চরফ্যাশনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায় বিচারের এক আস্থার প্রতীক গ্রাম আদালত

0
48

ভোলা নিউজ২৪ডটকম।।ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতকে কার্যকরীকরণ এর লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক দাতা সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাগেরহাট জেলায় ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। ভোলা জেলার ০৫ টি উপজেলার (চরফ্যাশন,মনপুরা,লালমহোন,তজুমউদ্দিন,বোরহান উদ্দিন)৪৭ টি ইউনিয়ন অত্র প্রকল্পের কর্মএলাকাভুক্ত।

ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার, উপজেলা সমন্বয়কারী, মোঃ নজরুল ইসলাম জানান যে, চরফ্যাশন উপজেলায় প্রকল্প ভূক্ত ২০ টি ইউনিয়নে বিগত জুলাই-২০১৭ সাল থেকে ডিসেম্বর -২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৯৬০ টি মামলা দায়ের হয়েছে এর মধ্যে উচ্চ আদলত থেকে ৮৫ টি মামলা গ্রাম আদালতে প্রেরন করেছেন এবং নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩২৭৮ টি মামলা ও বাতিল/খারিজ করা হয়েছে ৬৮২ টি মামলা।
তার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হিসাবে বলা যায়,
চরফ্যাশন উপজেলাধীন নজরুল নগর ইউনিয়নের মোঃ ফরিদ মিয়া, ২নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা। মাছের আরৎ থেকে মাছ ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা তার প্রধান পেশা।তার প্রতিবেশী মোঃ মাহাবুল প্যাদার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ জমির সীমানা নিয়ে এবং বিরোধীয় জমিতে অবস্থিত গাছের মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ১৫/০৮/২০১৮ তারিখ প্রতিবাদী লোকজন নিয়ে গাছ কাটঁেত গেলে আবেদনকারী ফরিদ বাধা দিতে গেলে প্রতিবাদীগন লোহার রড দিয়ে আবেদনকারীকে আঘাত করে হাত এবং পিঠে জখম করে।স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়। ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্যদের জানালে তারা মিমাংসা করে দেওয়ার কথা বললেও কোন প্রকার সমাধান না করায় ২৩/৮/১৮ তারিখ মারধর করা, ৬/৭টি রেন্ট্রি এবং আকাশমনি গাছ যার আনুমানিক মূল্য ৩০০০০/- (ত্রিশ হাজার টাকা) জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাওয়া এবং প্রাননাশের হুমকি প্রদান করা এই মর্মে দক্ষিন আইচা থানায একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ০৫/২৩.৮.১৮) এবং তদবির করে ২৪.৮.১৮ চরফ্যাসন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতে মামলা স্থানন্তর করেন যার মামলা নং ৬৯/১৮ (দক্ষিন আইচা)।২৯/১১/১৮ ইং তারিখ বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রাম আদালতে প্রেরনের জন্য আদেশ প্রদান করেন এবং ১০/০১/১৯ তারিখ গ্রাম আদালতে মামলাটি গ্রহন করে নথিভুক্ত করেন যার মামলা নং ০৫/১৯ তারিখ।নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারীকে অবহিত করেন এবং প্রতিবাদীকে সমনের মাধ্যমে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলে উভয়পক্ষ হাজির হয়ে নিজেদের পক্ষে সদস্য মনোনয়ন করে।আবেদনকারীর পক্ষে মোঃ রুহুল আমিন (ইউপি সদস্য) ও আনোয়ার মৃধা ( স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তি), প্রতিবাদীর পক্ষে রেজমিন বেগম (ইউপি সদস্য) ও নেহাল হাওলাদার ( স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তি) এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব রুহুল আমিন হাওলাদারকে নিয়ে গ্রাম আদালত গঠন করে।০৭.০২.১৯ ইং তারিখ শুনানী অন্তে স্বাক্ষী এবং প্রমানের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে প্রতিবাদী গাছ কাটতে গেলে আবেদনকারী বাধা দেয় এবং আবেদনকারীকে রড দিয়ে আঘাত করে ঘটনাটি সত্য কিন্তু ৬/৭টি গাছ কাটার অভিযোগটি বানোয়াট এবং থানায় মামলা দায়ের করার জন্য এভাবে সাজিয়ে লেখা হয়েছে। তাই আদালত আবেদনকারীর চিকিৎসা খরচ বাবদ ৫০০০/- (পাচঁ হাজার টাকা) প্রতিবাদীকে প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেন এবং প্রতিবাদী উপস্থিত আদালতের সামনে আবেদনকারীকে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করিয়া দেন ।
আবেদনকারী বলেন যে,রাগের মাথায় সত্য মিথ্যা বানিয়ে থানায় মামলা করেছি, এ যাবত মামলা চালাতে প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা খরচ করেছি কিন্তু তেমন কিছু করতে পারিনি। কিন্তু গ্রাম আদালতে সত্য বিচার পেয়ে তিনি খুশী।
প্রতিবাদী বলেন যে, ফরিদকে মেরে অন্যায় করেছি,তার শা¯িত সরূপ ৫০০০/- জরিমানা দিয়েছি কিন্তু আমরা যে গাছ কাটিনি সেটা আদালতে প্রমান করতে আমাদের অনেক ঝামেলা হতো এবং অনেক টাকা খরচ হতো, গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ যে তিনি আমাদের এ সকল ঝামেলা থেকে রেহাই করেছেন।

LEAVE A REPLY