ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। ‘নিশি অবসান প্রায় ঐ পুরাতন বর্ষ হয় গত, আমি আজি ধূলিতলে জীর্ণ জীবন করিলাম নত। বন্ধু হও শত্রু হও যেখানে যে রও, ক্ষমা কর আজিকার মত,পুরাতন বরষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত।’বাঙালির জীবনে ঐতিহ্যের রঙ আর রূপ নিয়ে এসেছে পহেলা বৈশাখ। গোটা দেশ মেতে উঠবে আজ উৎসব আয়োজনে। আবহমান বাংলার হাজার বছরের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বাঙালি বরণ করে নতুন বছরকে। শুধুই কি বাঙালি? বাংলা ভাষাভাষী আদিবাসী ও নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের জীবন জগতে স্বপ্নময় নতুন বছরের শুভযাত্রা সূচিত হয় এই বৈশাখে।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে তাই তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রার্থনা ‘মুছে যাক গøানি মুছে যাক জরা/অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা’। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায়, ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে/কাল্-বোশেখীর ঝড়।/তোরা সব জয়ধ্বনি র্ক!’ বৈশাখের প্রথম দিবসটি আবহমানকাল থেকেই আমাদের সত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে এক গভীরতর মধুর সম্পর্ক নিয়ে বিরাজ করছে। পহেলা বৈশাখ পুরনো জরা-জীর্ণকে ঝেড়ে ফেলে আমাদের যাপিত জীবনে নতুন সম্ভাবনা ও নতুন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলতেই শুধু নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে একাকার হওয়ার প্রেরণও জোগায়। তাই পহেলা বৈশাখই হচ্ছে বাঙালির জীবনে সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন উৎসব। বাংলা ও বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির মূল বিষয়টি হলো, উৎসবের মধ্য দিয়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। সেই উৎসবের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, কৃষ্টি ও গৌরব।
বছর ঘুরে আবার এসেছে বৈশাখ। স্বাগত হে ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। এই নতুন বছর জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুফল বয়ে আনবেÑ এটিই দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা। আমরা এখনও পারিনি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ও বাংলা সনের প্রবর্তন করতে। রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমরা বাংলা সনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসবকে স্তব্ধ করে দিতে প্রায় দেড় দশক আগে রমনা বটমূলের ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা ও বাঙালি সাংস্কৃতিবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে কেড়ে নিয়েছিল কয়েকটি নিষ্পাপ প্রাণ। বাঙালির অস্তিত্বের ঠিকানা নববর্ষের দিনকে যারা সেদিন রক্তাক্ত করেছিল, তাদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি আজও। সেই একই উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী আজও দেশের বিরুদ্ধে নানা নামে ও বর্ণে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশকে যেকোনো মুহূর্তে অস্থিতিশীল করার জন্য নীলনকশা তৈরি করছে তারা। সব মিলিয়ে আমাদের সামনের পথ ততটা কুসুমাস্তীর্ণ নয়। তারপরও আশা-জাগানিয়া জাতি হিসেবে মঙ্গলের কামনায় উদগ্রীব আমরা গেয়ে যাই বৈশাখের আগমনী গান। সৈয়দ শামসুল হকের ভাষায় :
‘এমন সবুজ দেশ, নদী স্বচ্ছতায়Ñ/বৈশাখ এসে গেলে নীল হয়ে যায়।/রোদ্দুর ধোঁয়ানো দেশে রাত নেমে এলে/মায়াবিনী জোৎস্না এসে পড়ে/বৈশাখী মেলায় আর/মানুষের নিবিড় জেগে থাকে ভালোবাসা/চোখের পাতায়।’