তুরাগ তীরে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বিশ্ব ইজতেমার কাজ!

0
567

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : আর মাত্র ৫ দিন পরই শুরু হচ্ছে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আগামী ১২ জানুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পরই বয়ানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে চলবে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। ইজতেমা ময়দানে স্থান সংকুলানের দিক বিবেচনা করে দেশের ৬৪ জেলাকে দু’ভাগে বিভক্তের মাধ্যমে এবারো অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। তবে এখনো পর্যন্ত মাঠের কাজ অনেক বাকি রয়েছে। আয়োজক কমিটি বলছে, ১২ জানুয়ারি আগেই মাঠের সকল কাজ সম্পন্ন হবে। আর ৪দিন বিরতি দিয়ে ১৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।

শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, শীত এবং কুয়াশা উপেক্ষা করে শত শত মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ইজতেমা ময়দানের বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানোসহ যাবতীয় আনুষঙ্গিক কাজ করছেন। প্রতিদিন ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দল বেধে ইজতেমা ময়দানে এসে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিশাল প্যান্ডেলের কাজ করছেন। ইতিমধ্যেই ইজতেমা ময়দানের সামিয়ানার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১২ জানুয়ারির আগেই ইজতেমা ময়দান মুসল্লিদের জন্য প্রস্তুত থাকবে। জেলা ওয়ারী বিভিন্ন খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান করবেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ভারত, পাকিস্তান, মধ্য প্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইজতেমা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে তবলীগ জামায়াতবন্দী বিদেশী মেহমানরা আসতে শুরু করবেন। মুসল্লিদের যাতায়াতসহ ময়দানে সুযোগ-সুবিধার লক্ষ্যে বিশ্ব ইজতেমা দু’ভাগে ভাগ করে প্রথম পর্ব এবং দ্বিতীয় পর্বে হাজির হওয়ার জন্য তবলীগ অনুসারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখানে সবকিছুই হয়ে থাকে বিশ্ব তবলীগ জামায়াতের সর্বোচ্চ মজলিশে সূরার নির্দেশনা অনুযায়ী।

ইজতেমার ময়দান জুড়ে টানানো হচ্ছে চটের সামিয়ানা। বিদ্যুতের তার, গ্যাসের লাইন ও পানির পাইপ টানার কাজও চলছে একই সাথে। বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন এবং দ্বীনের মেহনত কায়েমের লক্ষ্যে জোড় ইজতেমা থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে ভাগ হয়ে ইজতেমার মাঠে কাজ করছেন। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইজতেমা মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন। মাঠের পূর্ব পাশের অংশ বাঁশের খুঁটি পুঁতা হলেও চটের ছাউনীসহ অন্য কাজ এখনো ধরা হয়নি। পুরনো ওজু গোসলের স্থান ও টয়লেট পরিষ্কার পরিছন্নসহ নতুন করেও তিনতলা টয়লেট নির্মাণ কাজ করছে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এ পর্যন্ত প্যান্ডেলের বেশিরভাগ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, এ ইজতেমার প্রথম পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। ইজতেমা প্যান্ডেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন এবং দ্বীনের মেহনত কায়েমের লক্ষ্যে জোড় ইজতেমা থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে ভাগ হয়ে ইজতেমার মাঠে কাজ করছেন। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইজতেমা মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন। এবার দেশের ৩২টি জেলার তবলীগ জামাতের মুসল্লিরা অংশ নেবেনে। সে জেলাগুলো হলো, ঢাকা, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী,ঝালকাঠি,পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, জামালপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, ফেনী, ঠাকুরগাঁও, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও পিরোজপুর। তবে অঘোষিতভাবে গাজীপুরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে শরিক হবেন।

শুক্রবার দুপুরে তুরাগ তীরে গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিনে স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন দলবেঁধে কাজ করছেন। একদিকে প্যান্ডেলের সামিয়ানা টানানো, বিদেশী মেহমানদের কামরার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে মূল মঞ্চের কাজ করা হচ্ছে। অপরদিকে বাঁশের খুঁটি সাঁটানো শেষে বৈদ্যুতিক তার ও বাতি লাগানো করতে দেখা গেছে। তুরাগ নদী পারাপারের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করছেন। যাতে করে মুসল্লিরা এপার ওপার সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, অন্যান্য বারের মতো এবারো সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও সাদা পোশাকে কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে থাকবে শর্টসার্কিট ক্যামেরা এবং পুলিশ ও র‌্যাবের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কন্ট্রোল রুম, চিকিৎসা সেবা, খাবারের মান নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের মোবাইল কোর্টসহ ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। রোববার সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয় প্রাঙ্গণে জেলার সকল দফতরের প্রধান ও ইজতেমা আয়োজক কর্তৃপক্ষের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই বছর ২ বার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে দেশের ৬৪ জেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ৩২ জেলার তবলিগের মুসল্লিদের দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহণ করছেন। এবছর যারা অংশ নিচ্ছেন তারা আবার ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিবেন।

LEAVE A REPLY