ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেটঃ চতুর্থ শিল্প যুগে প্রবেশ ,ঢাকার আসাদগেটের পাশে মিরপুর সড়কের একটি রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশকারী হিসেবে রোবট দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আলোড়িত। সেই আলোড়ন ছাড়িয়ে গেছে অবশ্য রোবট ‘সোফিয়া’কে নিয়ে কৌতূহল। এ সপ্তাহেই রোবট সোফিয়া আসছে ঢাকায়।
আসাদগেটের রেস্টুরেন্টের মালিক বলেছেন, তাঁরা যে খাবার পরিবেশনকারী রোবটের ব্যবস্থা করেছেন, ‘ঘটনা হিসেবে এটা নতুন মাইলফলক’। আসলে তিনি কমিয়েই বলেছেন। নিঃসন্দেহে এটা হলো একটা নতুন জমানার সূচনা। তবে এই নতুন জমানার ঢেউ বিশ্বের অনেক প্রান্তে আঘাত হেনেছে বেশ কিছুদিন আগেই। প্রযুক্তিবিদেরা যাকে বলছেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব।
প্রথম শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছিল স্টিম ইঞ্জিনকে ভর করে। পরেরটা বিদ্যুৎকে ব্যবহার করে। তৃতীয় বিপ্লব ছিল তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এবং নতুন বিপ্লব শুরু হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির আরও উন্নয়ন ঘটিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে। আপাতত বিনোদিত হওয়ার মুগ্ধতায় সোফিয়ার হাত ধরে বাংলাদেশের সেই নতুন শিল্প যুগে প্রবেশ ঘটছে। তবে এর রাজনৈতিক অর্থনীতি হয়তো এখনো কমই টের পাচ্ছি আমরা।
প্রযুক্তি বহুকাল ধরে মানুষের জীবন-জীবিকাকে সহজ ও আরামদায়ক করে চলেছে। আবার প্রযুক্তি এখন ব্যবসায়ের বড় পণ্যও বটে। বৈশ্বিক পুঁজিতন্ত্রের অবিশ্বাস্য বিকাশ ঘটছে প্রযুক্তির সমকালীন বিকাশের ওপর ভর করে। এ রকম এক পরিস্থিতিতেই বিশ্ব প্রবেশ করেছে রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেশনের ওপর নির্ভরতার যুগে। কিন্তু বিশ্ববাসী এখনো নিশ্চিত নয় সামনের রোব-টেক যুগটা কেমন হবে? এর প্রতিক্রিয়া কী হবে?
অটোমেশন যুগ কি কর্মসংস্থানের সংকোচন ঘটাতে চলেছে?
অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোব-টেক যুগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কয়েকটি সোজাসাপটা প্রশ্ন চলে আসছে।
প্রথমত, এটা কি মানুষের কাছ থেকে ‘কাজ’ কেড়ে নেবে? মানুষের বেকারত্ব বাড়িয়ে তুলবে কি রোবট?
দ্বিতীয়ত, এটা কি ব্যবসা-বাণিজ্যের জগৎকে বিপদে ফেলবে?
তৃতীয়ত, এটা কি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে অদরকারি বিষয় করে তুলছে?
বলা বাহুল্য, তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম দুটো জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়া অধিক জরুরি মনে হলেও তৃতীয় কৌতূহলই বেশি দূরদর্শী।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ‘দ্য ফিউচার অব এমপ্লয়মেন্ট’ নামের এক গবেষণায় অনুমান করেছেন, আসন্ন দশকগুলোয় রোবট টেকনোলজি প্রচুর ‘কাজ’ নিয়ে নেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তাদের অনুমান, ভবিষ্যৎ দুই দশকে প্রায় ৪৭ শতাংশ কর্মজীবী সেখানে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে যেসব ‘কাজ’ দীর্ঘ সময় ধরে পুনঃপুন একই ধাঁচে করা করা হয়, সেগুলোতে মানুষকে প্রতিস্থাপন করবে রোবট। হিসাববিজ্ঞানের নামকরা প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি এ বছরের ২৪ মার্চ এক অনুমান প্রকাশ করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতোই যুক্তরাজ্যে কর্মহীনতার একই ঘটনা ঘটবে আগামী ১৫ বছরে অন্তত ১০ মিলিয়ন স্বল্প দক্ষÿকর্মজীবীর বেলায়। অল্প পরিমাণ ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ দিয়েই অনেক ধরনের এমন সব কাজ করা সম্ভব, যেগুলো এখন মানুষ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে হিসাব কষে এও বলে দেওয়া হয়েছে, ৩১ লাখ ট্রাক-ট্যাক্সি-ডেলিভারি ভ্যানের চালক স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের কাছে কর্মসংস্থানের বাজারে পরাজিত হতে চলেছে অদূর ভবিষ্যতে। ওয়ালস্ট্রিটে ইতিমধ্যে ট্রেড করছে রোবট। বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজার ট্রেডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত লাখ লাখ কর্মীর জন্য এটা একটা বড় খবর বটে। যদিও উদ্বেগজনক খবর। এ রকম গবেষণা আরও হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়, ডিজিটাল ভয়েস সার্ভিস দিয়ে এমন অনেক কাজ সারা যায়, যা এত দিন ইউরোপ-আমেরিকা তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের ‘অনলাইন লেবার’দের দিয়ে করাতে।
কেবল যে এগুলো গবেষণা অনুমান তাও নয়; অনেক সত্য বাস্তবেই দেখা যাচ্ছে। জাপানে বৃদ্ধ মানুষের সেবায় ইতিমধ্যে কাজ করছে রোবটরা। অথচ একসময় অনুমান করা হতো, জাপানে প্রচুর নার্স দরকার হবে। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ সেখানে নার্সের বাজার নিয়ে আশাবাদী ছিল।
বাংলাদেশের মতো মধ্য আয়ের অনেক দেশেই নির্মাণ খাত গুরুত্বপূর্ণ। রোবোটিকস যেসব খাত নিয়ে সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখছে, তার একটি নির্মাণ খাত। অতি স্বল্প সময়ে অনেক বড় নির্মাণ সমাধা করবে আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আপাতত যেসব খাতকে রোবটবিদ্যা বেশি টার্গেট করেছে, তার মধ্যে আছে খাবার বিতরণ খাত, জিনিসপত্র তৈরির ফ্যাক্টরি, পরিবহন ও কৃষি খাত।
এরূপ গবেষণা অনুমান ও বাস্তবতা থেকে অনায়াসে ওপরে উল্লিখিত দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর মেলে। যখনই অনেক মানুষ কাজ হারাবে, বেকার হবে, তখন অন্যদের মজুরিও কমবে। এভাবে বহু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলে পণ্য চাহিদায় তা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। যার ফলাফল হতে পারে চলতি ধাঁচের অর্থনীতির জন্য খারাপ। অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি কর্মসংস্থানে মানুষের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে পণ্য বাজারে তার ছাপ পড়বেই।
তবে এসব সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার চেয়েও অনেক মানুষ বেশি ভাবিত রোবট মানুষে-মানুষে আবেগগত সম্পর্কের অনিবার্যতায় নাক গলাতে চলেছে কি না, সেটা জানতে।
এর উত্তর আঁচ করতে সবাইকে স্পাইক জোনসের ‘হার’ মুভিটি দেখতে বলা যায় এবং এও বলা যায়, ইমোশনাল রোবট নিয়ে এ মুহূর্তে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। এমনকি যৌনসঙ্গী রোবটের ‘আবিষ্কার’ও অত্যাসন্নই মনে হয়। জাপানে ইতিমধ্যে পোষা প্রাণীর বদলে অনেকেই বাসায় রোবট পোষেন! সুতরাং রোবট সোফিয়া যে মা হতে চাইছে—এটাকে প্রযুক্তিবিদেরা মোটেই বিনোদন সংবাদ হিসেবে দেখছেন না। এটা এমন এক চ্যালেঞ্জ, যা তারা বিজ্ঞান দিয়ে অতিক্রম করতে ইচ্ছুক।
সোফিয়াকে যারা বানিয়েছে, হংকংয়ের সেই ‘হানসেন রোবোটিকস’-এর ওয়েব পেজে ঢুকলেই যে-কেউ দেখবেন, কয়েক শব্দের ভূমিকায় তারা জানিয়েছে, ‘এমন এক জিনিয়াস প্রযুক্তি তৈরি করতে চায় তারা, যা কেবল বাঁচবে না, ভালোও বাসবে!’ এ রকম অবস্থায়, কর্মসংস্থানের শঙ্কার পাশাপাশি স্বভাবত এ প্রশ্নও ওঠে, মানব-মানবীর চিরায়ত সম্পর্কেরও কি তবে অবসান ঘটতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে?
বিশ্ব পুঁজিতন্ত্র এই ভবিষ্যৎকে হারাতে চাইছে না
বলা বাহুল্য, সবাই শঙ্কাবাদী নন। অনেকেই মনে করেন, কম্পিউটার আগমনের সময়ও মানুষ এভাবে নানান শঙ্কায় ভুগেছেন। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিল কাজ হারানোর বিষয়ে। আমরা বাংলাদেশের সে সময়ের সবচেয়ে বড় দৈনিকটির কথা স্মরণ করতে পারি। যেখানে কর্মীরা দীর্ঘদিন কম্পিউটার ব্যবহার ঠেকিয়ে রেখেছিলেন কাজ হারানোর ভয়ে। কিন্তু কার্যত কম্পিউটার কাজের সুযোগ বাড়িয়েছে বহুগুণ। উপরন্তু, কম্পিউটার যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপ্লব সাধন করে মানুষকে এত গতি এনে দিয়েছে যে পুরোপুরি নতুন এক অর্থনৈতিক ও জ্ঞানগত বিপ্লবের সামনে হাজির আজকের মানুষ। উদাহরণ হিসেবে ‘আমাজন’-এর কথা বলা যায়। গত তিন বছরে এই সংস্থা তার গুদামগুলোয় রোবটের সংখ্যা তিন গুণ বাড়িয়েছে, কিন্তু তাতে তাদের ‘মানুষ কর্মী’দের মজুরিসংক্রান্ত দর-কষাকষির শক্তি কমেনি; বরং খানিকটা কমেছে তার পণ্যের মূল্য।
অটোমেশনের সমর্থকেরা মনে করেন, রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডিভাইসের প্রাদুর্ভাব পণ্যের দাম কমিয়ে দেবে। আর পণ্যের দাম কমলে তার ভোগ বাড়বে। এরূপ প্রবণতা আরও অধিক কম মূল্যে পণ্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে রোব-টেক পণ্য উৎপাদনের খরচ কমালে তা বিনিয়োগকারীদের অধিকতর বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাবে।
এ ছাড়া অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, নতুন প্রযুক্তি মানেই নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি এবং অধিকতর কর্মীর প্রয়োজনীয়তা। এ ছাড়া অটোমেশন প্রক্রিয়ায় যুক্ত কর্মীদের বেতনও আগের অবস্থা থেকে বাড়বে বলে আশাবাদী গবেষকেরা। কারণ, অটোমেশন তাদের আউটপুট অনেক বাড়িয়ে তুলবে। তাঁরা এ ক্ষেত্রে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামে দক্ষ কর্মীদের উদাহরণ দিয়ে যাচ্ছেন। এও বলা হচ্ছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিইওরা প্রত্যেকেরই দু-চারজন করে রোবট রাখবেন নিজেদের বিশ্লেষণী অনেক কাজ দ্রুতলয়ে করে নেওয়ার জন্য। অটোমেশনের যুগে ফিন্যান্স পুঁজির চেয়েও ট্যালেন্টের কদর বাড়বে। সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে গ্লোবাল প্রোডাক্টিবিলিটিও অনেক বাড়বে। বিশ্ব পুঁজিতন্ত্র তাই এই ভবিষ্যৎকে কোনোভাবেই হারাতে পারে না। আর এর জন্য যদি কোনো কোনো খাতের কর্মীদের কাজ হারাতেও হয়, তাদের অটোমেশনের প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্য খাতে পুনর্বাসন করতে হবে।
মুশকিল হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী যেসব চালক কর্মহীনতার শঙ্কায় রয়েছেন, তাঁরা এই বয়সে কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন আর কোন খাতেই-বা পুনর্বাসিত হবেন? একটা বয়সের পর কর্মজগতে কোনো একটি বিষয়ে দ্রুত দক্ষতা অর্জন সহজ নয়। আর এরূপ পরিস্থিতি যে মানসিক বিপর্যয় তৈরি করে, তায় দায়ও বড় কম নয়।
শ্রম আইন ও ছুটির প্রয়োজনবিহীন এক বিশাল কর্মী বাহিনীর মহাকাল
পুঁজিতন্ত্রে অটোমেশন যুগের আবির্ভাব সম্পর্কে মার্কসেরও স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। তিনি একে পুঁজিতন্ত্রের ‘শেষ অধ্যায়’ হিসেবেই মনে করেছেন। ‘দ্য ফ্রাগমেন্ট অন মেশিন’ নামের ১১ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি নোটে মার্কস বলেছিলেন, অটোমেশন যত হবে, মানুষ তত বেশি ফ্রি টাইম পাবে, যা পুঁজির দাসত্ব থেকে তার মুক্তির সহায়কই হবে। মার্কস একে শ্রমজীবীদের মুক্তির একটা শর্ত হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
মার্কসের এই আশাবাদী ভবিষ্যদ্বাণী আসলে শ্রমজীবী মানুষের ঐতিহাসিক এক আকাঙ্ক্ষা। এই প্রত্যাশার পথ ধরেই ১৮৪৮ সালে দৈনিক কর্মঘণ্টা ১২-তে, ১৮৬৮ সালে ৮ ঘণ্টায় এবং এখন সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আসন্ন সর্বব্যাপক অটোমেশন কি কাজের সুযোগ ও মজুরির নিশ্চয়তা অব্যাহত রেখেই কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনতে চলেছে? নাকি নতুন এই পরিস্থিতির মাঝে বিশ্ব পুঁজিতন্ত্র দেখছে ট্রেড ইউনিয়ন ও ধর্মঘটবিহীন এবং শ্রম আইন, ছুটি ও পেনশন ভাতার প্রয়োজনহীন এক বিশাল কর্মী বাহিনী পাওয়ার অবিশ্বাস্য এক মহাকাল।
এসব প্রশ্নের নির্ভরযোগ্য উত্তর এ মুহূর্তে কারও কাছেই নেই। বরং এটাই দেখা যাচ্ছে, শত কোটি শ্রমজীবী-কর্মজীবী বর্তমানে বৈশ্বিক পুঁজিতন্ত্রের কাছে ৯-৫টা কাজের নিগড়ে বাঁধা। আপাতত এই কাজসহই মানুষ কার্ল মার্ক্স কথিত ‘ফ্রি টাইমে’র আনন্দ পেতে চায়। অটোমেশন পুঁজিতন্ত্রের বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীর জন্য উদ্বেগ তৈরি করেছে বৈকি। এই উদ্বেগ শুধু কাজ হারানোরই নয়, তার দর-কষাকষির সব সুযোগের অবসানেরও। উপরন্তু, অসাম্য বেড়ে যাওয়ারও।
কিন্তু এও সত্য, অটোমেশন, রোব-টেক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমাজ জীবনের নতুন এক বাস্তবতা। জাপানে এ বছর সর্বশেষ যে ২২তম আন্তর্জাতিক রোবট মেলা হলো, তাতে বিশ্বের দুই হাজার কোম্পানি যোগ দিয়েছে। এতে বোঝা যায়, রোবটের বৈশ্বিক বাজারটি ইতিমধ্যে কত বড়। জাপানিরা ইতিমধ্যে প্যাগোডাগুলোয় মৃতদের শেষকৃত্যে ত্রিপিটক পাঠের কাজটি সারতে একধরনের রোবট বানিয়ে বাজারে ছেড়েছে। এতে শেষকৃত্যের খরচ অনেক কমেছে। অন্য ধর্মগুলোও ধর্মীয় বিভিন্ন কাজে যদি ব্যক্তি মানুষের পরিবর্তে এভাবে রোবটের প্রচলন শুরু করে, তাহলে সম্ভাব্য একটি বাজারের আকার কল্পনা করাও কঠিন।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কতটা প্রস্তুত? বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তিই হলো মানবসম্পদ। দেশে এবং বিদেশেও আমাদের প্রধান প্রোডাক্ট হলো শরীরী মানুষ, যে মানুষেরা আবার ‘দক্ষতা’য় সামান্যই এগিয়ে। ফলে সোফিয়াকে নিয়ে আনন্দের রেশ কাটার পর রোব-টেক দুনিয়ার একটু সুদূরপানে তাকানো দরকার বাংলাদেশকে।
সোফিয়াকে দেখার মুগ্ধতার পর…
এটা অন্তত বলাই যায়, অটোমেশন জব না কমালেও আসন্ন দিনগুলোয় কমবেশি অটোমেশনের ছোঁয়ার বাইরে থাকবে না কোনো খাতই। সুতরাং, আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে এখনই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোকে নতুন যুগবার্তা অনুযায়ী সাজানো। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী এই দাবিটিও উঠেছে, অটোমেশন যুগে মানুষের জীবনযাপনের অন্তত সর্বনিম্ন ক্রয়ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে প্রতিটি দেশে নাগরিকদের জন্য কাজের ধরননির্বিশেষে ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম বা জাতীয় ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টি স্কিম থাকতে হবে। বাংলাদেশে যদিও এই দাবি নতুন, কিন্তু অনেক দেশেই এটা ইতিমধ্যে জনপ্রিয় চাওয়ায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশেও এসব নিয়ে কথা হওয়া জরুরি। আশা করি, সোফিযাকে দেখার মুগ্ধতার পর আমরা নিজেদের আসন্ন ভবিষ্যতের দিকেও মনোযোগ দেব।