম দাবি করেন, আন্দোলন বা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে তাঁরা বৈঠকে যাননি, বিষয়টি এমন নয়। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং আগামী বৈঠকে অবশ্যই অংশ নেব। তা ছাড়া ২২ প্রার্থীর মধ্যে আটজন কারাগারে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রার্থীদের তোপের মুখে ছিলেন উপস্থিত নেতারা। বৈঠকের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাগত বক্তব্যে প্রার্থীদের কাছে তাঁদের নিজ নিজ এলাকার ভোটের পরিস্থিতি এবং পরবর্তী করণীয় কী হতে পারে তা বিস্তারিতভাবে বলতে অনুরোধ করেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে ফখরুল জানান, তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে স্মারকলিপি দিতে যাবে। এই সিদ্ধান্ত শোনার পরপরই সভায় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। মহাসচিব যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী বলতে থাকেন, ‘আমাদের কথা বলতে দিতে হবে।’

মাদারীপুর থেকে মনোনয়ন পাওয়া আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যদি আপনারা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ডেকেছেন কেন? সবার কথা শুনতে হবে।’ এ সময় পেছন থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী তাঁর এই কথাকে সমর্থন দিয়ে বলেন, ‘আপনারা বলেছেন, এই নির্বাচন নেত্রীকে মুক্তির নির্বাচন। কিন্তু সরকার কৌশলে জোর করে জয়ী হয়েছে, এটা সবাই জানে। এর পরও আমরা কেন বসে আছি? নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আন্দোলন চাই। ক্ষমতাসীনদের সময় দিলে এরা পেয়ে বসবে। আর এক সেকেন্ডও বসে থাকলে চলবে না।’

এ সময় আজিজুল বারী হেলাল বলেন, ‘সাত দফার কোনোটাই সরকার মানল না। তার পরও নির্বাচনে অংশ নিলেন। নেত্রীকে মুক্ত করতে পারলেন না। এখন বলছেন, আন্দোলন হবে। কিন্তু কবে?’

তাঁর এই বক্তব্যের পরপরই ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর কথা বলেন। নির্বাচনে পরাজয়সহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “স্থায়ী কমিটির সবাই কেন বৈঠকে উপস্থিত নেই তা জানতে চাই। নির্বাচনের দুই দিন আগে মাঠের পরিস্থিতি ভালো নয় জানানো হলেও কেন্দ্র থেকে ‘ভালো খবর আছে, টিকে থাকুন’—এমন কথা বলা হয়েছে, যা দুঃখজনক।” তিনি বলেন, তাঁদের অনেক কথা আছে। কথা বলতে দিতে হবে।

সূত্র মতে, এই পর্যায়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, এটি ঐক্যফ্রন্টসহ সব দলের বৈঠক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বিষয়টি দলীয় ফোরামের বিষয়। শিগগিরই দলীয় ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সবার কথা শোনার সুযোগ থাকবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ জানান, আগামী সাত দিনের মধ্যে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার জন্য প্রত্যেক প্রার্থীকে নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রত্যেক প্রার্থীই তাঁদের মতো করে তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করেছেন, সেগুলোর সঠিকতা নিশ্চিত করেই মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জের প্রার্থী জি কে গউছ বৈঠকে বলেন, ‘আমাদের কথা বলতে দিন। এখন আমাদের করণীয় কী, তা ঠিক করতে হবে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, তাদের মুক্ত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক নারীর ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় সেখানে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর দাবি জানান তিনি।

জানা গেছে, বৈঠকে মাত্র পাঁচ-ছয়জন তাঁদের বক্তব্য দিতে পারেন। তাঁরা প্রত্যেকেই বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার কারণে নির্বাচনের দুই বা এক দিন নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি রাখলে ভালো হতো। আমরা যেহেতু অনুমান করতে পারছিলাম নির্বাচন কী হচ্ছে, তাই সংক্ষিপ্ত হলেও একটি আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করা যেত। জ্বালাও-পোড়াও না করে ইসি ঘেরাও বা পদযাত্রার মতো কর্মসূচি হতে পারত।’

সূত্র জানায়, এ সময় মহাসচিব প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছে তা আমার বা স্থায়ী কমিটির একক সিদ্ধান্ত না। এসব বিষয়ে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবগত।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলনের যাত্রা শুরু হলো। প্রার্থীদের ক্ষোভ নিরসন করতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বিএনপি নিজস্ব প্রার্থীদের নিয়ে গুলশান কার্যালয়েই আবার বসবে।’

জানা গেছে, বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘আমরা যেহেতু এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি, ফলে কারো শপথ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এর পরও কেউ যদি শপথ নেয়, তাহলে সেটা জাতির সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।’

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘৩০ তারিখ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আমি শেখ হাসিনাকে জননেত্রী বলতাম। ওই দিনের পর থেকে জননেত্রী বলা প্রত্যাহার করে নিলাম।’

সকাল ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ফখরুল বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শপথ তো পার হয়ে গেছে, প্রত্যাখ্যান করলে শপথ থাকে নাকি আর? আমরা শপথ নিচ্ছি না, পরিষ্কার করে বললাম।’

তিনি জানান, সারা দেশে নির্বাচনের দিন ‘অনিয়মের’ বিভিন্ন অভিযোগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনর্নির্বাচনের দাবিসংবলিত স্মারকলিপি নির্বাচন কমিশনে দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের সব প্রার্থীকে আলাদাভাবে নির্বাচনের অনিয়ম ও কারচুপির বিষয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বৈঠকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত পাঁচজনসহ মোট ১৭৮ জন প্রার্থী অংশ নেন। তবে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুজন ছিলেন না। বৈঠকের পর মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যায়।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি ছাড়াও জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, খেলাফত মজলিস, এনপিপি ও লেবার পার্টির প্রার্থীরা ছিলেন।

ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে বৈঠকে বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, জয়নুল আবদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, মিজানুর রহমান মিনু, আমিনুল হক, আবদুস সালাম, শাহজাহান মিয়া, ভিপি জয়নাল, হারুনুর রশীদ, আসাদুল হাবিব দুলু, আনোয়ারুল আজীম, শামা ওবায়েদ, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, আলমগীর কবির, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সুলতান মাহমুদ বাবু, রফিকুল ইসলাম হিলালী, শরীফুল আলম, জালাল উদ্দিন, আজিজুল বারী হেলাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জি এম সিরাজ, সাখাওয়াত হোসেন বকুল, জহিরউদ্দিন স্বপন, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও খায়রুল কবীর খোকন কারাগারে থাকায় তাঁর পক্ষে স্ত্রী শিরিন সুলতানা, জাহিদুর রহমান, মাসুদ অরুণ মেহেদি, সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকী, নবী উল্লাহ নবী, মোরশেদ মিল্টন, পারভেজ আরেফীন সিদ্দিকী, রুমানা মাহমুদ, আমিনুল ইসলাম আলিম, সেলিম রেজা হাবিব, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, সৈয়দ ফয়সল আহমেদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, জি কে গউছ, আবু তাহের তালকুদার, কায়সার কামাল, আনোয়ারুল হক, তাহসিনা রুশদির লুনা, লুত্ফর রহমান কাজল, মুন্সি রফিকুল আলম, খন্দকার মুক্তাদির, মোশাররফ হোসেন, শফি আহমেদ চৌধুরী, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আসাদুজ্জামান, শাহ রিয়াজুল ইসলাম, একরামুজ্জামান, আবু সুফিয়ান, মিল্টন বৈদ্য, আনিসুর রহমান খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া শাহ আবু জাফর, খোন্দকার আখতার হামিদ ডাবলু, মো. মোশাররফ হোসেন, মো. আলী সরকার, তাজভীরুল ইসলাম, টি এস আইয়ুব, সাইফুর রহমান রানা, মো. হানিফ, আনোয়ারুল ইসলাম, আলী নেওয়াজ খৈয়াম, এমদাদুল হক ভরসা, সাহাদাত হেসেন, মাসুদা মোমিন, সালমা আলম, রফিকুল ইসলাম, সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা, সালাহ উদ্দিন সরকার, কাজী নাজমুল হোসেন, শাহ শহীদ সারোয়ার, আবদুল খালেক, মজিবুল হক, মো. ইউনুস, ফাহিম চৌধুরী, শামীম আরা বেগম, আহসান উল্লাহ হাসান, নসরুল হক সাবু, ওয়ারেস আলী মামুন, আজহারুল ইসলাম মান্নান, লায়ন হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম, মনি স্বপন দেওয়ান, কনক চাঁপা, সাচিং প্রু, ফরহাদ হোসেন, আজাদ, ফজলুর রহমান, আবু ওহাব আখন্দ, মাহমুদুল হক রুবেল, এম নাসের রহমান, আবুল ভায়ের ভূঁইয়া, আশরাফ উদ্দিন বকুল ও লুত্ফর রহমান খান আজাদ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

শরিকদের মধ্যে জিএসডির আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন, শহীদউদ্দিন মাহমুদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, ইকবাল সিদ্দিকী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, আমসা আমিন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বৈঠকে অংশ নেন। তবে বিজেপির প্রার্থী ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এবং এলডিপির পাঁচ প্রার্থীর কাউকে দেখা যায়নি। জানতে চাইলে এলডিপির চট্টগ্রাম-৭ আসনের প্রার্থী মো. নুরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, এলডিপি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করার পর জোটের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এই বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

LEAVE A REPLY