আরিফ উদ্দিন রনি,বরিশাল থেকে ।। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে দলটি কোনো আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমরা নির্বাচন চাই। তবে সেই নির্বাচন হতে হবে মুক্ত খালেদা জিয়াকে সাথে নিয়ে নির্বাচন। আমাদের এখন একটাই দাবি, আর তা হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাঁর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম আলোচনায় যাবে না বিএনপি।
আজ শনিবার বিকেলে বরিশালের হেমায়েতউদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্রের জন্যে, দেশের জন্যে, দেশের মানুষের জন্যে আন্দোলন করতে গিয়ে লড়াই করতে গিয়ে আজ কারা প্রকোষ্ঠে দিন কাটাচ্ছেন আপসহীন নেত্রী, বাংলার মানুষের ভালোবাসা আর ভরসার মানুষ বেগম খালেদা জিয়া। তাঁকে মুক্ত না করে আমরা ঘরে ফিরব না। আর সেজন্যে সব ধর্ম-বর্ণ আর মতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালে অনুষ্ঠিত বিএনপির সবচেয়ে বড় জমায়েত। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি বিভাগের প্রায় সবকটি জেলা থেকেও দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে যোগ দেন এই সমাবেশে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আদায়ের জন্যে লড়াই করছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের জন্যে তিনি তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন। ছোট সন্তানকে হারিয়েছেনে। বেঁচে থাকা অপর সন্তান বিদেশে নির্বাসিত। লড়াই করতে গিয়ে নিজের ভিটে বাড়ি হারিয়েছেন। এদেশের মানুষের বেঁচে থাকা আর গণতন্ত্রের লড়াই লড়তে গিয়ে আজ তাঁকে নির্মম ষড়যন্ত্রে কারাবরণ করতে হচ্ছে। তাঁকে এমন একটি কারাগারে রাখা হয়েছে যেটি পরিত্যক্ত। বিশাল সেই কারাগারে তাঁকে ঠিকমত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। আমি শুক্রবার তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, সরকারি কোনো হাসপাতালে নয়, তাঁকে যেন বেসরকারি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এই স্বৈরাচারী সরকার তাঁকে সেই সুযোগটুকুও দেয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। কারণ মানুষের বেঁচে থাকা আর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার ভয় পায়। তাই তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁকে ভয় পায়। কারণ এই সরকার জনগণের সরকার নয়। ২০১৪ সালে জোর করে ক্ষমতায় এসে এখন তারা বন্দুকের নলের জোড়ে ক্ষমতায় বসে আছে। এই ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করা নেত্রীকে কারাগারে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করা হয়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে এই সরকার আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে। গাজীপুরে পুলিশ কাস্টডিতে আমাদের ছাত্রদলের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী আজ জেলে। জেলখানার গেটে শিশু দাঁড়িয়ে থাকে বাবার মুক্তির অপেক্ষায়। আমাদের প্রাণের নেতা তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করা রাখা হয়েছে। কথিত দুর্নীতির মামলায় তাঁকেও ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অথচ এর আগে একই মামলায় তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল। সেই রায় দেওয়া বিচারক আজ দেশছাড়া। পুনরায় মামলা তুলে তাঁকে অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশ আজ ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দেশকে বাঁচাতে, স্বাধীনতাকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে, গণতন্ত্রকে পুনঃরুদ্ধার করতে আমাদের শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করতে হবে। সর্বোপরি শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে আন্দোলন করে দেশ নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। আজ আমাদের একটাই দাবি, আর তা হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। ন্যায়বিচার নেই। ব্যাংকের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম, গ্যাসের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে। ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৭০ টাকাতেও এক কেজি চাল কিনতে পারছে না মানুষ। বলা হচ্ছে দেশ নাকি উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। কিন্তু কোথায় উন্নয়ন? দেশের মানুষের তো কোনো উন্নয়ন হয়নি। তবে হ্যা, উন্নয়ন হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উন্নয়ন হয়েছে। তাঁরা ফুলে ফেপে উঠেছেন। দেশনেত্রী বলেছেন, এই লড়াই মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। গণতন্ত্রকে রক্ষার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। নয়তো আমরা আর আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম গোলাম হয়ে থাকব। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করি। গণতন্ত্রকে রক্ষা করি। দেশকে বাঁচাই। এই আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো উপায় নেই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশে ৭১ হাজার মামলা, ১৮ লক্ষ আসামি। আপনাদের এই বরিশালেও পুলিশ আপনাদেরকে চেজ করছে, তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। আপনাদেরকে ঘরে থাকতে দেয় না। বরিশালের বিভিন্ন জেলায় জেলায় আপনাদেরকে পুলিশ তাড়া করে বেড়ায়। আজকের এই জনসভাতেও আপনাদেরকে পুলিশ তাড়া করেছে। জনসভা করতে দিচ্ছে না। আমরা যদি ডিসিপ্লিনড না হই, আমরা যদি সঠিকভাবে শৃঙ্খলার সঙ্গে এগুতে না পারি, তাহলে এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারব না।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।