ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : অকথ্য নির্যাতন আর সেনাবাহিনীর নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে প্রথম ধাপে এক লাখ রোহিঙ্গা নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আজই (শুক্রবার) এক লাখ রোহিঙ্গার একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ (শুক্রবার) দুপুরে কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গাসহ নতুন পুরাতন মিলিয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার সরকার যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিরাপদে এবং সসম্মানে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে। সে লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ।
সরকারের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা। রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জমিরুদ্দিন বলেন, আজ বা কাল রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে হবে, আর মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতেই হবে। তার আগে, ফিরে গিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে নিজ বাসস্থানে বসবাস করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে প্রত্যাবাসন ফলপ্রসু হবে না। কারণ এখনও সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় অত্যাচার নির্যাতন চলছে। জোর করে অন্য দেশ থেকে আগমণকারী হিসেবে এনভিসি কার্ড নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট থেকে আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৫৪০ জন। অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
বিশ্ব জনমতের চাপে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গেলো ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা অনুযায়ী, গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। সে অনুযায়ী দু’দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের দেয়া তালিকা যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া শুরু করবে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পররাষ্ট্রসচিব মোঃ শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, প্রত্যাবাসনের জন্য মাঠপর্যায়ের চুক্তি (ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট) চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এরআগে, মিয়ানমারের অনিবন্ধিত নাগরিক-বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) ১৭তম সভায়, রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় জানানো হয়, এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৯ লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গার একটি ডেটাবেইস তৈরি করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান আছে।