ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমোতে দুজনের পরিচয়। একপর্যায়ে প্রেম থেকে বাস্তবে বিয়ে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নগদ ও এসএ পরিবহনের মাধ্যমে ছেলেটি প্রায় ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান। বিয়েসহ টাকা লেনদেনের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয় মিথ্যা পরিচয় দিয়ে।
ভুক্তভোগী মেয়েটি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এ ঘটনায় তিনি গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী নগরের পবা থানায় একটি মামলা করেন। মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট মামলাটি পর্যালোচনা করে প্রযুক্তির মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করেছে। এখন তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অভিনব প্রতারণার ফাঁদ তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতারকদের এই ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ। জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে অনেকের। পুলিশ প্রযুক্তি দিয়েই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এ কয় দিনেই তারা সাতটি অভিনব প্রতারণার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে।
সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় অভিযোগ করেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ নম্বর থেকে তাঁর ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করে তাঁকে হেয় করার জন্য অশ্লীল ভিডিও ও ছবি বিভিন্ন জনের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে। একই দিন (২১ সেপ্টেম্বর) মো. রাসেল নামের এক পুলিশ কনস্টেবল নগরের রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করেন, কয়েকটি অজ্ঞাতনামা নম্বর থেকে তাঁর বিকাশের ব্যক্তিগত নম্বর হ্যাক করার হুমকি দেয় এবং তার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই ব্যক্তিরও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।
সানজিদা ইসলাম নামের একটি আইডি থেকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘হাই আপু’ লেখা একটি বার্তা আসে এক মেয়ের কাছে। ওই আইডি আসলে একটি ছেলের। পরে তারা ফেসবুকে বন্ধু হয়। মুঠোফোন নম্বর আদান-প্রদান করে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা শুরু করে। একপর্যায়ে ছেলেটি মেয়েটির কাছে তার দুই বান্ধবীর ফোন নম্বর চায়। নম্বর দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ছবি বিভিন্ন অশ্লীল ছবির সঙ্গে লাগিয়ে ফেসবুকে শেয়ার দিতে চায় ছেলেটি। উপায় না পেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর মেয়েটি কাটাখালী থানায় জিডি করেন। এরপর ছেলেটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
কলেজপড়ুয়া একটি মেয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বোয়ালিয়া মডেল থানায় অভিযোগ করেন, এক ছেলে মিথ্যা পরিচয়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক করেন। এরপর বিয়ের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাঁকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ছবি গোপনে তোলেন। পরে মেয়েটি জানতে পারেন, ছেলেটি বিবাহিত। এরপর সম্পর্ক রাখতে না চাইলে ছেলেটি গোপনে তোলা ছবিগুলো ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করতে চান। সাইবার ক্রাইম ইউনিট কাজ শুরু করে ছেলেটির পরিচয় শনাক্ত করে। পরে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সত্যেন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, দুই ব্যক্তি তাঁর বিকাশের দোকানে এসে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁর মুঠোফোন হাতে নিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ নিয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি হলে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে ওই প্রতারককে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে।
রাজশাহীতে যোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক সাইবার ক্রাইম ইউনিট চালুর ঘোষণা দেন। এই ইউনিটের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন সহকারী কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, তাঁরা অপরাধীকে শনাক্ত করার কাজটি করছেন। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এই অপরাধীদের তাঁরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। আর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে। গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।