চরফ্যাশনে নারীর সামাজিক অংশগ্রহনে নিশ্চিত হচ্ছে ক্ষমতায়ন..ভোলা নিউজ২৪ডটনেট

0
365

চরফ্যাশন প্রতিনিধি,ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট॥ ইচ্ছা শক্তি আর মনোবল থাকলে নারীরাও যে অন্ধকারকে পিছু ঠেলে আলোর পথে এগিয়ে যেতে পারে তার উজ্জল দৃষ্টান্ত চরফ্যাশনের হালিমা।
হালিমা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানার চরকলমী ইউনিয়নের উত্তর চরমঙ্গল গ্রামের মৃত রাজন আলী হাওলাদারের মেয়ে।
হালিমার সাথে আলাপ কালে সে জানায়,তার বাবা ছিলেন সামান্য বীজ বিক্রেতা। হাটের দিন আঞ্জুর হাট এবং বাবুরহাটে তিনি বিভিন্ন শষ্য বীজ বিক্রি করে যে অর্থ পেতেন তা দিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে তাদের ১ভাই ৩ বোনের লেখা পড়ার খরচ এবং সংসারে অর্থ যোগান দিতেন। ১৯৯৮সনে হালিমার বাবা মারা যান। হালিমা তখন আঞ্জুরহাট সিনিয়র মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে তাদের সংসারে অন্ধকার নেমে আসে। তার বড় ভাই বাবার বীজ বিক্রির পেশা গ্রহন করলেও ব্যবসায় সফল না হওয়ায় কষ্টের জীবন শুরু হয় তাদের। এ পরিস্থিতিতে হালিমার লেখা পড়া বন্ধের উপক্রম হলে ২বছর তিনি অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে নবম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। পরে মামাদের সহায়তায় এক কৃষক পরিবারে তার বিয়ে হলেও যৌতুকের দাবী পরিশোধ করতে না পারায় শশুড় শাশুড়ির সাথে তার মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামীর বাড়ি ছেড়ে হালিমা তার বাবার বাড়ি সংলগ্ন সরকারি পুকুর পাড়ের গুচ্ছ গ্রামের জনৈক নারীকে খালা ডেকে ঐ ঘরে আশ্রিত হন। তবে স্বামীর সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে হালিমা তার জীবন সংগ্রাম শুরু করেন। এখানে আশ্রিত থেকেই হালিমা এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জননী হন। হালিমা তার নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে পল্লি বীমা নামক একটি সংস্থায় চাকুরী নেন। অংশগ্রহন করতে শুরু করেন সামাজিক কার্যক্রমে। ২বছর চাকুরী করার পর ১৯৯৩ সনে চরফ্যাশন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জনৈক ষ্টাপের মাধ্যমে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, চরফ্যাশন কার্যালয়ের গ্লু কর্মি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে কার্যক্রমের সুবাধে তার সামাজিক অংশ গ্রহনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এখান থেকে প্রতিমাসে ৫০কেজি চাল এবং ১হাজার টাকা পেতেন তিনি। তা দিয়ে অতি কষ্টে চলতো তার সংসার। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃক তার উপর দায়িত্ব সমুহ সঠিক ভাবে পালনের ফলশ্রুতিতে ৩বছর আগে হালিমা আনসার ভিডিপি’র চরকলমী ইউনিয়ন দলনেত্রী হিসেব দায়িত্ব পান। এপদে থাকায় সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহনের সুযোগ বেড়ে যায়। বর্তমানে এ পদে থেকে এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে কৃত অভিযোগ সমুহের নোটিশ বাদী বিবাদীদের নিকট পৌছে দিয়ে মাসে যে অর্থ পান তা দিয়ে সংসার এবং ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরছ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ছেলে রসুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেছে এবং মেয়ে আঞ্জুরহাট সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে আলিম পরিক্ষার্থী। এমন অভাবের সংসারেও ইচ্ছা শক্তি হালিমাকে ধমিয়ে রাখতে পারেনি । সংসার এবং সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ যোগান দেয়ার পাশাপাশি হালিমা উম্মক্ত বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে পরিক্ষা দিয়ে ২০০৯ সনে এসএসসি এবং ২০১৭সনে এইচ এসসি পাশ করেছে ।এছাড়াও সে ২০০৪ সনে উত্তর চরমঙ্গল গ্রামে ২৪শতাংশ জমি কিনে বসত বাড়ি সৃজন করে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে হালিমা স্বাবলম্বী একজন সফল নারী। অর্থনৈতিক ভাবে কিছুটা স্বাবলম্বী হওয়ায় সামাজিক অংশগ্রহনে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার। নারী হিসেবে তার এমন সফলতার কারনে স্বামী এবং সন্তানরাও তার নির্দেশনা অনুসরণ করে কাজ করছেন। তাই সামাজিক অর্থনৈতিক অংশগ্রহন নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয় বলে মনে করেন স্বাবলম্বী এই নারী। সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে তার ক্ষমতায়ন। যা হালিমার পরিশ্রম, সাহস সাফল্যের জন্যই সম্ভব হয়েছে।

LEAVE A REPLY