বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে ৩৯৫টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আর রাজশাহীর বাঘায় বিকেলের চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সকালেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায়। পরে বিকেলে পরীক্ষা শুরুর পর দেখা যায়, সকালে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে মূল প্রশ্নপত্র।
বরগুনা সদর উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৫৫টি। এসব বিদ্যালয়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম শ্রেণির পরিবেশ পরিচিতি ও চতুর্থ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে ১২ ডিসেম্বর রাতেই এই দুই বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল এ দুই বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ১২ ডিসেম্বরের চতুর্থ শ্রেণির ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
সদর উপজেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, সদরের তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।
বেতাগী শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্র বলেছে, এই উপজেলায় দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে ১৪০টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গতকালের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গত শুক্রবার রাতে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গত শনিবার রাতে পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও বেতাগী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিকেলের পরীক্ষার প্রশ্ন সকালে হাতে হাতে
রাজশাহীর বাঘার মনিগ্রাম এলাকায় গতকাল বেলা ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে হাতে চতুর্থ শ্রেণির গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন। অনেকে গৃহশিক্ষকের কাছে গিয়ে প্রশ্নগুলো নিয়ে অনুশীলন করছে। প্রশ্নপত্রের ওপরে লেখা রয়েছে ‘বার্ষিক পরীক্ষা ২০১৭, বাঘা, রাজশাহী’। এ সময় একটি প্রশ্নপত্র নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয় এবং বিষয়টি তখনই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বাঘা থানা শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান আরাকে জানানো হয়। তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। বিকেলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, সকালে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে গেছে।
বিকেলে আবার যোগাযোগ করা হলে আহসান আরা প্রথম আলোকে বলেন, সকালে অভিযোগ পাওয়ার পর মনিগ্রামে দুটি কোচিং সেন্টারে লোক পাঠিয়েছিলেন তিনি। কোচিং সেন্টার দুটি বন্ধ পাওয়া গেছে। কোনো স্কুল হয়তো বিকেলের পরীক্ষা সকালেই নিয়ে নিয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন। ওই স্কুলের প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের হাতে চলে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সন্তানের হাতে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র দেখে উদ্বিগ্ন এক অভিভাবক মুঠোফোনে বলেন, ‘এই কোমলমতি শিশুদের প্রশ্নই যদি ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে বলতেই হবে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই পচন ধরেছে।’