ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। বিজয়ের বেশে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অপরাধ ও ঘুষের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উ্চচারণ করেছিলেন। সেই সঙ্গে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আমার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশে হবে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ৯ মাসের বেশি সময় পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দি রাখা হয়।
রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। ঢাকায় ফিরেই বঙ্গবন্ধু জনতার মাঝে এসে উপস্থিত হন।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে(তৎকালিন রেসকোর্স) অপেক্ষমান লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু আবেগ ঘন ভাষণে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ বলেছিলেন, আমি প্রথমে স্মরণ করি আমার বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবি জনগণকে, হিন্দু মুসলমানকে যাদের হত্যা করা হয়েছে আমি তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করি।
আমি আপনাদের কাছে দু-এক কথা বলতে চাই। আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে, আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে, আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে। আমি আজ বক্তৃতা করতে পারবো না। বাংলার ছেলেরা, বাংলার মায়েরা, বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী যেভাবে সংগ্রাম করেছে আমি কারাগারে বন্দি ছিলাম, ফাঁসি কাষ্ঠে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু আমি জানতাম আমার বাঙালিকে দাবায় রাখতে পারবে না। আমি আমার সেই যেই ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে তাদের আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আজ প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলা হয়ে হয়েছে ২য় বিশ্ব যুদ্ধে ১ম বিশ্ব যুদ্ধেও এত মানুষ এত সাধারণ জনগণ মৃত্যুবরণ করে নাই, শহীদ হয় নাই যা আমার ৭ কোটির বাংলায় করা হয়েছে। আমি জানতাম না আমি আপনাদের কাছে ফিরে আসবো আমি খালি একটা কথা বলেছিলাম, তোমরা যদি আমাকে মেরে ফেলে দাও কোনো আপত্তি নাই মৃত্যুর পরে আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে দিয়ে দিও এই একটা অনুরোধ তোমাদের কাছে।
ভাষণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ভারত, রাশিয়ারা(তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিযন) সরকারকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে, বার বার তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণসহ বিশ্বের জনগণ যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছেন।
ভাষণে শেখ মুজিব বলেন, আমি মোবারকবাদ জানাই ভারত বর্ষের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কে,আমি মোবারকবাদ জানাই ভারতবর্ষের জনগণকে, আমি মোবারকবাদ জানাই ভারতবর্ষের সামরিক বাহিনীকে,আমি মোবারকবাদ জানাই রাশিয়াকে, জনগণকে। আমি মোবারকবাদ জানাই জার্মানি, ব্রিটিশ, ফ্রান্স সব জায়গার জনগণকে তাদের আমি মোবারকবাদ জানাই যারা আমাকে সমর্থন করেছে।
আমি মোবারকবাদ জানাই আমেরিকার জনসাধারণকে, মোবারকবাদ জানাই সারা বিশ্বের মজলুম জনগণকে যারা আমার এই মুক্তি সংগ্রামকে সাহায্য করেছে। আমার বলতে হয় ১ কোটি লোক এই বাংলাদেশ থেকে ঘর বাড়ি ছেড়ে ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের জনসাধারণ, মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তাদের আশ্রয় দিয়েছেন তাদের আমি মোবারকবাদ না দিয়ে পারি না। যারা, অন্যরা সাহায্য করেছেন তাদেও আমার মোবারকবাদ দিতে হয়।
বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের প্রতি নব গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বাংলাদেশকে কেউ দমাতে পারবে না এবং কোনো ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না বলে তিনি সদর্পে উচ্চারণ করেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি আজ বাংলার মানুষকে দেখলাম, বাংলার মাটিকে দেখলাম, বাংলার আকাশকে দেখলাম, বাংলার আবহাওয়াকে অনুভব করলাম। বাংলাকে আমি সালাম জানাই, আমার সোনার বাংলা তোমায় আমি বড় ভালোবাসি বোধহয় তার জন্যই আমায় ডেকে নিয়ে এসেছে।
একটা কথা, একটা কথা আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যারা অন্য লোক আছে অন্য দেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক বাংলায় কথা বলে না তাদের বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি তাদের ওপর হাত তুলো না আমরা মানুষ ,মানুষ ভালোবাসি। তবে যারা দালালি করছে, যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে। তাদের বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন, একজনকেও ক্ষমা করা হবে না।
তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখিয়ে দিতে চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশ গঠনে হাত দেওয়ার আগে দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ভাষণে অপরাধ ও ঘুষের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উ্চচারণ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ভাইয়েরা আমার যথেষ্ট কাজ পরে রয়েছে আমার সকল জনগণকে দরকার যেখানে রাস্তা ভেঙে গিয়েছে নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দাও। আমি চাই জমিতে যাও ধান বুনো, কর্মচারীদের বলি একজন ও ঘুষ খাবেন না। মনে রাখবেন তখন সুযোগ ছিল না, আমি অপরাধ ক্ষমা করবো না।