ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে তাঁর হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া।
এর আগে ড. কামাল হোসেনের হাতে ফুল দিয়ে গণফোরামে যোগ দেন ড. রেজা কিবরিয়া। সেসময় গণফোরামের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
মূলত গণফোরামে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশে সত্যিকারের আইনের শাসন ও সাংবিধানিক শাসনের জন্য যে লড়াই সংগ্রাম করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ড. রেজা কিবরিয়া তাতে শামিল হওয়ায় আরো এগিয়ে গেল তা।
এরপর ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে ঠিক পথে ফেরত নেওয়ার, এছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব ছাড়া আমি যে ধরনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, সেটা সম্ভব না।’
আওয়ামী লীগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘যেই আদর্শের জন্যে আমার বাবা রাজনীতি করেছেন, লড়াই করেছেন, সেই আদর্শ থেকে দলটি অনেক দূরে চলে গেছে। আমি সেটা মনে করি।’
গত বৃহস্পতিবার ধানের শীষ প্রতীকে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ড. রেজা কিবরিয়া। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা পোষণ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিলে আশা করি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনটি উপহার দিতে পারব।’
ড. রেজা কিবরিয়ার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে শাহ এ এম এস কিবরিয়া হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনী এলাকায় গ্রেনেড ভয়াবহ হামলায় নিহত হন তিনি।
রেজা কিবরিয়ার বাবা আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তবু কেন গণফোরাম বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া গতকাল এনটিভিকে বলেন, ‘আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, মূলত তিনটা কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এক নম্বর হলো, আওয়ামী লীগ যেভাবে গত ১০ বছর দেশ পরিচালনা করেছে, আমার মতের সঙ্গে এটার মিল নেই। আমার নীতির সঙ্গে এগুলো মেলে না, অনেক কিছু ভুলভাবে করা হয়েছে।’
‘দুই নম্বর হলো, আমার বাবাকে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারিতে হত্যা করা হয়, দুই বছর বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তারা কিছু করল না। আচ্ছা, তারা পারল না বা করল না। এরপর দুই বছর যে মেরুদণ্ডহীন প্রধান উপদেষ্টার যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তারাও করল না। সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু তারপর প্রায় ১০ বছর পার হয়ে গেল, আমার বাবা যে পার্টির জন্য জীবন দিলেন সেই পার্টি ক্ষমতায় থেকেও হত্যার তদন্ত হয়নি বা করেনি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের কি তদন্ত করার ক্ষমতা নাই নাকি ইচ্ছা নাই? যে কারণে আমি তাদের সঙ্গে থাকতে পারি না। যারা আমার বাবার হত্যার তদন্তে সহযোগিতা করেনি, তাদের সঙ্গে আমি কেন থাকব?’
‘তিন নম্বর হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমার বাবা ও বর্তমান যিনি প্রধানমন্ত্রী এক সময় যেভাবে লড়াই করেছিলেন, কী কারণে এখন সেই পার্টি এর বিরুদ্ধে চলে গেল। আমি এতে বিস্মিত, আমি এটা বুঝতে পারছি না, কেন করছে? তবে কোনো ভালো কারণে এটা করছে না।’
রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা মেনে নিতে এখন কেন তাদের সমস্যা হচ্ছে? সংবিধানের কথা বলবেন না। জাতীয় সংসদে যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তারা যা খুশি সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে।’
গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছিল ড. রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তবে কোন দল বা জোট থেকে তিনি প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তা স্পষ্ট ছিল না। এবার তিনি গণফোরামের হয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটগত প্রতীক হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।