ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেটঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনের অপসারণ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয় এক ঘণ্টা।
এদিকে শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করার বিচার দাবিতে ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের অনুসারীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব ঘটনা ঘটে।
শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনের নিয়োগ অবৈধ এবং তিনি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেছেন বলে দাবি করে গতকাল সোমবার তাঁকে অপসারণের দাবি জানান আলমগীর টিপুর অনুসারীরা। এর আগে ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন শিক্ষক আমির উদ্দিন।
আমির উদ্দিন বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনের অপসারণের বিষয়ে দেখা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা। উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে ভাঙচুর শুরু করেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্যের কার্যালয়ের জানালার কাচ ও বেশ কিছু ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়। দ্বিতীয় তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ কামরুল হুদার কার্যালয়ের জানালার কাচ ও বেশ কিছু ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুটি প্রাইভেট কার ছাড়াও ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়। এ সময় শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনের অপসারণ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন ভাঙচুরকারীরা। ভাঙচুর শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা। বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরোধ করে রাখেন। এ ছাড়া দেড়টার দিকে শাটল ট্রেনের হোস পাইপ কেটে দেওয়ায় দেড় ঘণ্টা শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বেলা তিনটায় শাটল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা শেষে অবরোধ তুলে নেন অবরোধকারীরা।
ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতাকারী শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনের অপসারণ দাবিতে আমরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। এক ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরোধ করে রেখেছি আমরা। তদন্ত শেষে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার পরও সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় আমরা শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। অবরোধ পালনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে, ২২ তারিখ পর্যন্ত সেই শিক্ষক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহত থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ভাঙচুর করা হয়নি। আমির উদ্দিনের অনুসারীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগরের নাগরিকদের আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনে আনা উচিত হয়নি। আমরা এ সব সন্ত্রাসীর বিচার সুনিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আহ্বান জানাচ্ছি। ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকবে।’
অবরোধের ছবি তুলতে গিয়ে বাংলাভিশনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শাহজাহান খান লাঞ্ছনা ও মারধরের শিকার হন। শাহজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অবরোধকারীরা আমার ওপর হামলা চালান। তাঁরা অমাকে মারধর করেন। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় প্রক্টর অফিসে আমি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।’
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ আমির উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করার বিচার দাবিতে এবং ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বির অনুসারীরা।
বিক্ষোভ মিছিলটি বেলা সোয়া তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হল থেকে শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।