ঘূর্ণিঝড় তিতলি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আতঙ্ক বা ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ ভোর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি গোপালপুরের কাছ দিয়ে ভারতের ওড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর,উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
এর প্রভাবে আাগামী ২ থেকে ১ দিন সারাদেশে মেঘলা আবহাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানিয়েছেন, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় তিতলি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ ভোররাতে গোপালপুরের নিকট দিয়ে ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। আর তাই এ নিয়ে আশঙ্কা বা ভয়ের কোনো কারণ নেই।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কিলোটিার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যেভাবে নামকরণ করা হয় তিতলির
‘তিতলি’ নামটির প্রস্তাব এসেছে পাকিস্তানের কাছ থেকে। হিন্দি ভাষার শব্দ ‘তিতলি’ অর্থ ‘প্রজাপতি’।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষেরা গত কয়েকশো বছর ধরে আটলান্টিক মহাসাগর এলাকায় উৎপন্ন ঝড়গুলোর নাম দিয়ে আসছে। শুরুতে নিজেদের অঞ্চলের ঝড়গুলোকে বিভিন্ন নামে ডাকত তারা। ১৯৪৫ সাল থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে শুরু হয় ঝড়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণ। বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল ঘূর্ণিঝড়ের নাম চূড়ান্ত করে থাকে। পূর্বাভাস দেয়াতে সুবিধা এবং সাধারণ মানুষের কাছে পূর্বাভাস ও সতর্কতা বোধগম্য করতেই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের পাঠানো নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের ঝড়ের নাম চূড়ান্ত করার দায়িত্বটি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন প্যানেলের হাতে ন্যস্ত থাকে। যেমন-উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড়গুলোর নামকরণের দায়িত্ব ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের। এক্ষেত্রে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আট দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড থেকে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তাব করা হয়। প্রতিটি দেশের আটটি করে প্রস্তাবিত নাম নিয়ে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরে বৈঠকের মাধ্যমে মোট ৬৪টি নামের তালিকা তৈরি হয়। আর সে তালিকা অনুযায়ীই পর্যায়ক্রমে ঝড়ের নামকরণ হয়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের সেই তালিকা অনুযায়ীই এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘তিতলি’।