ভোলা নিউজ২৪ডটকম।।৭৭ বছর বয়সী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর অন্যতম বিশ্বস্ত এবং প্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রহমানকে তোফায়েল আহমেদই বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাকে রাজনৈতিক সচিব নিয়োগ করেছিলেন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদের একজন সদস্য। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া যিনি পরিচিত ইতিহাসের এনসাইক্লোপেডিয়া বলে। উত্তাল ৬৯-এ যিনি দাবড়ে বেড়িয়েছেন বাংলার পথে প্রান্তরে। যার অঙ্গুলি হেলনে রাজপথ কেঁপে উঠতো। ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসকে যিনি নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে যিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। যার নেতৃত্বে ডাকসু পেয়েছিল অন্য মর্যাদা। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে কারাগার থেকে মুক্তির পর জাতির জনককে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে যিনি এগিয়ে দিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির আসনে অধিষ্ঠিত হতে। আজও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চালিত করছেন নিজকে।
তিনি আর কেউ নন। একজন তোফায়েল আহমেদ। ফিরতে চান রাজনীতির মাঠে। আবারো আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে বলতে চান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা, বলতে চান আওয়ামী লীগের কথা। বিরোধী দলের যুক্তি খণ্ডন করে দরাজ গলায় বক্তব্য রাখতে চান জাতীয় সংসদে। যেতে চান নিজের নির্বাচনী এলাকা ভোলায়। বসতে চান নিজ দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় নেতা তোফায়েল আহমেদ শারীরিক অসুস্থতার কারণে বর্তমানে রাজধানীর বনানীর বাসায় বিশ্রামে আছেন। দেড় মাসেরও বেশি সময় চিকিৎসা নেন দিল্লির মেডান্টা দি মেডিটিডি হাসপাতালে। গত ২২শে অক্টোবর দেশে ফেরেন। এখন বাসায় থেকে নিয়মিত থেরাপি নিচ্ছেন। গত দেড় বছরে তিনি তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে তার দু’বার মৃদু স্ট্রোক হয়েছিল। ভারতে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার আগে জামাতার তত্ত্বাবধানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। বাসাতে তাকে সবসময় দেখভাল করছেন চিকিৎসক মেয়ে ডা. তাসলিমা আহমেদ জামান (মুন্নি) ও জামাতা ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তোফায়েল আহমেদের মেয়ে ডা. তাসলিমা আহমেদ বলেন, বাবা এখন সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে চান, এলাকায় যেতে চান। কিন্তু আমি তাকে আরও কিছুদিন বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে ফোনে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ভোলা থেকে অনেকে ঢাকার বাসায় আসেন। করোনার কারণে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। করোনার কারণে আসলে উনাকে খুব সাবধানে থাকতে বলেছি। তিনি বলেন, আপনারা সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেন খুব দ্রুত আরও সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং সবার মাঝে যেতে পারেন।
তোফায়েল আহমেদের একান্ত সচিব নুরুল আমিন মোল্লা বলেন, দিল্লি থেকে ফেরার পর তিনি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। আশা করি শিগগিরই আবার আগের মতো কাজকর্ম করতে পারবেন। নিয়মিত থেরাপি নেয়ায় শরীরের বাম দিকের দুর্বলতা তিনি অনেকটা কাটিয়ে উঠছেন। অসুস্থ থাকার কারণে সংসদের কয়েকটি অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। এখন চলছে একাদশ সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশন। এ অধিবেশনেও থাকতে পারছেন না। এর আগে সংসদের কোনো অধিবেশন তিনি অনুপস্থিত থেকেছেন এমন নজির নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগের যে ক’জন সিনিয়র নেতা সংসদ অধিবেশনে নিয়মিত তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ। তার অসুস্থতার কারণে প্রায় ৮ মাস ওই কমিটির কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে জানান কমিটি অফিসার বেগম রাহাত আরা ইমাম।
বেগম রাহাত আরা ইমাম বলেন, স্যার এখন অসুস্থ। সুস্থ হয়ে ফিরলে কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। সুস্থ থাকা অবস্থায় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি মেনে প্রতি মাসে অন্তত একবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠক করতেন তোফায়েল আহমেদ। অনেক কমিটির বৈঠক অনিয়মিত হলেও এই কমিটির বৈঠক ছিল নিয়মিত। এদিকে অসুস্থ হওয়ার কয়েক মাস আগে আর্তমানবতার সেবায় প্রতিষ্ঠিত ‘তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশনে’ সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দান করার ঘোষণা দেন ভোলা-১ আসনের এমপি তোফায়েল আহমেদ। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ। মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব।
এ নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জন্য হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, শিক্ষাবৃত্তিসহ আর্তমানবতার সেবামূলক কাজ পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, আমার মায়ের নামে বাংলাবাজারে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছি। যেখানে বৃদ্ধ-নারীদের মায়ের মতো সেবা দেয়া হচ্ছে। শুধু ভোলা নয়, এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারা দেশের অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করা হবে। তিনি বলেন, ভোলার উপশহর বাংলাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে আজাহার ফাতেমা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতাল তোফায়েল আহমেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। মেডিকেল কলেজের দায়িত্বে রয়েছেন তার মেয়ে চিকিৎসক তাসলিমা মুন্নী।