আদিল হোসেন তপু, ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। আসছে ঝড়ের মৌসুম। কিন্তুু উপকূলীয় জেলা ভোলার চরাঞ্চলের মানুষেরা আতষ্কে রয়েছে। কারন একটাই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকা। দুর্যোগ ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে মানুষদের। অন্যদিকে যেগুলো রয়েছে সেগুলো পরিত্যাক্ত, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।বিশেষ করে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী চরাঞ্চলের দুই লাখ মানুষ বসবাস করে। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরের বাসিন্দাদের প্রায় ৮০ ভাগ ঝড়-বাদলে অরক্ষিত থাকলেও কার্যকর নিরাপধে শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
অবশ্য জেলা প্রশাসক মো: মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানালেন, চরাঞ্চলের অসহায় মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন করে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করা হচ্ছে ও মজিব কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনার কথা।
সররোজমিন ঘুরে যানা যায় যে, অব্যাহত নদী ভাঙনের কারণে ভোলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে দিন দিন জনবসতির সংখ্যা বাড়ছে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যবর্তী অর্ধশতাধিক চরে প্রায় ২ লাখ মানুষ বাস করে।
এর মধ্যে কলাতলীর চর, মাঝের চর,চর জহির উদ্দিন,চর নিজাম, মদন পুর, নেয়ামতপুর,হাজিপুর, চর নাসরিন, ডালচর ,চর মোজাম্মেল সহ জনবসতি আছে এমন ২০টি চরে পর্যপ্ত কোন আশ্রয়কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার) বা মাটির কিল্লা নেই। এই চরগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ যুগ যুগ ধরে ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।
ধনিয়া ইউনিয়নের জলিল মাষ্টার জানায়, জনসংখ্যার অনুপাতে যথেষ্ট সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্র নির্মাণ না করায় আতঙ্ক দানা বাঁধছে মানুষের মনে। বর্তমান সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্রগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। বিশেষ করে স্যানিটেশন ব্যবস্থা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দ্রুত এগুলো তালিকা করে সংস্কার করা উচিত। আর যে খানে জনবসতি বেশি সেখানে আরো সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন করা উচিত।
মদনপুরের লতু পাটারী জানায়, উপকূলের উপর দিয়ে সিডর, আইলা, রেশমি, মহাসেন, রোয়ানু সহ অসংখ্য ঝড় বয়ে গেলেও উপকূলবাসীর জন্য আজও নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার। এতে দুর্যোগকালীন সময়ে চরম অনিরাপদ হয়ে উঠেছে জেলার দুই লাখের অধিক উপকূলবাসীর জীবন।
এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপকূলের মানুষ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে তারা। জেলায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার ও মাটির কিল্লা না থাকায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারছেনা। দুর্যোগকালীন সময়ে তারা থাকছেন চরম অনিরাপদ ও ঝুঁকিতে।
কলাতলির গ্রাম ডাক্তার মামুন জানায়, সাইক্লোন সিডরের পর বিভিন্ন এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেগুলোর ধারণক্ষমতা খুব কম। একটি সাইক্লোন শেল্টার গড়ে ছয়-সাতশ লোক ধারণ করতে পারে।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই কেন্দ্রগুলোতে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ জমা হয়। তখন গাদাগাদি করে থাকতে হয়। আবার কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। অনেকগুলো আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র যাওয়ার রাস্তা খুব খারাপ। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী ( সিপিপি) এর উপ-পরিচালক মোঃ সাহাবুদ্দিন জানালেন, চরাঞ্চল যে পরিমান সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। সাইক্লোন শেল্টার এর অভাবে মোট জনসংখ্যার অর্ধেককেই শেল্টার বাইরে থাকতে হয়। তাই আরো প্রায় ২০০ সাইক্লোন শেল্টার নিমার্ন করা দরকার।
ভোলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারী মো: আজিজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন চরের মানুষকে উদ্ধার করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত নৌ যানের ব্যবস্থানেই। এমনকি আমাদের সেচ্ছাসেবকদের লাইফ জ্যাকেট সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম এর অভার রয়েছে বলে জানান।
এতো সংকটের পরেও আশার কথা হলো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ বরিশাল অঞ্চল এর আয়োজন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার উপকূলের জেলেদের নিরাপথ রাখতে ও দুর্যোগকবলিত মানুষকে সচেতন করতে ভোলার মনপুরায় ২০০ শ জেলেদের মাঝে জীবনরক্ষাকারী বয়া বিতরন ও দুর্যোগ মহড়া’র মাধ্যমে উপকূলের দুর্যোগ কবিলত মানুষের সচেতনা সৃষ্টি করতে কাজ করছে।
কারিতাস বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক মোস্তাফা কামাল জানায়, দুর্যোগের আগে ও পরে কি ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েন গ্রামের মানুষ সে চিত্রই তুলে ধরে ঘুর্নিঝড় ‘মহড়া’র মাধ্যমে। এরমধ্যে দিয়ে সাগর উপকূলের দুর্যোগ কবিলত মানুষে কিছুটা সচেতন সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তিনি।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক সাংবাদিকদের জানায়, চরাঞ্চলের বিপদগ্রস্ত মানুষদের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনার জন্য আমাদের ৬০০ মতো সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন চরে মজিব কেল্লা তৈরি করা হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরো আরো ২১ টি নিমার্ন করার হচ্ছে।
সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যেতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধাসহ গৃহপালিত পশুপাখি রাখার সুব্যবস্থা থাকে, এখন থেকে এমন ডিজাইনে অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেয়া হবে বলে জানান।
উল্লেখ্য, ৫০টি সাইক্লোন শেল্টার ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের সিডর, আইলা ও মহাসেন, রোয়ানু সহ ছোট-বড় অন্তত ২০টি ঝড়ে শতাধিক মানুষরে প্রাণহানি ঘটেছে। ঝড়ে উপকূল লন্ডভন্ড হয়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হলেও আজও উপকূলের মানুষ অনিরাপদ। তাই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করার দাবি উপকূল বাসীর।