মানুষের কল্যাণে নিজ সম্পদ থেকে কিছু ব্যয় করা একটি মহৎ আমল। প্রকৃত মুমিন এ আমলে অধিক তৎপর থাকে। সামর্থ্যবানদের জন্য শরিয়ত নির্ধারিত আবশ্যকীয় দান ছাড়াও যে কারো সাধারণ দান-সদকা আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই প্রিয়। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সামর্থ্য অনুযায়ী গরিব ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকে সবার। কিন্তু দানকৃত বস্তু, দানের উদ্দেশ্য ও তার খাত যথাযথ না হলে দানের সওয়াব পরিপূর্ণ পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে দান অর্থ খরচ ছাড়া আর কিছুই হয় না। যেভাবে দান করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো—
হালাল সম্পদ হওয়া
দান করতে হবে হালাল অর্থ থেকে। হারাম সম্পদ থেকে কোটি টাকা দান করলেও সওয়াবের আশা করা যাবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা হালাল ও পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা যা উপার্জন করো এবং যা আমি তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, সেখান থেকে পবিত্র বস্তু ব্যয় করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৭)
সুতরাং হারাম ও অপবিত্র বস্তু দান করলে তা কবুল হয় না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০১৫)
উত্তম জিনিস দান করা
যে জিনিস পুরনো কিংবা অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে, তা দান করার চেয়ে পছন্দের সামান্য জিনিস দান করা ভালো। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কখনো কল্যাণ লাভ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে দান করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)
হাদিসে এসেছে, আউফ ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুল (সা.) মসজিদে আমাদের কাছে এলেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। মসজিদে আমাদের এক ব্যক্তি নিকৃষ্ট মানের একগুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ওই খেজুরগুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেন, এর দানকারী ইচ্ছা করলে এর চাইতে উত্তম দান করতে পারত। তিনি আরো বলেন, এর দানকারীকে কিয়ামতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৮)
খাঁটি নিয়তে দান করা
অন্য নেক আমলের মতো দান শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে হবে। লোক-দেখানো বা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকলে তা কবুল হবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১)
অন্যত্র এসেছে, সাদ ইবনে আবি ওয়াককাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যা-ই ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও (প্রতিদান দেওয়া হবে)।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬)
গোপনে দান করা
দান গোপনভাবে করা উত্তম। কারণ এতে লৌকিকতা থাকে না। তবে উৎসাহের জন্য প্রকাশ্যে দান করা যদি কল্যাণকর মনে হয় তাহলে প্রকাশ্যেও দান করা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো, তাহলে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে করো ও অভাবীদের প্রদান করো, তবে তোমাদের জন্য তা আরো বেশি উত্তম…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭১)
কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণির মুমিন আশ্রয় পাবে, তাদের অন্যতম হলেন, ‘ওই ব্যক্তি, যিনি এমনভাবে গোপনে দান করেন যে তার ডান হাত কী খরচ করে, বাম হাত তা জানতে পারে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৩১)
প্রকৃত অভাবীকে দান করা
প্রকৃত অভাবী ও গরিব লোকদের দান করা উচিত। এতে পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যায় এবং প্রাপক ওই দানের মাধ্যমে উপকৃত হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘(অনাত্মীয়) গরিব-মিসকিনকে দান করলে তা সদকা বা (দানের সওয়াব পাওয়া যায়)। আর আত্মীয়-স্বজনকে দান করলে দ্বিগুণ (দানের সওয়াব এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার সওয়াব) হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮৪৪)
সাধ্যমতো যথাসময়ে দান করা
দান করার ইচ্ছা হলে দ্রুত করে ফেলা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কোন দানে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি বলেন, সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার দান করা—যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। দান করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে’। (বুখারি, হাদিস : ১৪১৯)
আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে দান করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : মুদাররিস, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা