বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তার হলফনামার সঙ্গে এবারের হলফনামা মিলিয়ে দেখলে আয়ে, সম্পদে তার সমৃদ্ধির চিত্র স্পষ্ট হয়।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে শাজাহান খান তার হলফনামায় বছরে ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে আসত ১৫ হাজার টাকা। ব্যবসা করে পেতেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর পাঁচ লাখ টাকা আসত ‘অন্যান্য’ খাত থেকে।
পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালে তার জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে দেখা গেল ব্যবসা থেকে তার আয় নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। বাড়িভাড়া থেকেও তিনি আর কোনো পয়সা পাচ্ছেন না।শেয়ার, সঞ্চয়পত্র আর ব্যাংক আমানত বাবদ ২২ হাজার ১২৯ টাকার সঙ্গে সাংসদ ও মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সম্মানী-ভাতার ১৭ লাখ ২২ হাজার ৩০০ টাকা মিলিয়ে তার আয় তখন ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৯ টাকা।
এবারের হলফনামা বলছে, সেই শাজাহান খান এখন বছরে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫৯ টাকা আয় করেন। এর মধ্যে ব্যবসা থেকেই আসে ৩ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকা।
এছাড়া বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে তার দুই লাখ ৩৯ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র আর ব্যাংক আমানত থেকে লাভ পাচ্ছেন দুই লাখ ৯১ হাজার টাকার বেশি। সঙ্গে মন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে পাওয়া সম্মানি-ভাতার ২৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা তো আছেই। সব মিলিয়ে বছরে তার আয় এখন ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি।
এই হিসাবে মন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ বছরে যেখানে শাজাহান খানের মোট আয় বেড়ে আড়াই গুণ হয়েছিল, আর পরের পাঁচ বছরে ১০ বছর পর তা বেড়ে ১৯ গুণ হয়েছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ বছরে শাজাহান খানের সম্পদের পরিমাণ ৬৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা থেকে সোয়া চারগুণ বেড়ে দুই কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা হয়েছে। আর দ্বিতীয় মেয়াদে তা তিন গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে নয় কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার টাকা।
একাদশ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, শাজাহান খানের হাতে নগদ ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪১৩ টাকা, ব্যাংকে এক কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৩১১ টাকা জমা আছে।
এছাড়া দেড় কোটি টাকা দামের দুটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস, ৮০ হাজার টাকা দামের ২০ তোলা স্বর্ণ, এক লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, এক লাখ টাকার আসবাবপত্র এবং তিন লাখ দুই হাজার টাকা দামের একটি বন্দুক ও একটি পিস্তলের মালিক তিনি।
২০১৩ সালে শাজাহান হাতে নগদ এক টাকাও ছিল না। ব্যাংকে ছিল ১৮ লাখ টাকা। তার গাড়ির দাম ছিল ৫০ লাখ টাকা। এখনকার মতই বিশ তোলা স্বর্ণ ছিল। বাড়িতে ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল এখনকার তিনগুণ, তিন লাখ টাকার। আসবাবপত্রও ছিল দুই লাখ টাকার। হাতে থাকা দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের দাম তিনি দেখিয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা।
পাঁচ বছর আগে শাজাহান খান ৩৩ লাখ টাকা দামের ১ একর ৫ শতাংশ কৃষি জমির মালিক ছিলেন। এখন সেই জমির সঙ্গে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের চার শতাংশ এবং ২২ লাখ টাকা মূল্যের ৬৩ শতাংশ কৃষি জমির মালিক নৌপরিবহনমন্ত্রী।
২০০১৩ সালে জমা দেওয়ায় হলফনামায় শরীয়তপুরে এক লাখ ১৯ হাজার ৯৫৩ টাকা দামের ৬৪ শতাংশ অকৃষি জমি থাকার কথা জানিয়েছিলেন শাজাহান খান।
এবার তার স্থাবর সম্পদের তালিকায় শরীয়তপুরে ৬৪ শতাংশ, দিয়াপাড়ায় ২.০৪ শতাংশ, রাজৈরে ০.৬৫ শতাংশ, গঙ্গাবরদীতে ৫ শতাংশ, দিয়াপাড়ায় তিন শতাংশ এবং সাতপাড় ডুমুরিয়ায় ৬০ শতাংশ জমির কথা বলা হয়েছে, যার দাম ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৩ টাকা বলে হলফনামায় তথ্য দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ বছর আগে কোনো অ্যাপার্টমেন্ট ছিল না শাজাহান খানের। তবে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি আবাসিক ভবনের মালিক ছিলেন তিনি। এখন তার দুটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। এছাড়া তিনটি বাড়ি আছে। আরও দুটি বাড়ি নির্মাণাধীন।এছাড়া যৌথ মালিকানায় বিভিন্ন জায়গায় দুই কোটি ৭৫ লাখ ২১ হাজার ৫৩২ টাকার সম্পদ আছে শাজাহান খানের। আগের হলফনামায় তিনি এক কোটি ৬৬ লাখ টাকার যৌথ মালিকানার সম্পত্তিতে নিজের অংশ দেখিয়েছিলেন।
হলফনামায় দানসূত্রে পাওয়া দুটি সম্পত্তির বিবরণও দিয়েছেন শাজাহানখান। এর একটি শিরখাড়ার ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ জমি এবং লালমাটিয়া হাউজিংয়ে একটি ফ্ল্যাট।
দশম নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগমের চাকরী ও ব্যবসায় থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার এবং ছেলে মো. আসিবুর রহমান খানের ব্যবসা থেকে তিন লাখ ৭০ হাজার টাকার আয় দেখানো হয়েছিল।
এবারের হলফনামায় নির্ভরশীল সদস্য হিসেবে আসিবুর রহমান খানের নাম নেই। স্ত্রীর বার্ষিক আয়ের ঘরটিও ফাঁকা। তবে সম্পদের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তাতে মন্ত্রীপত্নীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।
শাজাহান খানের স্ত্রীর নামে ৯০ লাখ ৫৫ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ১৪ লাখ টাকার কিস্তির তথ্য ছিল ২০১৩ সালে।
আর এবার স্ত্রীর নামে দুই কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৬৫৯ টাকা তামের জমি, রাজধানীর মেরাদিয়া মৌজায় ২০ লাখ ৭০ হাজার ৭৫০ টাকা দামের ফ্ল্যাট, প্রিন্টিং প্রেসের মালিকানার অংশীদারিত্ব থাকার কথা লিখেছেন নৌমন্ত্রী।