নিজস্ব প্রতিবেদক,ভোলা নিউজ২৪ডটকম।।ভোলার নদীতে ভরা মৌসুমেও ইলিশ মিলছে কম জেলের জালে।মিলছে পুকুরের মাছ । বৃষ্টিপাত ও বন্যায় বিভিন্ন এলাকার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ নদীতে চলে এসেছে ।তাই ভোলার মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পুকুরের মাছ ধরা পড়ছে। দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে পুকুর এবং ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সেই মাছ মেঘনা নদীতে এসে ধরা পড়েছে জেলেদের জালে।
জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে পুকুরের মাছ পাওয়ায় এতে দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে মাছের আড়ত। বেচা-বিক্রি যেমন বেড়েছে, তেমনি হাসি ফিরেছে ভোলার জেলে এবং মাছের আড়তদারদের মুখে।
এদিকে গত কয়েকদিন সরেজমিনে শান্তিরহাট,রতনপুর,ব্যাংকের হাট,তুলাতুলি বাজারে বিভিন্ন মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি জেলের নৌকায় ইলিশ সহ নদীর অন্যান্য মাছ কম বেশির ভাগেই জালে উঠছে পাঙ্গাস,রুই,সিল্ভারকাপ,রুই মাছ। এসব মাছ পেয়ে খুশি হলেও এসব মাছের দাম কম হওয়ায় তেলের টাকাও উঠছে না বলে জানিয়েছে জেলেরা ।
জেলেরা বলছেন, নদীতে ইলিশ কম। বন্যায় ভেসে গেছে নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর জেলার মাছের ঘের, পুকুর, খাল-বিল, জলাশয়ের মাছ। আর সেই মাছ মেঘনা নদীতে এসে ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। এখন জাল ফেললেই মিলছে নানা প্রজাতির মিঠা পানির মাছ।
এদিকে ইলিশ মাছ শিকার করতে না পারলে ঋণগ্রস্ত হয়ে জেলেরা মহা সংকটে পরবে বলে জানিয়েছে । আবার গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। ফলে পাওনাদারের ভয়ে আছে অনেকে জেলে।
মঙ্গলবার দুপুরে ভোলানিউজ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয় ভোলা সদরের তুলাতুলি এলাকার জেলে ইউনুস এর সঙ্গে।
তিনি জানান, দিন ও রাতে নামেন নদীতে তারা, কিন্তু মেলে না ইলিশ মাছ আর যা পাই দুই এক টা আর যা পাই বেশীর ভাগই পাঙ্গাস,রুই,কাতল মাছ। এসব মাছ পেয়ে লাভ নাই লস আমাগো,কারন মাছ ধরতে গিয়ে যে খরচ হয় তার সিকি ভাগ টাকার মাছও পাই না । ফলে দিন দিন বাড়ছে দেনা।
এছাড়া ,ইলিশ মাছ শিকার করতে না পেরে এসব পুকুরের পোনা মাছ পেয়ে বাজারে দাম না পাওয়ায় জীবনযাপন নিয়ে চরম সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন একই এলাকার আরেক মৎস্যজীবী জামাল ও তামিম মাঝি।
আশানুরূপ ইলিশ মাছ না পাওয়ায় অনেককেই নদী পাড়ে ট্রলার মেরামত এবং ছেঁড়া জাল ঠিক করতে দেখা গেছে।
ভোলার মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বন্যার কারণে উজানের জেলাগুলো থেকে ভেসে আসা এসব মাছ সাগরে যাবে না। নদীতেই থেকে যাবে এরা, ধরা পড়বে জেলেদের হাতে। বদ্ধ জলাশয়ে বেড়ে ওঠা এই মাছ নদীর মাছের উপরও কোন প্রভাব ফেলবে না।
রুই-কাতল-মৃগেল মূলত দেশের ভেতরের অঞ্চলে নদীর মিঠা পানির মাছ। সাগরের কাছাকাছি এলাকার মেঘনায় সাধারণত এসব মাছের দেখা মেলে কম। যেহেতু এসব মিঠা পানির মাছ, তাই সাগরের লোনা পানিতে যাবার সম্ভাবনা একদমইন নেই। বরং মোহনার কাছে ভিড় করায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে।
এদিকে গত কয়েক দিনে আবারো ইলিশের দাম বেড়েছে । ভোলার বাজারে গ্রেড ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা করে। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে। আর জাটকা ইলিশের হালি ৮০০ থেকে ১০০০টাকা সাইজ ভেদে দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মাছ কিনতে আসা প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইলিশ এখন বিলাসী খাবারে পরিণত হয়েছে। বড় মাছ তো সপ্নেও ভাবতে পারি না আর ঝাটকা ইলিশ যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বাইরে চলে গেছে।
বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশে। পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশে হয়। তারপরও বাংলাদেশে ইলিশের দাম থাকে আকাশছোঁয়া। দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা অতিরিক্ত দামের কারণে মাছের রাজা ইলিশের স্বাদ উপভোগ করতে পারে না। প্রতি বছরই প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করা হয়। সে দেশের নদ-নদীতেও পাওয়া যায় ইলিশ মাছ। যার কারণে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে এই মাছের দাম সব সময় কম থাকে।
তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের এমন আশ্বাসের পর দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাও ইলিশের স্বাদ চেখে দেখার স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। ইলিশের দাম কিছুটা কমলেও তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে এখনো আসেনি।