আদিল হোসেন তপু: ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট :ভোলা লঞ্চ ঘাট থেকে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন চারটি করে যাত্রীবাহী লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করার আদালতের নির্দেশ থাকা সত্বেও আদালতের সেই নির্দেশ মানছেননা প্রভাবশালী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। তারা আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতিদিনের মত রোটেশনের মাধ্যমে দুইটি করেই লঞ্চ চালাচ্ছেন। এতে সাধারণ লঞ্চ যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে লঞ্চকর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের পোষায়না। তাই তাদের পক্ষে দুইটি বেশি লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়।
লঞ্চ যাত্রী ভোলা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুহুল আমিন কুট্টির দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আখতারুজ্জামান রবিবার এক নির্দেশে বলেন, এখন থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী ভোলা লঞ্চ ঘাট থেকে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন চারটি করে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। অথচ আদালতের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দুইটি করে লঞ্চ চালাচ্ছেন।
মোঙ্গলবার রাতে ভোলা লঞ্চ ঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি ক্রিষ্টাল ক্রুজ যাত্রী নিয়ে রাত ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোলা লঞ্চ ঘাট ছেড়ে যায়। এর আধাঘন্টা পর রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোলা লঞ্চ ঘাট ছেড়ে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি কর্নফুলী-১০। কথা হয় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি কর্নফুলী-১০ এর ২৩৪ নম্বর কেবিনের যাত্রী ভোলা বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান পান্থ ও ডাঃ বাবুলের সঙ্গে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লঞ্চ মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে তারা আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত মানছেননা। যাত্রীরা প্রশ্ন করে আরো বলেন, লঞ্চ মালিকরা আদালতের নির্দেশ পর্যন্ত যেখানে মানছেননা, সেখানে সাধারণ যাত্রীরা কতটা অসহায় তা সহযেই অনুমেয়?
ভোলা সচেতন নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশনার কপি লঞ্চ মালিকদের কাছে পৌছে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিটিএ ভোলার ট্রাফিক কর্মকর্তা মোঃ নাছিম বলেন, এ রুটে প্রতিদিন চারটি করে লঞ্চ চলাচলের বিআইডব্লিইটিএ’র নির্দেশনা থাকলেও লঞ্চ কর্র্তৃপক্ষ রোটেশনের মাধ্যমে প্রতিদিন দুইটি করে লঞ্চ চালাচ্ছেন। গত রবিবার ভোলার আদালতও প্রতিদিন চারটি করে লঞ্চ চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকরা তা মানছেননা। তারা গত সোমবার রাতেও দুইটি ল চালিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এমভি ভোলা ও ক্রিষ্টাল ক্রুজ লঞ্চ র মালিক আলহাজ¦ গোলাম নবী আলমগীর বলেন, ভোলা লঞ্চ ঘাট থেকে আমাদের পক্ষে প্রতিদিন চারটি করে লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়। এতে আমাদের পোষায়না। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশনা আমরা এখনো হাতে পাইন। তাই আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পাওয়ার পর আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।
ভোলা-ঢাকা নৌ রুটে যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রোটেশনের মাধ্যমে লঞ্চ চলাচলের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে এ রুটে রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবিতে ইতিপূর্বে মানবন্ধন ও স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। তারা এ দাবিতে হরতালসহ আরো বৃহত্তর আন্দোলনেরও ঘোষনা দেন।
উল্লেখ্য, সরকারের নিয়মনীতি না মেনে ভোলা-ঢাকা নৌ রুটে যাত্রীদেরকে জিম্মি করে রোটেশনের মাধ্যমে দির্ঘদিন ধরে লঞ্চ চলাচল করে আসছিল প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকসহ কর্তৃপক্ষ। ফলে লঞ্চ যাত্রী ও বিশিষ্ট ঠিকাদার ভোলা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুহুল আমিন কুট্টি বাদি হয়ে ভোলা-ঢাকা নৌ-রুটে রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবিতে গত ৪ মাস আগে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলী (এপিপি) এডভোকেট কিরন তালুকদার জানান, ভোলা-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ র রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ল যাত্রীরা। তারা দীর্ঘদিন ধরে রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসলেও কোন আমলে নেননি প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকরা। সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে রোটেশনের মাধ্যমে ভোলা-ঢাকা নৌরুটেল চালাচ্ছেন প্রভাবশালীল কর্তৃপক্ষ। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের পক্ষে রুহুল আমিন কুট্টি বাদি হয়ে গত ১৮ নভেম্বর জাষ্টিজ অব দ্যা পিচ ফৌজদারী কার্যবিধির ২৫ ধারায় ভোলা-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী সাত যাত্রীবাহী লঞ্চ কর্নফুলী-৯, কর্নফুলী-১০, কর্নফুলী-১১, গ্লোরী অব শ্রীনগর, এমভি বালিয়া, এমভি ভোলা ও ক্রিষ্টাল ক্রুজের চার মালিকের বিরুদ্ধে ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আখতারুজ্জামান মামলাটি আমলে নিয়ে প্রথমে বিবাদিগনের বিরুদ্ধে আদালতে তলব করে কারন দর্শানোর নোটিশ জারির আদেশ দেন। এপর প্রায় ৪ মাস পর গত রবিবার দুপুরে আদালতের বিচারক বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী ভোলা লঞ্চ ঘাট থেকে ভোলা-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন চারটি করেলঞ্চ চালানোর জন্য নির্দেশ দেন।
মামলায় বাদি আরো জানান, ভোলা-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন চারটি করে যাত্রীবাহীলঞ্চ চলাচল করার নিয়ম থাকলেও প্রভাবশালীলঞ্চ কর্তৃপক্ষ সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে প্রতিদিন দুইটি করে যাত্রীবাহীলঞ্চ চালাচ্ছে। এ ছাড়ালঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকাও আদায় করে থাকে। এমনকি সাধারণ যাত্রীরা কেবিনের বুকিং দিলেও ল কর্তৃপক্ষ অনেক সময় সেই কেবিন অন্যজনকে দিয়ে দেন বলেও বাদি অভিযোগ করেন।