চিকিৎসা সেবায় গতি আনতে ভোলায় সিভিল সার্জেন এর ব্যাতিক্রমি উদ্যোগ

0
1907

অদিল হোসেন তপু। ।

দ্বীপজেলা ভোলার মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র ভোলা সদর হাসপতাল যখন চিকিৎসক সংকট সহ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত, ঠিক তখনই ত্রানকর্তা হয়ে আবির্ভাত হলেন জেলা সিভিল সার্জেন ডা. রথীন্দ্রনাথ মজুমদার। চিকিৎসা সেবায় গতি আনতে নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়ে ইতিমধ্যে হাসপাতালে আগত রোগীদেকাছে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছেন তিনি। এখন হাসপাতালে এসে রোগীরা পাচ্ছেন মানসম্মত সেবা। তার একান্ত প্রচেষ্টায় এখন সব ধরনের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। ক্রমেই সাধারন রোগীরা ভোলা সদর হাসপাতালের প্রতি আস্থা ফিরে পাচ্ছেন। যে হাসপাতালটি এতো দিন নিজেই নানা সমস্যায় জর্জড়িত ছিলো সেটি এখন দক্ষ সিভিল সার্জনের হাত ধরে ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ভোলা সদর হাসপাতাল। ১৯৯৮ সালে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি এর জনবল। ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই খুরিয়ে খুরিয়ে চলছিল হাসপাতালের কার্যক্রম। বর্তমানে হাসপাতালে ২২ জন ডাক্তারের বিপরীতে আছে মাত্র  ৮জন।

এমন নাজুক পরিস্থিতে ভোলা সদর হাসপাতালে ২০১৬ সালে অক্টোবরে মাসে সিভিল সার্জেন পদে দায়িত্ব নেয় দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত ডা: রথীন্দ্রনাথ মজুমদার। ক্রমেই পাল্টাতে শুরু করে ভোলা সদর হাসপাতালের চিত্র। তিনি জানায়, দায়িত্ব নেয়ার পরই জনবল সংকট দূর করার জন্য কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে  জানিয়েও কিছু হচ্ছিল না। ফলে জেলার চিকিৎসা সেবার মান ভেঙ্গে পরার উপক্রম  হয়েছিল। যেসব ডাক্তার ভোলাতে পদায়ন করছে তারাও বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা দেখে আসতে চায় না। এক বছর ধরে কার্ডিওলজী কনস্যালটেন্ট, সার্জারী কনস্যালটেন্ট সহ গুরুত্বপূর্ন ১৪টি পদের ডাক্তার নেই। আবার অনেকেই আসলেও এখান থেকে দ্রুত বদলি হয়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র।

এমন পরিস্থিতিতে আমি চিন্তা করলাম যা জনবল আছে তাদের নিয়েই এই জেলার স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নতি করতে হবে। যে কথা সেই কাজ চালু করলাম বিভিন্ন ডাক্তার ও নার্সদের নিয়ে লেসন লার্নিং প্রশিক্ষন। এর ফলও পেতে লাগলাম দ্রুত। এখন নার্সরাই অনেক রোগ দ্রুত নিরোপন করে ডাক্তারদের জানাচ্ছে। এবং দ্রুত আমরা সেবা দিচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে নার্সদের লেসন লার্নিং প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। সপ্তাহের সোমবার ডাক্তাররা লার্নিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রতিমাসে এক বার করে ৩য় ও ৪ র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষন দিচ্ছি। যার ফলে হাসপাতালে আশা রোগীদের সাথে ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুসর্ম্পক গড়ে উঠেছে। ফলে রোগীরা আর আগের মতো হাসপাতালের সেবা পেতে বিলম্ব হয় না।

শুধু তাই নয় প্রতি মাসের প্রথম রবিবার ভোলা জেলা ৭ উপজেলায় এক যোগে পালন করা হয় ‘ক্লিন হসপিটাল ডে’। এর মাধ্যমে হাসপাতাল অধিকতর পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে সেবা গ্রহীতা সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার প্রতি আরো আস্থাশীল হচ্ছে। এর মাধ্যমে ভোলা সদর হাসপাতাল, পূর্বের চেয়ে অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকছে। এই পদ্ধতিটি এখন সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার জন্য রোল মডেল স্থাপন করছে।

হাসপাতালে আগত রোগী রেহানা বেগম বলেন, আগেও কয়েকবার বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন ডাক্তার ও নার্সরা দায়সারা চিকিৎসা দিয়েছিল। নার্সরা  তো রোগীর সাথে ভালো মতো করে কথা বলতো না। এখন নার্সারা আমাদের সব সময় খোজঁ খবর নিচ্ছে। শুধু তাই নয় ডাক্তারও নিয়মিতভাবে ওয়ার্ড পরিদর্শন করছেন।

হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন শাহরিয়ার জিলন বলেন, আগে হাসপাতালে আসলে নাকে রুমাল দিয়ে ডুকতে হতো। ওয়ার্ড গুলো ছিল ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। এখন সেই জায়গা থেকে অনেকটা পরিত্রান পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে মোটামোটি অনেক ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া পাচ্ছি। এখন টেস্টগুলো স্বল্পমূল্যে হাসপাতালে ভালোভাবে করতে পারলেই হয়।

এব্যাপারে ভোলা জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ভোলা  সদর হাসপাতালে পূর্বে চেয়ে এখন ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। রোগীরা এখন হাসপাতালের স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ ও ভালো চিকিৎসা পাওয়ায় তারা হাসপাতাল মুখি হচ্ছে।  এখানে জনবল সংকট দ্রুত নিরসন করার চেষ্টা করবো। যাতে দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষ এখানেই আরো ভালো চিকিৎসা পেতে পারে।

LEAVE A REPLY