দৌলতখান প্রতিনিধি।।ভোলার দৌলতখানের মধ্যমেঘনার চর হাজিপুর ইউনিয়নে দুস্থ ভ‚মিহীণদের জন্য নির্মিত ১২০ টি ঘর উপকারভোগীদেরকে বন্দোবস্ত দেওয়ার আগেই ঘূর্নিঝড় আম্ফান ও নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এসব ঘরের ঢেউটিন, লোহার এ্যাঙ্গেল,আরসিসি খুঁটি,টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন মালামাল রাতের আঁধারে লোপাট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তরা হলেন স্থানীয় খালেক পাটোয়ারীর ছেলে মাকসুদ মাঝি ও মনু মীরের ছেলে জাহাঙ্গীর। গত মঙ্গলবার রাতে এসব মালামাল ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলারে করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে। পরে মাকসুদ মাঝি ও তার ভাইয়েরা প্রায় চার লাখ টাকার মালামাল নিয়ে সটকে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সোহাগ ও মিজানুর রহমান জানান, গবাদি পশু খুঁজতে গিয়ে রাতের আঁধারে টর্চের আলোতে মাকসুদ মাঝি ও তার ভাইদেরকে স্তুপ করা গুচ্ছগ্রামের আবাসনের বিধ্বস্ত ঘরগুলোর টিন, রড, লোহার এ্যাঙ্গেলসহ বিভিন্ন মালামাল একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে তুলতে দেখেন। এ সময় তারা বাঁধা দিলে মাকসুদ মাঝি ও তার ভাইয়েরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের দিকে তেড়ে আসেন। তারা আরও জানান, এ চক্রটি গুচ্ছগ্রামের সরকারি মালামাল দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে পাচার করে নিচ্ছে।
হাজীপুরের ইউপি সদস্য মিজান ও আবু তাহের জানান, তারা ঘটনার সময় রাতে বাজারে আসারপর হইচই আওয়াজ শুনতে পান। পরে জানতে পারেন মাকসুদ মাঝি ও তার ভাইয়েরা গুচ্ছগ্রামের বিভিন্ন মালামাল ট্রলারে করে নিয়ে যায়। তারা আরও বলেন, সরকার সুবিধাভোগীদের এসব ঘরগুলো এখনও বুঝিয়ে দেয় নাই। সরকারি মালামাল এভাবে লোপাটের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে অভিযুক্ত মাকসুদ মাঝি অবশ্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই দিন চরে ছিলাম না। অন্যদিকে একাধিক সূত্রের অভিযোগ ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেনের ভাতিজা জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সময়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে গুচ্ছগ্রামের বিধ্বস্ত ঘরের মালামাল সরিয়েছে। জাহাঙ্গীর অবশ্য এ অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে ছাদেক মাঝি আমার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চর থেকে কিছু মালামাল এনেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাজিপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর আমার আপন নয় দুর সম্পর্কের ভাতিজা। তিনি বলেন, এ ঘরগুলো ২০১৯ সালে নির্মান করা হলেও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে উপকারভোগীদেরকে অদ্যাবধি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। আবেদনকারীরা কবে নাগাদ এ ঘরগুলো পাবেন তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদকের সামনেই তিনি ওই ইউপির চেয়ারম্যানকে ফোন করে মালামালগুলোর নিরাপত্তায় চৌকিদার নিয়োগের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে উপজেলার হাজিপুর চরে ৪২০ টি দুস্থ পরিবারের পূনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বরাদ্দের আওতায় ৭ টি গুচ্ছ গ্রামে ৪২০ টি ঘর নির্মান করা হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মান ব্যয়ধরা হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৪২০ টি ঘর নির্মানে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি গুচ্ছ গ্রামে ২০০ থেকে ৩০০ টন চাল বা গমের মূল্য মান টাকার মাটির কাজ করা হয়।