আমরা যথেষ্ট সৌভাগ্যবান, কারণ আমাদের ডাক্তার আছেন! রেজাউল করিম চৌধুরী

0
94

নিজেকে আপনি সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন, যদি আপনার পরিবারে বা আশপাশে একজন ডাক্তার থাকে! প্রয়োজনের সময়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া একটি সহজ উপদেশ হয়তো আপনার জীবন বাঁচাতে পারে । গর্বিত বোধ করি যে তারা এই করোনা সংকট মোকাবেলায় তাদের সেরাটুকু দিচ্ছে, হাসপাতালে অসুস্থ মানুষদের সেবা করছে । দয়া করে তাদের সম্মান করুন এবং তাদের সমর্থন ও উৎসাহ প্রদান করুন । তারাও আমাদের মতো মানুষ, তাদেরও আবেগ-মন আছে । একজন প্রতিবেশী এবং পরিবারের সদস্য হিসেবে তাদের এই সময়ে আমাদের সাহায্য প্রয়োজন ।যদিও তারা সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েই চিকিৎসা কেন্দ্রে যাচ্ছে, তবুও তাদের কিছু দুশ্চিন্তা আছে । ঘরে থাকা বাবা, মা, ভাই বোন, স্ত্রী ও সন্তান তাদের প্রিয়জন উদ্বিগ্ন থাকেন। প্রতিবেশী, বাড়ির মালিক এবং অন্যদের কিছু অপ্রত্যাশিত আচরণের ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ডাক্তাররা মানসিকভাবে বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা হতাশ! তাদের অনেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করছেন । আমাদের কাছে সবচেয়ে ভালো সুরক্ষা এবং জীবাণুমুক্ত করার জন্য সব ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও, আমাদের কাছে একজন ডাক্তার থাকা মানে একটি বড় আশীর্বাদ। এটা আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।

আরো অনেক পরিবারের মতো আমাদের পরিবারেও ডাক্তার আছে । বিদেশ থেকে উচ্চতর মেডিকেল ডিগ্রী লাভ করে ঢাকায় লাভজনক বেসরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে মানুষের সেবা করার জন্য বেছে নিলেন সরকারি চাকরি। নিজের দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে অনেক দিন ধরে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে দেশের এক প্রান্তে রেখে, তিনি রোগীর সেবা দিচ্ছেন দেশের অন্য প্রান্তে! আমরা বলতে পারি না যে, আমরা তার জন্য চিন্তিত নই । কিন্তু আমরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করার চেষ্টা করছি, আমরা বুঝতে পারি যে, এই সময়ে তার দায়িত্ব পালনটা জাতির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি যদি সেখানে ঝুঁকিও থাকে । আমরা যদি এটা খেয়াল না করি তাহলে আর কে করবে?

সিলেটে ডা: মঈনের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে গত তিন দিন আমাদের সবার মন খারাপ । তার সাথে ঘটে যাওয়া অবহেলা যেন আর করো বেলায় না ঘটে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করায় খুব ভালো লাগলো । আমাদের মানতেই হবে যে, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে চরম অবহেলা স্পষ্ট। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা সর্বনিম্ন, কারণ আমরা জিডিপির ১ % এর কম খরচ করি এখাতে, অথচ প্রতিবেশী নেপালে ৬.১৯% । নেপালের জনসংখ্যার প্রতি এক লাখের জন্য ৩টি আইসিইউ বেড আছে, যখন আমাদের আছে ১ এর কম । কক্সবাজারের মতো জেলা হাসপাতালগুলোতেও ভেন্টিলেটর সুবিধা নেই ।

৩-৪ বছর আগে অনুষ্ঠিত একটি বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে, তথাকথিত দৃশ্যমান উন্নয়নের নামে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার বিষয়ে আমরা আমাদের দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরেছিলাম। বেশিরভাগ সময়ই আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দৃশ্যমান উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যমান উন্নয়নের নামে, আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য-স্বপ্নের কথা আর ভুলে থাকা উচিত হবে না ।

LEAVE A REPLY