ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানাকে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে মোকলেসুর রহমান জনি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিডি না নেওয়া ও কর্তব্যে চরম অবহেলা দেখানোয় (পিবিআইয়ের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী) সদর থানার ওই সময়ের ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ফিরোজ হোসেন মোল্লা,বর্তমান ওসি এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক (এসআই) হিমেলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেন, মোকলেসুর রহমান জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে পারবেন। এ ছাড়া তিনি ইচ্ছে করলে মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে নিখোঁজের ঘটনায় মামলাও করতে পারবেন। আদালত এই মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি জনি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়,সাতক্ষীরার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মোকলেসুর রহমান জনির নিখোঁজ কিংবা অভিযোগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা বা জিডি না নেওয়ার মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরম অদক্ষতা এবং অবহেলার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মোটেই কাম্য নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তার করা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কর্তব্য যথা সময়ে তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করা। আর নিখোঁজের এ কাজটি কোনো অপরাধী চক্রের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব আরো বেশি। যাতে ভিকটিম ও অপরাধী চক্র উভয়কে খুঁজে বের করে আদালতে উপস্থাপন করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। মানুষ নিখোঁজের অভিযোগ অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায় এড়াতে পারে না।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,সার্বিক অনুসন্ধানে ও থানার রেকর্ডপত্রসহ (জিডি ও হাজত রেজিস্ট্রার) দালিলিক সাক্ষ্য এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় গত ৪ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে জনি নামের কোনো ব্যক্তিকে সাতক্ষীরা থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারপূর্বক আটক রাখা এবং পরবর্তী সময়ে নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে এমন কোনো তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য কর্ম (মামলা/জিডি/তদন্ত/অনুসন্ধান) যথাযথভাবে পালন না করায় আজ পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়ার প্রকৃত ঘটনাটি যেমন উদঘাটিত হয়নি তেমনই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ফলে উক্ত ঘটনায় সদর থানা পুলিশের যেসব সদস্য দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে চরম অদক্ষতা এবং অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এর আগে মোকলেসুর রহমান জনির খোঁজ না পেয়ে তাঁর স্ত্রী জেসমিন নাহার হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস রিট (কারণ দর্শানোর আবেদন) করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও বিচার বিভাগীয় তদন্তের পর পিবিআই তদন্ত করে। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশের আইজির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআইয়ের (খুলনা বিভাগ) বিশেষ পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদারকে প্রধান করে কমিটি করা হয়। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে কমিটি।