রয়টার্স: মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সেখানে কর্মরত লন্ডনভিত্তিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ে ও-কে গ্রেপ্তার করেছে।
এ দুই সাংবাদিক সম্প্রতি সেনাবাহিনীর হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছিলেন।
মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে গতকাল বুধবার জানিয়েছে, এ দুই সাংবাদিক ছাড়াও কর্তৃপক্ষ আরো দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের ১৯২৩ সালের ব্রিটিশ উপনিবেশিক যে আইনের আওতায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তাতে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা হতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা ‘বেআইনিভাবে পাওয়া তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে শেয়ার’ করেছেন। তার সঙ্গে দুই সাংবাদিকের হাতকড়া অবস্থায় তোলা ছবিও যুক্ত করা হয়েছে।
মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের বাইরে একটি পুলিশ স্টেশনে তাদের আটক রাখার তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়েও গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশের আমন্ত্রণে একটি ডিনারে অংশ নিতে গিয়ে নিখোঁজ হন। রয়টার্সের গাড়িচালক মাঁয়োথান্ট তুন ওই রাতে ৮টার দিকে দুই সাংবাদিককে নিয়ে পুলিশের আট ব্যাটালিয়নের কম্পাউন্ডে নামিয়ে দেন। তারপর দুই সাংবাদিক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা কাছাকাছি একটি রেস্তোরাঁয় যান। কিন্তু দুই সাংবাদিক সে রাতে আর গাড়িতে ফিরে আসেননি। তার পর থেকেই তাঁরা নিখোঁজ ছিলেন।
নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গারা ভয়াবহতার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরুষ সদস্যদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছে, নারীরা প্রতিনিয়ত সেখানে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আর তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার এ ঘটনাকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যদিও মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চির পক্ষ থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে।
‘রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লন ও কিঁয় সোয়ে ও মিয়ানমারের বৈশ্বিক গুরুত্ব নিয়ে লিখেন এবং আজকের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে, তাঁরা তাদের কাজে যুক্ত থাকার কারণেই গ্রেপ্তার হয়েছেন’, এক বিবৃতিতে বলেন রয়টার্সের প্রেসিডেন্ট ও এডিটর-ইন-চিফ স্টিফেন জে অ্যাডলার।
রয়টার্সপ্রধান আরো বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর এই ধরনের নির্লজ্জ আক্রমণে আমরা ক্ষুব্ধ। দুই সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তির জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুখপাত্র জ তাই। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু আপনাদের দুই সাংবাদিককেই গ্রেপ্তার করিনি, এ মামলার সঙ্গে যুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা পুলিশ ও সাংবাদিক উভয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হেদার নাওয়েট দুই সাংবাদিককে আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁর দেশ বিষয়টি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে। তিনি দুই সাংবাদিকের নিরাপত্তার বিষয়টি কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তারা সেখানে শুধু তাঁদের নির্ধারিত পেশাগত দায়িত্বই পালন করছিলেন।’
এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।