ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : বুকে আশা, অন্তরে বিশ্বাস-এই স্বপ্ন লালন করে বাংলাদেশ পাড়ি জমিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। পেছনে ছিল গর্ব করার মতো রাজ্যের ইতিহাস। একদিনের ক্রিকেটে নতুন শক্তি। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড বধ। লঙ্কা বধ। অস্ট্রেলিয়াকে বধ করার তরতাজা স্মৃতি শরীরে মেখেই উঠেছিল প্রোটিয়া বিমানে। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সব কিছু নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। একটি করে ম্যাচ খেলে আর নামের পাশে লেখা হয় হারের করুণ ইতিহাস। যে হারে লজ্জায় মুখ ঢাকারও জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। কি সাদা পোশাকের ক্রিকেটে? কি একদিনের ক্রিকেটে? সবখানেই একই অবস্থা। ২২ গজের উইকেটে বাংলাদেশ যেভাবে খেলছিল তা দেখে মনেই হবে না এই বাংলাদেশই উন্নতির পথে থাকা অবস্থায় এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। বাংলাদেশের খেলা দেখে সবাইকে স্মৃতি তাড়িত করে তোলে। যে স্মৃতি ছিল আবার বিব্রতকর, লজ্জার। টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর বাংলাদেশ এ রকম বাজে খেলত। হারত নাকানি-চুবানি খেয়ে। সময়ের কালক্রমে সব কিছুকে পেছনে ফেলে নতুন ইতিহাস লেখা শুরু করলেও দক্ষিণ আফ্রিকা এসে সব সাগরের পেটে বিলীন হয়ে যায়!
পানিতে ভাসমান জাহাজে ছিদ্র হয়ে গেলে, সেই ছিদ্র দিয়ে অনবরত পানি ঢুকতে থাকে। ডুবে যাওয়ার অবস্থা হয় জাহাজের। ছিদ্র বন্ধ করতে না পারলে জাহাজের তলিয়ে যাওয়া অবধারিত। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ নামক জাহাজে সেই রকম ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল। এক একটি হার সফরকে করে তুলেছিল বিভীষিকাময়। কিছুতেই হারকে প্রতিহত করতে পারছিল না। হারতে হারতে ডুবে যাওয়ার শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ায় দল। এক একটি হার ছিল আবার বিশালকায়। পাল্লা-পাথর দিয়ে ওজন করলে পরিমাণ হবে অনেক বড়। হারের ভারে নুয়ে পড়া দলের অবস্থায় দাঁড়ায় এমন সফর শেষ করতে পারলেই যেন বাঁচে তারা। কিন্তু চাইলেই তো আর সফর শেষ করা যাবে না। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ। যতই বাজে খেলা হোক না কেন, সফর শেষ করে তবেই আসতে হবে। অবশেষে বাংলাদেশের সেই দুর্বিষহ সিরিজ শেষ হতে চলেছে। আজই তারা খেলবে শেষ ম্যাচ। পচেফস্ট্র–মে কুড়ি ওভারের ম্যাচ খেলার মধ্য দিয়েই যবনিকা ঘটবে একটি কালো অধ্যায়ের। হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু শেষটা কীভাবে হবে লাল-সবুজের?
শেষ ভালো যার, সব ভালো তার- এই প্রবাদ বাক্যকে সার্থক করে তুলতে পারবে বাংলাদেশ দল। নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া সেনাপতি সাকিবের হাত ধরে কি পারবে হাসি মুখে বিমানে চড়তে। গোটা সফরে বাংলাদেশ দল নিরাশায় ডুবে থাকলেও শেষ ম্যাচের আগে কিন্তু নিরাশার সঙ্গে যোগ হয়েছে আশাও। আশা-নিরাশার দোলাচলে আছে বাংলাদেশ। নিরাশা হলো যথারীতি হারের বৃত্তে থেকেই বাংলাদেশ আজ খেলতে নামবে। সেই হারের মাঝে আবার ক্ষত সৃষ্টি হবে খেলাটি পচেফস্ট্র–মে বলে। এই পচেফস্ট্র–ম থেকেই শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশের কালো অধ্যায় লেখার সূচনা। প্রথম টেস্টে হেরেছিল ৩৩৩ রানে। পচেফস্টুমের এই হারের বীজ যে এত দ্রুত ডালপালা বিস্তার করে ছড়িয়ে পড়বে গোটা সিরিজে তা কিন্তু লাল-সবুজের শুভাকাক্সক্ষীরা কেউ ভুলেও ভাবেননি! দ্বিতীয় টেস্টে হারের ব্যবধান বেড়ে যায়। হারে ইনিংস ব্যবধানে। সঙ্গে ২৫৪ রানও। সাদা পোশাকের এই হারের ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই লাগে একদিনের সিরিজে। সেখানেও হার ছিল বেশ মোট অক্ষরে।
তিনটি ম্যাচে হেরেছিল যথাক্রমে ১০ উইকেটে, ১০৪ রানও ২০০ রানে। উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশের যতটুকু উন্নতি ছিল তা এই দুই ফরম্যাটেই। সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে। সাদা পোশাক ও একদিনের ক্রিকেটেই যদি বাংলাদেশের দৈন্যদশা হয়, সেখানে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে তো আর অশনিসংকেতই ঘটবে। কিন্তু সেখানে বিপ্লব ঘটায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার আগে ব্যাট করে করা ৪ উইকেটে ১৯৫ রানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। সমান তালে লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানে ২০ রানে। পচেফস্ট্র–মে বীজ বপন করা কালো অধ্যায়ের সমাধি আবার এখানেই ঘটতে পারে আজকের শেষ ম্যাচে? আগের ম্যাচের লড়াকু বাংলাদেশ দল যে খেলা দেখিয়েছে তাতে করে শুধুই আফসোস তৈরি হয়েছে। ‘যদি-কিন্তু’ যোগ করে যে আফসোসে ঢেউ খেলেছিল জিততেও পারত বাংলাদেশ। যা গোটা সিরিজে একটি বারের জন্য উঁকি দিতে পারেনি। এই আফসোসই আজকের ম্যাচের আশা।
পচেফস্ট্র–ম কি সাফল্যের দরজা খুলে দেবে বাংলাদেশের জন্য। শোধ করবে কি ঋণ! এই ঋণ যে পচেফস্ট্র–মবাসীর বাংলাদেশের কাছে। ২০০২ সালে তারা প্রথম সাদা পোশাকের ক্রিকেটের মজা পেয়েছিল এই বাংলাদেশের মাধ্যমে। তারপর আবার লম্বা একটা বিরতি। ১৫ বছর পর মরীচিকা পড়ে যাওয়া মাঠে বাংলাদেশের মাধ্যমেই এবার সেই মরীচিকা দূর হয়েছিল। এবার তো কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের পর্দাই উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়ে? বাংলাদেশ কি শুধুই দিয়েই যাবে? কিছুই পাবে না? শেষটা কি রাঙাতে পারবে বাংলাদেশ! পচেফস্ট্র–মে শুরু হওয়া কালো অধ্যায় পচেফস্ট্র–মেই কবর দেবে! তাহলে তো সার্থক হয়ে উঠবে ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার!’ রচিত হবে নতুন ইতিহাস। পচেফস্ট্র–মে প্রথম আন্তর্জাতিক কুড়ি ওভারের ম্যাচে বাংলাদেশের জয়!