ভোলা নিউজ২৪ডটকম।।ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন রেকর্ড। গতকাল রোববারও দেশটিতে সংক্রমণ-মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত লোক।হাসপাতালে অনেকের প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেনের। কিন্তু চাহিদার চেয়ে প্রয়োজন বেশি থাকায় হাহাকার চলছে অক্সিজেনের জন্য। এর মধ্যেই প্রায় সব রাজ্যে অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়েছে। এ অবস্থায় ‘অক্সিজেনের অভাব কীভাবে মিটবে’, ‘বাড়িতেই কি অক্সিজেন তৈরি করা সম্ভব’, ‘কীভাবে ঘাটতি মিটবে’—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে গুগলের শরণাপন্ন হচ্ছেন ভারতের মানুষ। গুগল সার্চে ট্রেন্ডিং হয়ে গিয়েছে ‘হাউ টু মেক অক্সিজেন অ্যাট হোম।’
গত শুক্রবার সকাল থেকেই গুগল সার্চ ইঞ্জিনে ‘হাউ টু’ শব্দ দুটি ব্যবহার করে অক্সিজেন–সংক্রান্ত নানা তথ্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন ভারতের মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে, বাড়িতে কীভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার তৈরি করা যাবে, এই প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই বাড়তে থাকে এর ‘সার্চ ভ্যালু’। নির্দিষ্ট সময় কোনোও বিষয় কত বেশিসংখ্যক মানুষ সার্চ করছেন, তার ওপর একটা মূল্য নির্ধারিত হয়। এর নাম ‘সার্চ ভ্যালু’। দেখা যায়, গত শুক্রবার এ প্রশ্নের সার্চ ভ্যালু ১০০ হয়ে যায়। সপ্তাহখানেক আগে, অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল নাগাদ যার সার্চ ভ্যালু ছিল ১০-১৩। অক্সিজেন তৈরির আগ্রহ সবচেয়ে বেশি গুজরাটের মানুষের। সেখানে সার্চ ভ্যালু ৭০। এরপরই তালিকায় রয়েছে উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ। এই তিন রাজ্যে প্রশ্নটির সার্চ ভ্যালু যথাক্রমে ৫৫, ৪৯ ও ৪৬।
কীভাবে অক্সিজেন তৈরি করা যাবে, এ প্রশ্নের সার্চ ভ্যালুও দিনকে দিন বেড়েছে। শুক্রবার সার্চ ভেল্যু ছিল ৩৬। সপ্তাহখানেক আগে এ প্রশ্নের সার্চ ভ্যালু ছিল ৫-এর কাছাকাছি। এ ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি সার্চ হয়েছে গুজরাটে (৮৭)। তারপরই রয়েছে মহারাষ্ট্র (৬১) ও উত্তর প্রদেশ (৫৫)।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, এই সার্চে কি কৌতূহল মিটছে নেটিজেনদের? সার্চ করলেই দেখতে পাবেন, এমন অনেক সাইট রয়েছে, যেখানে অক্সিজেন তৈরির টিপস দেওয়া আছে। সেই সঙ্গে এ–সংক্রান্ত আরও কিছু প্রশ্নের উত্তরও মিলছে, যা করোনাকালে নিঃসন্দেহে উপকারে লাগবে।
বিষয়টি প্রথম সবার সামনে আনেন ফাউ–জি (FAU-G) গেমের ডেভেলপার বিশাল গোন্ডাল। তিনি ফিটনেস ব্র্যান্ড গৌকি ও এনকোর গেমসের প্রতিষ্ঠাতা। একটি টুইট করে ‘কীভাবে বাড়িতে অক্সিজেন তৈরি করবেন’, তার গুগল সার্চের বিষয়টি স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। আপনারা চাইলেও নিজে থেকে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তার জন্য গুগলে গিয়ে ‘হাউ টু’ লিখে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন, প্রথমেই আপনাকে ‘হাউ টু মেক অক্সিজেন’ এবং তার ঠিক পরেই ‘হাউ টু মেক অক্সিজেন সিলিন্ডার’ দেখানো হচ্ছে।
বাড়িতে অক্সিজেন তৈরির প্রক্রিয়া জানতে চাওয়ার গুগল ট্রেন্ডই বলছে, ভারতে এ মুহূর্তে অক্সিজেনের চাহিদা ঠিক কতটা। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টও অক্সিজেনের সরবরাহ নিয়ে কেন্দ্রকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গতকাল রোববারও দেশটিতে সংক্রমণ-মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ভারতে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৩১ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৮০৬ জন।
ভারতে পাঁচ দিন ধরে তিন লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তার আগে ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। আর ছয় দিন ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৭৩ লাখ ৬ হাজার ৩০০। দেশটিতে করোনায় মোট মারা গেছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৬ জন।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় যতসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। তা ছাড়া ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তে একটি বিশ্ব রেকর্ডও হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে এত রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি।
ভারতে কয়েক দিন ধরেই করোনা রোগী শনাক্তে বিশ্ব রেকর্ড হচ্ছে। বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ডটি গত বৃহস্পতিবারের আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদিন মারা যান ২ হাজার ৭৬৭ জন। তার আগের দিন গত শুক্রবার দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ২ হাজার ৬২৪ জন।
ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও হরিয়ানার পরিস্থিতিও অবনতিশীল।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাত্রিকালীন কারফিউসহ বিভিন্ন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সংকটসহ নানা সমস্যায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।
দেশটির হাসপাতালগুলোয় রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
রাজধানী নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন স্থানের অনেক হাসপাতালে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। হাসপাতালগুলো অক্সিজেন চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠাচ্ছে। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস