নাজিম উদ্দিনে পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাই কোর্টে রুল

0
444

ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : ঢাকার মেয়র হানিফ ফাইওভারে বাসের ধাক্কায় ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মকর্তা ভোলার লালমোহন উপজেলার সন্তান নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে কেন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, বিআরটিএ এমডি, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার এবং শ্রাবণ ও মঞ্জিল পরিবহনের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবিবেদন আমলে নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করে। দুই বাসের পাল্লার মধ্যে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বিএম গোলাম মোস্তফা তাজ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিবেকের তাড়নায় এবং ন্যায়ের স্বার্থে প্রতিবেদনগুলো আদালতের নজরে আনলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে রুল জারি করেছে। নাজিম উদ্দিন (৩৮) ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন। গত ১৭ মে সকালে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে মোটর সাইকেলে করে গুলিস্তানের দিকে যাওয়ার পথে মেয়র হানিফ ফাইওভারে তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি সে সময় বলেছিলেন, ফাইওভারে দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে একটি বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন নাজিম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই নিহতের ভায়রা আবদুল আলীম বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। ওই ঘটনায় গ্রেফতার শ্রাবণ পরিবহনের চালক ওহিদুল ও মঞ্জিল পরিবহনের চালকের সহকারী কামাল হোসেন ছাড়াও মঞ্জিল পরিবহনের পলাতক চালককে আসামি করা হয় সেখানে।
নাজিমের মৃত্যুর ঘটনায় ২ জন রিমান্ডে: রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফাইওভারে বাসের ধাক্কায় ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের নিহতের ঘটনায় দুই আসামিকে একদিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম প্রনব কুমার হুই এ আদেশ দেন। ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান জানান, গত ২০ মে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন আসামি দুইজনকে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। ওইদিন আদালত গতকাল মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ১৮ মে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আনিসুর রহমান জানান, গতকাল মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে শ্রাবণ সুপার বাসের চালক মো. ওহিদুল (৩৫) ও মনজিল এক্সপ্রেস বাসের সহকারী মো. কামালকে (৩২) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ড আবেদন থেকে জানা যায়, আসামিরা প্রায়ই বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকে। ঘটনার দিন ও সময়ে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানায়। তাই মামলার তদন্তের স্বার্থে এবং পলাতক আসামির নাম-ঠিকানা জানতে আসামিদের রিমান্ড আবশ্যক। পরে বিচারক রিমান্ড শুনানি শেষে আসামিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নথি থেকে জানা যায়, গত ১৭ মে সকালে রাজধানীর শ্যামপুর থেকে মোটরসাইকেল যোগে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে নাজিম দুর্ঘটনার শিকার হন। মেয়র হানিফ ফাইওভারে উঠতেই মঞ্জিল ও শ্রাবণ পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষির মুখে পড়েন তিনি। শ্রাবণ পরিবহনের বাসটি নাজিমের মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ছিটকে পড়ে যান। ওই সময় বাসটি তাঁর বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়। ওই ঘটনায় ১৭ মে রাতেই নাজিমের ভায়রা আবদুল আলিম যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। নাজিম ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ছিলেন। রাজধানীর শ্যামপুরের করিমোল্লাবাগ ২২৭/৩ ফরিদাবাদের ভাড়া বাসায় থাকেন নাজিম উদ্দিন ও তাঁর পরিবার। ভোলা জেলার লালমোহন থানার বালুরচর গ্রামে নাজিমের বাড়ি। চার বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। নাজিম উদ্দিনকে উদ্ধার করে যারা হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তাঁদের মধ্যে আলী নওয়াজ হোসাইন নামে এক ব্যক্তি জানান, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া থেকে মেয়র হানিফ ফাইওভারের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন নাজিম উদ্দিন। তাঁর পেছনে একটি বাস ছিল। ফাইওভারের ওপরে এক লেনের রাস্তা হলেও ওই বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। একপর্যায়ে বাসটি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে পড়ে গিয়ে চালক নাজিম উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান শরীফ বলেন, আমিও মোটরসাইকেলে করে ফাইওভার দিয়ে আসছিলাম। উনি আমার সামনে ছিলেন। পিছন থেকে বাসে ধাক্কা মেরেছে। ধাক্কা মারার পর বাস ওভারটেক করে চলে যায়। এ সময় তিনি পড়ে যান। তখন ওঁর প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিল। সিএনজিতে উঠানোর সময় উনি শুধু একবার মুভ করেছে। এরপর চুপ হয়ে যান। দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নাজিম উদ্দিনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ তাঁর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তিনি জানান, নাজিমের পায়ে ও বুকে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রচুর রক্ত ক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।

LEAVE A REPLY