ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট।। বড়দিন, নিউ ইয়ার্স ইভ আর নিউ ইয়ার—সব মিলিয়ে পশ্চিমের সব দেশের লোকজন মেতে ওঠে উৎসব–আনন্দে। আমেরিকায় কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ হবে কি হবে না, এ নিয়ে ওয়াশিংটন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মাঝেমধ্যেই। বড়দিনের সময় সবাই যখন উৎসব–আনন্দে থাকবে, তার আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোঁ ধরলেন, তাঁর দেয়ালের জন্য অর্থ না দিলে অর্থ বিল পাস হবে না। অর্থাৎ ফেডারেল সরকার বন্ধ হলে হবে। এই শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু এলাকা অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম ছিল। শেষ মুহূর্তের খবর হলো, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো কোনো বিভাগের বন্ধ হওয়ার যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা আর হচ্ছে না। সাময়িকভাবে সমঝোতার মাধ্যমে একটি অর্থ বিল করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চালু থাকবে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠের কংগ্রেস ক্ষমতা গ্রহণ করবে। তখনই নাটক জমে উঠবে।
আমেরিকার রাজনীতিতে নাটকের কোনো শেষ নেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়ে প্রতিদিন এই নাটক চলছে। অনেকেই বলছেন, দ্রুত কোনো চরম পরিণতি দিয়ে এই নাটকের অবসান ঘটবে। ট্রাম্প অভিশংসিত হবেন, যাঁরা আগে এমন চিন্তা করতেন এখন তাঁরা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছেন।
ছুটি আর উৎসবের এই মৌসুমে আমেরিকার সাধারণ মানুষ আনন্দে থাকতে পছন্দ করে। উদারতা, সহমর্মিতা আর সহানুভূতি দেখানোর সময় এখন। গির্জায় গির্জায় খাবার দেওয়া হচ্ছে। লোকজন আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের জন্য উপহার সংগ্রহ করছে। আমেরিকার প্রতিটি শহর, এমনকি প্রান্তিক এলাকায় গেলেও দেখা যায় মানুষের উৎসব–আনন্দের মধ্যে মানবিক হওয়ার প্রচেষ্টা।
বারাক ওবামা ওয়াশিংটনে হাসপাতালে বাচ্চাদের দেখতে গেছেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের জন্য উপহার নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে মজার মজার কথা বলেছেন। একজন ক্ষমতাশালী মানুষ কতটা সাধারণ হতে পারেন, ওবামা এর আগেও দেখিয়েছেন। আধুনিক আমেরিকার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
ওবামার এমন সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার খবরে আমার সহকর্মী জর্জ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে মৌসুমের কৌতুকটি বানিয়েছেন। কৌতুকটি এমন: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হঠাৎই দেখা গেল ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সাধারণ ফার্নিচার দোকানে। এদিক-ওদিক কী যেন খোঁজাখুঁজি করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এমন এক সাধারণ ফার্নিচারের দোকানে দেখে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। খোদ দোকানি ভাবছিলেন, সবই পরিবর্তন হয়। লৌহমানব-মানবীরা পাল্টে যান। সময় তাদের বদলে দেয়। কেউ আবার কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়ে অন্তত ভান ধরেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এমন সাধারণে দেখে ফার্নিচার শোরুমের লোকটির আর তর সইছিল না। জিজ্ঞেস করে বসল, মি. প্রেসিডেন্ট কী মনে করে আমার মতো সাধারণ এক ফার্নিচার দোকানির শোরুমে এসেছেন?
বিরক্ত ট্রাম্প জবাব দিলেন, ‘আমি কখনোই কারও পরামর্শ শুনিনি। তবে এবার আমাকে মেয়ে ইভাংকা পরামর্শ দিয়েছে, আমি যেন কেবিনেটটা বদল করে ফেলি!
ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাইকেল ফ্লিন ১৮ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এফবিআইকে তদন্তের সময় মিথ্যা বলার অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ট্রাম্প কেবিনেটে কে আছেন, আর কে নেই—তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। আমেরিকার ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট এমন ঘন ঘন কেবিনেট সদস্যদের পরিবর্তন করেননি। এখন অবশ্য কেবিনেটে যোগ দেওয়ার জন্য লোকই খুঁজে পাচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনে মামলা হয়েছে। মামলার পর ট্রাম্প তাঁর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন। এতেই যে তিনি মুক্তি পাচ্ছেন, তা কিন্তু নয়। ট্রাম্পের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তের কোনো শেষ নেই। অনেক ঘটনাই একটির সঙ্গে অপরটি জড়িয়ে গেছে। পর্নো তারকার সঙ্গে কী করেছেন, তা বিষয় নয়। নিজের পকেটের অর্থ দিয়ে ফষ্টিনষ্টি করেছেন, নাকি নির্বাচনী তহবিলের অর্থ দিয়েছেন—এ ব্যাপারে জট লেগে গেছে। নির্বাচনী তহবিল জনগণের দেওয়া অর্থ। এ অর্থ থেকে পর্নো তারকাকে পরিশোধ করলে রক্ষা পাবেন না ট্রাম্প।
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে রাশিয়ার সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগে তদন্ত সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তদন্তের এক হোতাকে বরখাস্ত করেছেন। পুরো বিষয়টি যেন জেঁকে বসেছে তাঁর ওপর।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠের জেরে জানুয়ারি মাসে প্রতিনিধি পরিষদে নিয়ন্ত্রণ নেবেন ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্প-বিষয়ক তদন্ত খতিয়ে দেখার বিপুল ক্ষমতা থাকবে ডেমোক্র্যাটদের হাতে। আর এই সুযোগ ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া করার কথা নয়। অভিশংসনের নামের শঙ্কাটি এ উৎসব মৌসুমে বড় বেশি তাড়া করছে ট্রাম্পকে।
এর মধ্যে ১৯ ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল জাজ এমেট সুলিবান আরেকটি রায় দিয়েছেন, যা ট্রাম্পের বিপক্ষে গেছে। বলা হয়েছে, নানা কারণে পীড়নের শিকার হয়ে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সেশনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে সেরে নিতে চাচ্ছিলেন। বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের আদেশের ব্যাপক সংঘাত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আবারও। ১২ জন অভিবাসীর পক্ষে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, নানা কারণে পীড়নের শিকার লোকজন আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এ রায়ের ফলে অন্যদের রাজনৈতিক আশ্রয়ে আবেদনের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খড়্গ আবার থমকে গেল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেবিনেট বদল করার জন্য ফার্নিচারের দোকানে যাওয়ার কৌতুক দিয়েই জর্জ তার কথা শেষ করতে পারেন না। সঙ্গে যোগ হয় অন্য কৌতুক। মিশিগান থেকে একজন গাড়ি চালিয়ে এসেছে ওয়াশিংটন ডিসিতে। রাজধানীতে গাড়ি পার্কিং বিরাট সমস্যা। মিশিগানের গাড়ি চালকটি দেখলেন দোকানের সামনে হেঁটে যাচ্ছেন গোবেচারা ধরনের এক ব্যক্তি। কখনো সড়কের ডানে, কখনো বামে হাঁটছেন। কখনো মাঝ দিয়ে।
নিরুপায় মিশিগানের গাড়ি চালক ডানে–বামে, মাঝপথে হাঁটা লোকটাকে অনুরোধ করে, ভাই সাহেব আমার গাড়িটা একটু দেখে রাখেন, আমি দ্রুতই কাজ শেষ করে আসছি। ইতিউতি হাঁটা লোকটি বিনয়ের সঙ্গে জানালেন, তিনি মার্কিন কংগ্রেসের সিনেটর। তাঁকে গাড়ি দেখে রাখার মতো কাজে আটকে রাখা ঠিক হবে না!
বিস্মিত মিশিগান গাড়িচালক বললেন, আপনি সিনেটর হয়ে ভালোই হয়েছে। গাড়ি দেখে রাখার জন্য একজন সিনেটরকে বিশ্বাস করাই যেতে পারে!
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে ওয়াশিংটন উত্তপ্ত থাকবে এই ছুটির মৌসুমে। অন্যদের জন্য ফান হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ভালো নেই, তা তাঁর চেহারা দেখলেই আজকাল অনুমান করা যায়।
ওয়াশিংটনে যাহোক, এবারে উৎসব মৌসুমে নিউইয়র্কের গঞ্জিকাসেবীদের জন্য চরম আনন্দের সংবাদ। নির্বাচনে তৃতীয় দফা জয়ী হওয়ার পর রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, গঞ্জিকা সেবন বৈধ করার বিষয়টি এবার তাঁর প্রথম অগ্রাধিকারে আছে। এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের আগেই কলকেতে টান পড়েছে। নিউইয়র্কের বিশেষ বিশেষ এলাকায় গঞ্জিকার গন্ধেই নেশা হওয়ার দশা।
বিষয়টি নিয়ে জর্জের সঙ্গে একটা গভীর আলাপ পাড়তে চাচ্ছিলাম। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সাবেক ক্যাপ্টেন জর্জের পাল্টা প্রশ্ন, গঞ্জিকার গন্ধ তোমার এত পরিচিত কেন?
আমি নিরুত্তর।