‘কয়েকদিনে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে’

0
571

বিবিসি ।। কয়েকদিনের ব্যবধানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণকর্মীরা।

গত শুক্রবার রাখাইনে ২০টি পুলিশ স্টেশনে হামলার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন শুরু করে। কয়েকদিনের সহিংসতায় অন্তত ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্তে অপেক্ষা করছে। অনেকেই দুই দেশের সীমান্তরেখার মাঝখানে আটকা পড়েছে। ত্রাণকর্মীরা জরুরিভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মুখপাত্র পেপি সিদ্দিক বলেন, ‘এখনো হাজার হাজার মানুষ নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে আছে এবং আমরা সেখানে প্রবেশ করতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আসা অনেকের পোশাক আছে, কারো সঙ্গে রান্নার তৈজসপত্র রয়েছে। তবে সবকিছুই তারা ফেলে এসেছে। জরুরিভিত্তিতে তাদের আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা দরকার।’

গত বছর অক্টোবর থেকে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

আবদুল্লাহ নামে এক তরুণ রোহিঙ্গা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সব মানুষ তাদের বাড়ি থেকে পালিয়েছে, বাবা-মা-সন্তান আলাদা হয়ে গেছে। অনেকে হারিয়ে গেছে, কেউ মারা গেছে।’ আশ্রয় শিবিরেই কয়েক নারী সন্তান প্রসব করেছে।

ত্রাণকর্মীরা বলছেন, শরণার্থীদের ঢল এতই ব্যাপক যে তাদের মূল মনোযোগের বিষয় এখন জীবন রক্ষা করা। তাদের সাক্ষাৎকার বা কথা শোনার সময় পাওয়া যায়নি।

সীমান্ত পাড়ি দেওয়া অত্যন্ত ঝক্কির কাজ। অনেক জায়গায় বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি নিয়মিত টহল দিচ্ছে। তারা রোহিঙ্গাদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। তবে অনেকেই ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের আশ্রয় দিচ্ছে, এমন অভিযোগ করেছে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশ এটা অস্বীকার করেছে।

এর মধ্যে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামের একটি সংগঠন জানায়, তারা পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সংগঠনটির আবির্ভাব ঘটে। সেসময় তারা পুলিশ চৌকিতে হামলা চালিয়ে ৯ কর্মকর্তাকে হত্যা করে।

আরসা জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য হলো মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা।

মিয়ানমার সরকার বলছে, আরসা সন্ত্রাসী সংগঠন। এর নেতারা বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, সংগঠনটির নেতা আতা উল্লাহর জন্ম পাকিস্তানে এবং বেড়ে ওঠেন সোদি আরবে।

তবে আরসার একজন মুখপাত্র এশিয়া টাইমসকে বলেন, জিহাদিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর থেকে তরুণরা ক্ষুব্ধ হয়ে এ সংগঠন শুরু করে।

মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্রতম রাজ্য রাখাইনে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের ওপর কড়া বিধিনিষেধ আছে। এমনকি কাউকে নাগরিক হিসেবেই স্বীকার করা হয় না।

LEAVE A REPLY