কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ

0
432

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশের ছাত্রসমাজ। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারে রাজধানীর শাহবাগসহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গতকাল রোববার থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সকাল ১০টা থেকে ডেইরি গেট এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের দাবি, একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এসব ঘটনায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সকাল ১০টায় অবরোধ শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা কোটাবিরোধী বিভিন্ন গান করে ও স্লোগান দিতে  থাকে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনের রাবির সমন্বয়ক মাসুদ মুন্নাফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে এসে আজকের দিনের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন।

এদিকে, একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

সাড়ে ১১টার দিকে রুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। পরে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময়ে রুয়েটে সব ধরনের ক্লাস বন্ধ ছিল।

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাবি শাখা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। আজ সোমবার বিকেলে সংগঠনটির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।

আন্দোলনকারীরা মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান সড়কে উঠতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি বাধা দেয়। এ সময় তারা মিছিল নিয়ে আবারো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অনুষদ প্রদক্ষিণ করতে থাকে। এ আন্দোলনে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ইবির ফটকে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের পাদদেশে অবস্থান নেয়। শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলন শেষ হয়।

একই দাবিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

কোটা সংস্কার নিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ বেলা ১১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে জব্বরের মোড়ে রেলপথ অবরোধ করে। তাদের রুখতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়।

এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ব্যানার কেড়ে নিলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে পড়লে পুলিশ সেখানেও ধাওয়া দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর জব্বরের মোড়ে রেলপথ অবরোধে যোগ দেয়। রেলপথ অবরোধের কারণে ঢাকা ময়মনসিংহ পথে ট্রেন  চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে আজ সকাল ১০টার দিকে দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় দিনাজপুর থেকে রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় রোডের সব বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাস বর্জন করে।

গতকাল রোববারও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা দুপুর থেকে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে পূবালী চত্বরে আজ বিক্ষোভ করে। সন্ধ্যায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায়। এর আগে দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজর মীরের কাছে স্মারকলিপি দেয় কমিটির আহ্বায়ক মো.  হানিফসহ অন্যরা।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আজ সকাল থেকেই ক্লাস বর্জন করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবির সমর্থনে  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও দুপুরে ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে সমাবেশ করে। পরে দুপুর ১টার দিকে তারা খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করে, সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর ফলে প্রায় এক ঘণ্টা খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা গল্লামারী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পুনরায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে বিকেল থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা ও খুলনা-মোংলা সড়ক বন্ধ রয়েছে।

LEAVE A REPLY