আফগান নীতিতে ব্যর্থ ভারত: তালেবান শাসন আতংকে শক্তিধর রাষ্ট্রের কাছে দৌড়ঝাপ

0
31

জীবন আহমেদ,সরকার,বিশিস্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট :: আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে তালেবান বাহিনীর প্রভাব বাড়ছে দেশটিতে। তালেবানের এই প্রভাব নিয়ে ভারত বেশ চিন্তিত। আফগানিস্তান থেকে সবশেষ আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করায় নয়াদিল্লির শঙ্কা খুব স্পষ্ট। তালেবানদের ক্ষমতায় ফিরে আসার মানে ভারতে  আতংক। ভারত সরকার একা নয়, রাশিয়া, ইরান ও চীনও আফগান গৃহযুদ্ধের পরিণাম নিয়ে চিন্তিত। দুশ্চিন্তার অন্যতম হচ্ছে শরণার্থীর আগমন। ভারত এদিক থেকে সবচেয়ে অসুবিধায় আছে।বেশ কয়েক বছর আগেই রাশিয়া, চীন ও ইরান তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করে যেন ক্ষমতায় ফিরে এলে তাদের সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে সরাসরি আলোচনায় বসা সম্ভব হয়। তখন ভারত আদর্শগতভাবে তালেবানের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আফগানিস্তান সরকারের মিত্রদের সমর্থন দিয়েছে।

এখন যখন আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা যখন মেনে নিচ্ছেন, আফগান সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকতে চলছে, তখন নয়াদিল্লি তড়িঘড়ি করে তালেবানকে সমাধানমূলক বার্তা পাঠানোর ওপর জোর দিচ্ছে। সেই একই বার্তা তারা পাঠাচ্ছে, এতদিন যেগুলোর কোনো উত্তর আসেনি।

আফগান সরকার ভারতের কাছ থেকে এখনও সামরিক সহায়তা চায়নি।

‘তালেবানের সঙ্গে যদি আমরা অচলাবস্থায় পৌঁছাই, তাহলে হয়তো ভারতের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা চাইতে হতে পারে।’

আফগান রাষ্ট্রের পতনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত তা ঘটতে পারে। আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকারের পতন হতে পারে।

‘ভারত সামরিক অস্ত্রশস্ত্র যেমন চারটি হেলিকপ্টার, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করার মতো গোলাবারুদ, ছোট অস্ত্র, গুলি এগুলো দিয়েছে।৯০-এর দশকে আফগান আর্মির সোভিয়েত হেলিকপ্টার দেখভালের জন্য সেখানে কর্মীও রেখেছে তারা।’

ভারত হয়তো তাদের প্রকল্পগুলো থেকে সরে আসবে ও বিভিন্ন পুনর্গঠনমূলক প্রকল্পে নিয়োজিত থাকা ৩ হাজার ১০০ নাগরিক, যাদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ার, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনবে।

ভারত আরও সামরিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে পারে, হয়তো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অর্থ দিয়ে সমমনা মিলিশিয়াদেরও সহযোগিতা করবে,। তাতে কোন কাজ হবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।  আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট হামলার পর থেকে ভারত সেখানে খুটি গেড়ে বসে্। এর পর থেকে কান্দহার ভারতীয় কনস্যুলেট থেকে পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠন তেহরিকি তালেবান( টিটিপি) এবং বেলুচিস্তানের জঙ্গীদের অর্থ সহায়তা দিতো ভারত। করাচিতে সন্ত্রাসী সংগঠনের পেছন কলকাঠি নেড়েছে ভারত এমনটা বার বার অভিযোগ করেছে পাকিস্তান। উপযুক্ত প্রমান দেয়ার পর ও ভারত তা অস্বীকার করেছে।

২০১৮ সালে দুই সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তালেবানের উপস্থিতিতে আফগানিস্তানে রাশিয়ার আঞ্চলিক ফোরামের পর্যবেক্ষক হিসেবে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন।

আলোচনায় উপস্থিত সূত্র থেকে জানা যায়, তালেবান প্রতিনিধিরা তখন সরাসরি ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দূরত্ব হ্রাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এখন তারা যখন যুদ্ধের ময়দানে জিতে চলেছে, তখন তাদের সুর পাল্টে গেছে এবং সেই কোমল স্বর আর নেই।

তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন মস্কো থেকে ফিরে আসার পর দোহা থেকে ফরেন পলিসিকে জানান, তিনি ও তার সহযোগীরা সাবেক সোভিয়েত রাজ্যগুলোর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার বিষয়ে রাশিয়াকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আশ্বাস দেন।

ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলেছেন, আফগান সরকারকে সামরিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারত সরকার সতর্ক ছিল। তাদের মতে, স্বেচ্ছাসেবক বা মিলিশিয়াদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে ভারত তড়িঘড়ি করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রতিনিধিদল তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে কি না তা স্পষ্ট নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনগুলো অস্বীকার করেছে, তবে এও বলেছে, ভারত সরকার ‘বিভিন্ন পক্ষের’ সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর একই সময়ে রাশিয়া ও ইরানে ছিলেন, যখন আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তালেবান প্রতিনিধিদল ওখানে গিয়েছিল। ইরান ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে জয়শংকর ভারতের চিন্তার জায়গাটি নিয়ে আলোচনা করেন।

পুরো বিশ্ব যখন কাবুল পতনের শঙ্কায়, তখন আফগান সরকার ও তাদের ভারতীয় মিত্ররাই একমাত্র এর টিকে থাকা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। ভারতকে হয়তো পাকিস্তানের সঙ্গে এর লাইন অফ কন্ট্রোলের (এলওসি) নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।

 

ভারতের নামকরা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তান আবারও একটি শক্তিশালী ধর্মীয় নেতা ও উপনেতাদের হাতে শাসিত হতে চলেছে, যাদের মধ্যে নিজ এলাকার প্রতি রয়েছে প্রগাঢ় মমত্ববোধ। এতে করে অন্যদিকে, আফগানিস্তান লাগোয়া বাদাকশান সীমন্ত এলাকায় বাস করা পাকিস্তানি আদিবাসীদের সঙ্গে স্থানীয় শাসকদের এক ধরনের মিথোজীবী সম্পর্ক গড়ে উঠবে। পশ্চিমের হেরাত প্রদেশের স্থানীয় ক্ষমতাধর নেতারা আবার তাদের সীমান্তে থাকা ইরানি ভ্রাতাদের সঙ্গেই ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য খ্যাত। মাসগুলোতে ভারতের কূটনীতিক ও নীতিনির্ধারকরা এক দুরূহ দায়িত্বের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। সীমান্তে অস্ত্রসজ্জিত ও ‘মোটেও ।নব্বইয়েরদশকএবং 2001 সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে কোনও ভারতীয় মূলধন বিনিয়োগ ছিলনা; এবং এখন তালেবানদের সম্ভবতঅধিগ্রহণের ফলে, ভারতের মূলধন বিনিয়োগের পাশাপাশি কৌশলগত লাভগুলি একটি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতেপারে।

আফগানিস্তানের ভারতীয়নীতি ব্যর্থ হয়েছে এবং যদিও তারা আফগানিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে একটি প্রক্সি চালিয়ে পাকিস্তানকে পরাস্ত করার চেষ্টা করেছিল, ভারত। কখনই বুঝতেপারেনি যে তিনি পাকিস্তানের ভূগোলের সুবিধারক্ষেত্রে কখনই পরাজিত করতে পারবে ভারত

 

 

 

LEAVE A REPLY