ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন পিতা-পুত্র ও বেশ কয়েকজন জামাই ও শ্বশুর। এদের প্রত্যেকেই রবিবারের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধু পরিবার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাদশ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন নয়জন। এদের মধ্যে নতুন সংসদ সদস্য দুইজন। এরা হলেন শেখ তন্ময় ও শেখ জুয়েল। দশম জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাত সদস্য ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের আটজন নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। এরা হলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ হেলাল উদ্দিন, নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। ফরিদপুর-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী।
এর মধ্যে শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে হলেন শেখ সারহান নাসের তন্ময়। আর শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল হলেন শেখ হেলাল উদ্দিনের ভাই।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের নয়জন
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী এসএম জিলানী পেয়েছেন ১২৩ ভোট। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার ভাতিজা ও শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ তন্ময় বাগেরহাট-২ আসন থেকে নির্বাচন করেন। তিনি ২ লাখ ২১ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এমএ সালাম পান ৪ হাজার ৫৯৭ ভোট।
শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ জুয়েল খুলনা-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। এই আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান ২৭ হাজার ৩৭৯ ভোট।
গোপালগঞ্জ-২ আসনে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিজয়ী হন। তিনি ভোট পান ২ লাখ ৮১ হাজার ৯০৯ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী তসলিম শিকদার পান ৬০৮ ভোট। বিএনপি প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম পান ২৮৬ ভোট।
বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরের ছেলে হেলাল বাগেরহাট-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা পান ১১ হাজার ৪৮৫ ভোট।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৭২ ভোট পান। বিএনপি প্রার্থী পান ৪৩ হাজার ৮৩১ ভোট।
শেখ হাসিনার ভাতিজা নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন মাদারীপুর-১ এবং ফুফাতো ভাই আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আবুল হাসনাত ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট এবং লিটন ২ লাখ ২৭ হাজার ৪৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন ১ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৭ ভোট পান। অন্যদিকে কাজী জাফর নৌকা প্রতীকে ভোট পান ৯৪ হাজার ২৩৪ ভোট। এর আগে ২০১৪ সালেও জাফরকে হারিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন নিক্সন।
জামাই-শ্বশুর যারা
রবিবারের ভোটে পৃথক চারটি আসন থেকে জয় পেয়েছেন দুই জোড়া জামাই-শ্বশুর। মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব (মেজর অব.) এম এ মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন মাহী বি চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৮৮৭ ভোট।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯০৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন মাহী বি চৌধুরীর শ্বশুর এমএ মান্নান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে হারিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে মহাজোটের সমর্থনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তার মেয়ের জামাই মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতেছেন ফরিদপুর-২ আসনে। এই চারজন প্রার্থীই বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।
পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির মুস্তাফিজুর রহমানকে হারিয়েছেন জেপি’র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৫ ভোট। আর মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৩২৬ ভোট।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র মেয়ের জামাই নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্লাহকে পরাজিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ভোট। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি কাজী জাফর উল্লাহ পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৩৬৩ ভোট।