ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাঁদের মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন। এক নেতাকে তুলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের জন্য দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে আহত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে ঘটনাস্থলে থাকা ছাত্রলীগের নেতারা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, তাঁরা কোনো হামলা বা মারধর করেননি। ছাত্রলীগ দেশের আইন মেনে চলে। তারা আইন নিজের হাতে তুলে নেয় না।
গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে বাধা দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে ১০ জনের মতো আহত হন। আহতরা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে হামলা ও মারধরের ব্যাপারে ছাত্রলীগের নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ অধিকার ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের মানববন্ধনের কর্মসূচি চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস থাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। আজ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতির সময় ফের হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল ১০টার পর থেকে আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন। ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ৩০-৪০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সেখানে আসেন। এর মধ্যে ছিলেন মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান সানি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাঈদ বাবু, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলামিন রহমান, বিজয় ৭১ হলের সভাপতি ফকির আহমেদ রাসেল, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদি হাসান রনি প্রমুখ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার আগেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। তখন আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক রাশেদ আল মামুন সেখান থেকে সরে যান। যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনসহ দুজনকে সেখানে ফেলে মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন নাহার নীলা শহীদ মিনারে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘ফারুককে ছাত্রলীগ নেতা আলামিন রহমানের একটি মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমরা জানি না।’
এ ঘটনার পর সেখানে থাকা ১৫-২০ জন আন্দোলনকারী শহীদ মিনারে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ান। তখন সাঈদ বাবুর নেতৃত্বে ফের হামলা চালানো হয়ে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের শহীদ মিনার থেকে চলে যেতে বলেন।
আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুন নাহার নীলা বলেন, ‘আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। সেখানে হামলা করা হয়েছে। আমরা কি আমাদের কথা বলতে পারব না? প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন দিয়ে দিলে আমরা আর আন্দোলন করব না। আমরা প্রজ্ঞাপন চাই।’
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিলও করে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।