ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিসানুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, আছাদুজ্জামানের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে অনলাইনে গেল, সেটি নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। তদন্তে জিসান ছাড়াও পুলিশের আরও দুজন নন ক্যাডার সদস্যের নামও উঠে আসে। তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জিসানুল হকের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা ৩৯ (১) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ সার্ভিস রুল অনুযায়ী ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে, আছাদুজ্জামান মিয়াকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছাদুজ্জামান মিয়ার ‘ইএসএএফ’ ছড়িয়ে পরে। ইএসএএফ ফরম হলো- ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রাইবার অ্যাপলিকেশন ফরম, যা মূলত মোবাইল গ্রাহকেরা পূরণ করে থাকেন। এই ফরমে একজন গ্রাহকের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, আঙুলের ছাপসহ বিস্তারিত তথ্য থাকে।
ফরমটি প্রকাশের পর পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়। জিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নাজির আহমদ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। ফরমটিতে থাকা কিউআর কোড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বৈধ আড়ি পাতা শাখার একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার থেকে এটি ডাউনলোড করেছেন। তদন্তে বেরিয়ে আসে জিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার পদের এক কর্মকর্তা গত ১২ ফেব্রুয়ারি আছাদুজ্জামানের মোবাইল ফোনের তথ্য চেয়ে বৈধ আড়ি পাতা শাখার এক এসআইকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেন। সেই বার্তার ভিত্তিতে তিনি অন্য একজন এএসআইকে সেটা ডাউনলোড করতে বলেন। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি সেটা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। তদন্তে দেখা যায়, অনলাইনে প্রকাশিত ফরমটি হুবহু সেই ফরম।
গত ১৯ জুন তদন্ত শেষে পুলিশ সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, জিসানুল হকের এই কাজ সন্দেহজনক। বেআইনিভাবে কোনো তৃতীয় পক্ষকে সরবরাহ বা সরকারি কাজ বহির্ভূত ভিন্ন কোনো উদ্দেশে ব্যবহার করা হয়েছে। স্পর্শকাতর তথ্য সরকারি উদ্দেশ্য ব্যতীত সংগ্রহ করা অপেশাদার সুলভ আচরণ এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ড হিসেবে পরিগণিত।
পুলিশ সদর দপ্তরের এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার জিসানুল হককে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।