ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট!! আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে সম্ভাব্য নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এখনো আলোচনা শুরু করেনি। তবে নেতাদের ব্যক্তিপর্যায়ে যে আলোচনা, তাঁরা এখন এটাকে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, মেয়র হিসেবে প্রয়াত আনিসুল হক মানুষকে যেভাবে প্রভাবিত করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর মানুষ যেভাবে ভালোবাসা দেখিয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের জন্য পরবর্তী মেয়র পদে প্রার্থী বাছাই কঠিন হয়ে গেছে। আনিসুল হকের মতো কাউকে বাছাই না করতে পারলে ভোটে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে।
তা ছাড়া এই নির্বাচনের পরিবেশ, ভালো-খারাপ সবদিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে। এর ফলাফলের একটা প্রভাব অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে পড়বে। ফলে হঠাৎ হাজির হওয়া এ নির্বাচন সরকারি দলকে কিছুটা ভাবনায় ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার কম্বোডিয়া সফর শেষে দেশে ফিরবেন। কাল বুধবার প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কুলখানি। এরপরই মূলত নতুন নির্বাচন নিয়ে ভাবনা শুরু হবে।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়, আনিসুল হকের মৃত্যুর কারণে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ১৫ (ঙ) ধারা মোতাবেক মেয়রের পদ ১ ডিসেম্বর থেকে শূন্য ঘোষণা করা হলো। এখন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে।
এরই মধ্যে এই নির্বাচনে কারা প্রার্থী হচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি এ নির্বাচনে যাবে। তবে এখনো তারা প্রার্থী নিয়ে কোনো আলোচনা শুরু করেনি। গতবারের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পাশাপাশি আরও কয়েকটি নাম আলোচনায় আছে।
বিএনপি মনে করে, ভোট সুষ্ঠু হলে তাঁরা জিতবে। কারণ গতবার বয়কট করার পরও তাদের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রায় তিন লাখ ভোট পেয়েছিলেন। আর ভোটে জোরজবরদস্তি হলে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়—তাদের এই দাবি আরও শক্ত ভিত্তি পাবে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরও গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে এটা নিয়ে আলোচনা জোরদার হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে আসছে। ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়েও তাঁরা অন্য কোনো চিন্তা করছে না। তবে তাঁদের চিন্তা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। তিনি বলেন, বিএনপি এখনো প্রার্থী নিয়ে আলোচনা শুরু করেনি। এখনো অনেক সময় আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, সাধারণত মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ের আগে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, উত্তর সিটিকে ঘিরেও তা হবে। কিছু প্রার্থী নিজ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে কেউ কেউ এমন আগ্রহ দেখিয়েছেন। আর কিছু নাম সব নির্বাচনেই আলোচনায় থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয় কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়েও আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা আছে। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা কিছু ভেবে রেখেছেন কি না, শেষ পর্যন্ত সেটাই মুখ্য বিষয়। সেটা আগামী এক-দুই সপ্তাহে পরিষ্কার হওয়া যাবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ফারুক খান। তিনি গত সিটি নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ডিএনসিসির নির্বাচন নিয়ে দলে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। স্থানীয় সরকার বিভাগ মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করেছে, এরপর নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার জন্য কাজ করবে। আওয়ামী লীগও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে। তাঁর বিশ্বাস, উত্তর সিটি করপোরেশনে একটা সুন্দর নির্বাচন হবে। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থীকেই মানুষ জয়ী করবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আটটি নির্বাচনী আসন পড়েছে। এই সিটি নির্বাচনের ফল আগামী জাতীয় নির্বাচনে এসব আসনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন নেতা বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন বেশ কিছু নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। মেয়রের নির্বাচন করতে গেলে নতুন ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না এবং সেখানে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে কি না, সে প্রশ্ন এসে যাবে। কারও মনঃপূত না হলে মামলা ঠুকে দিলে নির্বাচন আটকে যেতে পারে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের আগে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও মামলার কারণে দীর্ঘদিন প্রশাসক দিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন চালানো হয়।
অবশ্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাজধানী শহরের নির্বাচন অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করব। আমাদের অবস্থানও ভালো। তবে আমরা এখনো শোকাহত। শোক কাটিয়ে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করব।’
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত ১৬টি ইউনিয়নকে ৩৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর ফলে ঢাকা উত্তরে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে মোট ওয়ার্ড হয়েছে ৫৪টি। আর দক্ষিণে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে মোট ওয়ার্ড হয়েছে ৭৫টি।
নতুন ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা মেয়র পদের উপনির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ এসব ওয়ার্ড গত নির্বাচনের সময় সিটি করপোরেশনের অংশ ছিল না। এসব ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচনও হয়নি। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান আইনে নতুন এসব ওয়ার্ডে নির্বাচন করা কঠিন। কারণ, নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হলে সেখানে কীভাবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ডিএনসিসিতে মেয়র পদে উপনির্বাচন হলে সেখানে ঢাকা উত্তরে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও ছয়টি করে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচন একসঙ্গে হয়ে যেতে পারে। এটা করা সম্ভব। কারণ সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেছে। এখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন করা যায়। তিনি মনে করেন, নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচিত ব্যক্তিদেরও মেয়াদ হবে বাকি সময় পর্যন্ত।