ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। ইলিশ রক্ষার অভিযান চালাতে গিয়ে দফায় দফায় হামলার শিকার হচ্ছে অভিযানিক দল। বিশেষ করে বরিশালের হিজলা উপজেলার আওতাধীন মেঘনাসহ বেশ কয়েকটি নদীতে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন নৌ-পুলিশের সদস্যরা।
সূত্র বলছে, ডিম ছাড়ার প্রধান মৌসুমের কারণে গত ১৪ অক্টোবর থেকে টানা ২২ দিন দেশের নদ-নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ রয়েছে। সরকারি এ নির্দেশনা অনুযায়ী এ সময়কালে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত করণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ। আর এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সামাজিকভাবে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি দিনে ও রাতে চলছে নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, থানা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর অভিযান।
কিন্তু সেই অভিযানেই একের পর এক হামলার ঘটনা।
যে সব হামলার পেছনে ক্ষমতাসীনদের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে তদন্তে বেরিয়ে আসা এসব হামলার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছাড়া কাউকেই হয়রানি করা হবে না বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
নিষেধাজ্ঞা শুরুর দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর রাতেই বরিশাল জেলার হিজলায় প্রথম নৌ-পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
মাঝ নদীতে ঘটা যে হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়। আর এ ঘটনায় নামধারী ১০ এবং অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনকে আসামি করে নৌ-পুলিশ একটি মামলাও দায়ের করে। আর এ মামলায় এখন পর্যন্ত ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এরপর বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনে উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মুনিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন অভিযানিক দলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে ২০ অক্টোবর রাতে। প্রথম ঘটনার ৫ দিন পরে ঘটা ওই ঘটনাতেও পুলিশ সদস্য ও অভিযানিক দলের বোটচালকসহ ৩ জন আহত হন। যে ঘটনাতেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে তা তদন্তাধীন রয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনার ৭ দিন পরে ২৭ অক্টোবর সকালে হিজলায় আবারো হামলার শিকার হন নৌ-পুলিশের সদস্যরা। যে ঘটনায় জেলেদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে সটগান দিয়ে ৪ রাউন্ড ফাকা গুলিও ছুড়তে হয়। আর এরমাঝেই এক পুলিশ সদস্য হাতে ব্যাথা পান। যে ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সবশেষ ২৭ অক্টোবর সকালের ঘটনার পর ওইদিন রাতেই (২৮ অক্টোবর ভোররাত) হিজলায় আবারো আক্রান্ত হন নৌ-পুলিশের সদস্যরা। যে ঘটনাটি হিজলার গৌরবদী ইউনিয়নের অন্তরবাম পয়েন্টে ঘটে বলে জানিয়েছে নৌ-পুলিশ।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে মেঘনা নদীতে টহল দেয়ার সময় একটি বড় বোটকে সংকেত দেন পরিদর্শক মো. আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন একটি টিম। এসময় বোটটি পালিয়ে যেতে উদ্যত হলে নৌ-পুলিশ ও তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় জেলেদের ওই ট্রলারটি নৌ-পুলিশের ট্রলারকে ধাক্কা দিয়ে পরিদর্শক মো. আবু তাহের আহত অবস্থায় নদীতে পড়ে যান।
এ ঘটনায় হিজলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াকুব বাঘা, মুহাম্মদ আলী বাঘা ও মো. জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি মৎস আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান হিজলা নৌ-পুলিশের পরিদর্শক শেখ মো. বেল্লাল হোসন।
নৌ-পুলিশের এই পরিদর্শক বলেন, ঘটনা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নদীতে ঘটা এসব হামলার ঘটনার প্রতিটি-ই সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে সর্বশেষ হামলার শিকার নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মো. আবু তাহের বলেন,সক্ষমতার কারণে এখন নৌ-পুলিশ প্রায় প্রতিটি স্থানেই তাদের টহল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যে সব অঞ্চলে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেসব স্থানে বিগত সময়ে বর্তমান সময়ের মতো নজরদারী বা অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তবে নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে এবারে টানা অভিযান ও নজরদারী অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে অঞ্চলগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটছে, সেখানে অভিযানের কারণে স্বাভাবিকভাবে জেলেরা নদীতে নামতে পারছে না। তবে তারা নদী তীরে থাকেন প্রতিটা সময়। সুযোগ বুঝে অসাধুরা মাছ শিকারে নেমে পড়েন। মূলত তারাই অভিযানিক দলকে দেখে পালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকসময় আমরা নদীর তীরে কিংবা খালে জেলে নৌকাতেও জাল দেখছি। এসব জাল উদ্ধার কিংবা জেলে নৌকাকে ধাওয়া দিতে গিয়েই মাঝ নদীতে বসেই হামলার ঘটনা ঘটছে নৌ-পুলিশের ওপর।
যদিও এসব ঘটনার পরও অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই পরিদর্শক।
এদিকে আবুপুর- হরিনাথপুর ভাসমান নৌপুলিশ ইউনিট ১ এর এসআই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকালে নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে হিজলার বদর পুর সংলগ্ন নদীতে তারা অভিযান পরিচালনা করেন। আকস্মিক সাত/আট টি নৌকা পুলিশের হামলা চালায়। হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের শটগানের চার রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে।
তার মতে, হামলার কোনো আগাম আলামত ছিল না। তবে অভিযানিক দলের উপস্থিতি জেলেরা মানতে পারছে না বলেই হামলার সময় মনে হচ্ছিল বলে দাবি তার।
বরিশাল জেলা মৎস অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বিগত সময় থেকে এ পর্যন্ত হিসেব কষলে বরিশাল সদরের চন্দ্রমেোহন, বাবুগঞ্জ-মুলাদীর মীরগঞ্জ, হিজলার আবুপুর, ধূলখোলা, গৌরবদী ও মেহেন্দিগঞ্জে চরশিফুলী এলাকায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। আর এর কারণ খতিয়ে প্রাথমিকভাবে যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে তারা আত্মপক্ষ রক্ষা কিংবা গ্রেফতার এড়াতে এগুলো করে থাকে।
bn….