ভোলার চরফ্যাশনে সেচ সংকট ও লবণাক্ত পানিতে নস্ট হচ্ছে বোরো ধান

0
5

চরফ্যাশন থেকে ফিরে মো: আফজাল হোসেন :: দূর্বল স্লুইজগেট দিয়ে মেঘনার লোনা পানি ঢুকে খেতের বোরো ফসলের চারা ধান জ্বলে গেছে। আর অপরিকল্পিত ভাবে খালে বাঁধ দিয়ে কালভার্ট নির্মান ও খাল ভরাটের ফলে পানির জন্য হাহাকার চলছে কৃষকদের। ফেটে চৌচির ফসলের জমি। লোনের ভারে দিশেহারা ভোলার চরফ্যাশনের এসব কৃষকরা।

ভোলার সদর থেকে অন্তত ৮০কিলোমিটার দক্ষিনে আসলামপুর ইউনিয়নের মো: শাজাহান। পেশায় একজন কৃষক। চারদিকে পানি আর অতি লাভের আশায় ফসল করেছেন এবছর। আশানুরুপ সব ফসল ভালো হলেও ক্ষতির মুখে পড়েছেন বোরোর আবাদ করে। আগ থেকে কৃষকদের কোন ধরনের না জানিয়ে সকল খাল বন্ধ করে কালভার্ট নির্মান করায় বিপাকে পরেছেন এরা। একদিকে সাগড়ের লোনা পানি অপরদিকে মিস্টি পানি না থাকায় এখন দিশেহারা হয়ে পরেছেন এসব কৃষকরা।

 

দ্বীপ জেলা ভোলার চারপাশেই নদী পশ্চিমের তেতুলিয়া আর পূবে মেঘনা নদী দ্বারা বেস্টিত ভোলা। এখানকার কৃষকরা তেতুলিয়া নদীর মিস্টি পানির উপরই বেশি নির্ভর করে ফসল ফলায়। তবে মেঘনা নদীর পানিতে লবনের মাত্রা বেশি হলে তা ব্যবহার করতে পারে না কৃসকরা। এবছর ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদী সংলগ্ন শত শত একর জমির ফসল লোনা পানিতে জ্বলে শেষ হয়ে গেছে্। অপরদিকে পানি দিতে না পারায় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে কৃষকের ক্ষেতের মাঠ। বোরো চারা জ্বলে গেছে লোনা পানিতে। মো: ফরহাদ হোসেন,বলেন,অনেক আশায় বোরো ধানের চাষ শুরু করেছি। তবে এবছর এমন বিপদ হবে তা বুঝতে পারিনি। সড়ক জনপথ প্রধান সড়কের কালভার্ট নির্মান করতে গিয়ে সকল খাল বাঁধ দিয়েছে। এর ফলে পানি আসতে না পারায় বিপদে আছি আমরা। এছাড়া মো: ইয়াকুব আলী বলেন,একটি স্লুইজগেট দিয়েছে যা নস্ট থাকায় লোনা পানি ঢুকে সব ফসল নস্ট হয়ে গেছে। আমাদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি। এছাড়া মো: ইয়াকুব আলী একই কথা বলেন।

চরফ্যাশনের বেতুয়ায় ২০০৫সালে নির্মিত নিম্নমানের স্লুইজগেট কোনোই কাজে আসে না এখানকার কৃষকসহ সাধারন মানুষের। স্লুইজগেট দিয়ে সাগড়ের লোনা পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের। তাদের দাবী বার বার কৃষি অফিস,পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সকলকে অবহিত করা হলেও তারা কর্নপাত করছে না। এছাড়া মাটিতে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় তা দিয়ে পানি আসছে না। লোন নিয়ে বোরো চাষ করে এখন বিপাকে কৃষকরা।

এদিকে সাংবাদিকরা ক্ষতিগ্রস্থ্য বোরো ক্ষেত দেখতে এসেছে শুনে ছুটে আসেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মনির হোসেন। সবদিকে দেখে সুনে লোনা পানিতে বোরো ধানের চারা জ্বলে যাওয়া আর পানির অভাবে ক্ষেত ফেটে চোচির হয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বিকার করে নিলেন। এসময় তিনি বলেন,এখানে গভীর নলকুপ এবং ক্ষতিগ্রস্থ্য স্লুইজগেট নির্মান করা হলে কৃষকরা উপকৃত হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সমস্যার কথা অবহিত করেছেন বলে বলেন, এটা আমাদের কাজ নয় বিআরটিসি’র কাজ। তারা আমাদের কাছ থেকে চাহিদা নিয়েছে তবে কাজ শুরু করেনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকেও অবহিত করেছি,কোন কিছু হয়নি। আমরা চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

 চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: সালাউদ্দিন বলছেন, তারা স্লুইজগেট নির্মান ও খাল খননের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। একনেকে পাশ হলেই ক্ষতিগ্রস্থ্য স্লুইজগেট পূর্ন নির্মান এবং ১০ বেন্ট এর আরেকটি স্লুইজগেট নির্মান করা হবে। যাতে সেখান দিয়ে ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতে পারে। একই সাথে ১৯ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। এসব করা সম্ভব হলেই কৃষকদের আর সমস্যা থাকবে না। তারা সহজেই মিস্টি পানি পাবে এবং লোনা পানির প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে। বলে জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: সালাউদ্দিন।

এদিকে টেকসই স্লুইজগেট নির্মান ও খাল খননের মাধ্যমে ভোলার কৃষকদের ফসলের পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করা এবং সরকার যেন ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের পাশে থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাড়ে তার ব্যবস্থা করবেন,এমনটাই দাবী ভোলার সচেতন মহল ও কৃষকদের।

LEAVE A REPLY