ভোলায় সু-সংগঠিত আওয়ামী লীগ ॥ দলীয় প্রার্থী চায় বিএনপি ॥ মাঠে নেই বিজেপি

0
1018

আদিল হোসেন তপু, ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বীপজেলা ভোলায় নির্বাচনী মাঠগুছাতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তৃণমূল রাজনীতিতে ইতিমধ্যে বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে ইতিমধ্যে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ জনগনের কাছে ভোট চাইতে শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে ভোলা সদর আসনে বর্ষিয়ান নেতা আওয়ামী লীগের কান্ডারি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর হাত ধরে আওয়ামী লীগ এখন সু-সংগঠিত। দলীয় শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বের কোনো বিভেদ নেই বললেই চলে। সাংগঠনিক ভিত অত্যন্ত মজবুত। এছাড়াও বর্তমানে ভোলার চার আসনেই আওয়ামী লীগের দখলে। অপরদিকে বিএনপির জেলা কমিটি সহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন পূর্নাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দলের মধ্যে চলছে পদ-পদবী নিয়ে গ্রুপিং, অভ্যন্তরীন কোন্দল। আর একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তাদের দাবী একটাই ভোলার সদর আসনে বিএনপি এবার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করে তারা নির্বাচনে যাবে। অন্য কোন শরীক দলের প্রার্থী তারা চায় না। তবে বেগম খালেদা জিয়া যাকে মনোয়নয়ন দিবে তাকেই তারা গ্রহণ করবে বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), সারা বাংলাদেশের মধ্যে শুধুমাত্র ভোলাতেই যে দলটির অস্তিত রয়েছে। সেই দলের নেই কোন রাজনৈতিক তৎপরতা। এতে করে সাংগঠনিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে এ দলটি। আর জামায়েত ইসলামের কার্যক্রম চলছে গোপনীয়তার সহিত। আর ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই) এর সক্রিয়তা থাকলেও নেই কোন হেভিওয়েট প্রার্থী। এই নিয়ে চলছে ভোলা সদর আসনের রাজনীতি।
মেঘনা আর তেঁতুলিয়া নদী বেষ্টিত উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলার সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ভোলা-১ (সদর) আসন। এই আসনটি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিল।
বর্তমানে জাতীয় সংসদের ১১৫ নম্বর আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রবীন পার্লামেন্টারীয়ান বাণিজ্যমন্ত্রী জননেতা তোফায়েল আহমেদ। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৮ হাজার ৮২৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৮৩০ এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ৮২ হাজার ৯৯৫।
স্বাধীনতার পর থেকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত তোফায়েল আহমেদ দলকে সু-সংগঠিত করে তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করেছেন। তিনি ভোলা সদর আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা চাইছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এই নেতা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচন করুক। সেই লক্ষে কার্যক্রম চলছে আওয়ামী লীগের।
২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন এর মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছে দলের নতুন করে ঢেলে সাজানোর কার্যক্রম। দলে-নবীন প্রবীন নেতার সমন্বয়ে কমিটিতে প্রথম চ্যালেঞ্জ পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ভোলা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী লাভ করে আওয়ামী লীগের সকল প্রার্থী। প্রথম মিশনে সফলভাবে শেষ করে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা। এর জন্য দিন রাত পরিশ্রম করে দলকে চাঙ্গা রেখেছেন জেলা কমিটিতে প্রথমবারের মতো পদ পাওয়া মেধাবী রাজনীতিবীদ মইনুল হোসেন বিপ্লব। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে তরুণ এই নেতা তৃণমূলকে আরো সু-সংগঠিত করার কাজ করে যাচ্ছেন।
ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আজিজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুই দফায় ভোলার প্রতিটি উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে উন্নয়নের যে জোয়ার বইয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে। আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
তিনি আরো বলেন, সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্য সব শাখার কমিটিও গঠন-পুনর্গঠন করে দলকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করার লক্ষে মহিলা সমাবেশ করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নদী ভাঙনের হাত থেকে ভোলাকে রক্ষায় রেখেছেন অগ্রনী ভূমিকা। এখন তার স্বপ্ন ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মান কাজ সম্পন্ন, ইতিমধ্যে যার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভোলাতে শিল্পনগরী হিসাবে গড়ে তুলতে গড়ে তোলা হবে ইকোনমিক জোন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দলকে সু-সংগঠিত করছি। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছি। নির্বাচনের জন্য দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন প্রস্তুত। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের উন্নয়নের কর্মকান্ড তৃণমূলের জনগনের দোড়গোড়াতে পৌঁছাতে ভোলাতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর নেতৃত্বে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন টুলু বলেন, আগামী নির্বাচনে এ আসনে তোফায়েল আহমেদই তৃণমূল আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
বিএনপি ঃ
ভোলা সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের শরীক দল বিজেপির দূরত্ব রয়েছে। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে বিজেপির দ্বন্দ্ব এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিএনপি বলছে, কোনো মতেই আগামী নির্বাচনে এ আসনে অন্য কোনো শরিক দলকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে বিজেপি বলছে, এ আসনে এবার দলটির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ জোটের মনোনয়ন পাবেন। ভেতরে ভেতরে বিএনপির একটি পক্ষ বিজেপি নেতার হয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
তবে বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তাদের দলের মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর।
ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মফিজুল ইসলাম মিলন বলেন, জোট থেকে বিজেপি নেতা পার্থকে দলীয় মনোনয়ন দিলে বিএনপি মেনে নেবে না। আর বিএনপিও সেই ভূল করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এক সময় সাবেক মন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাজাহান জেলা বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই সময়ে ভোলা ছিল বিএনপির দুর্গ। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর এখন দলটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো।
তবে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। দলের নেতাদের মধ্যে একধরনের নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা চলছে। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করছি। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন এর ব্যাপারে তিনি বলেন, এ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর বাইরে আমরা কোনো প্রার্থীকে মেনে নেবো না। রাজপথে বিএনপির নেতার রক্ত জড়িয়েছে, জেল খেটেছে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আর অতিথি পাখির মতো কেউ এসে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবে। তা দলের তৃণমূল মেনে নিবেনা। যাদের মুরগীর খোপের মতোর দলীয় অফিস, নেই রাজপথে কোন সক্রিয় অংশ গ্রহন তারা কোন অধিকারে মনোনয়ন চায়?
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদাক হুমায়ুন কবীর সোপান বলেন, আমাদের জেলা কমিটি পূর্নাঙ্গ হয়েছে। এখন বাকি শুধু ঘোষনার। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সদস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটিও আমরা করে ফেলেছি। বিএনপি নির্বাচন মুখী দল। যারা বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করা কথা চিন্তা করছে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।
বিজেপি ঃ
বিজেপি বলছে এ আসন থেকে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। আগামী নির্বাচনেও এ আসনে জোট থেকে তিনি মনোনয়ন পাবেন। তবে এই দলটির নতুন বাজার একটি অফিস ছাড়া রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে তেমন কোন কর্মকান্ড দেখতে পাওয়া যায়নি। তাই অনেকেই বলছে পত্রিকায় পাতায় আছে কিন্তু রাজপথে নেই দলের নেতৃবৃন্দরা। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) সাধারন সম্পাদক মোতাছিন বিল্লাহ বলেন, সাংগঠনিকভাবেও দল আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী বলেও দাবি এই নেতার। নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ দল (বিজেপি) সক্রিয় হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মী সভায় দলের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহন করতে বলা হয়েছে।
জামায়াত ঃ
ভোলা সদর আসনে জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ড চলছে আত্মগোপনে। ভোলাতে তাদের দলীয় কোন প্রার্থী না থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবসময় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জোটের পক্ষেই শক্তভাবে কাজ করবে জানিয়েছেন তাদের কর্মীরা। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই) এর রাজপথে বিভিন্ন মিছিল, সমাবেশে সক্রিয়তা থাকলেও নেই কোন হেভিওয়েট প্রার্থী। দলটির নেতারা মুফতী ইয়াসীন নবীপুরীকে দলটির প্রার্থী ঘোষনা করলেও তাকে তেমন কোন নির্বাচন মুখী কর্মকান্ডে দেখা যায়নি। অপরদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে বলে ঘোষনা করলেও ভোলাতে তাদের কোন প্রার্থীর নাম আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।

 

LEAVE A REPLY